মঈন চৌধুরী: আমাদের দেশে প্রগতি, প্রতিক্রিয়া আর সংস্কৃতি নিয়ে এক ধরণের বিভ্রান্তি অবস্থান করছে। সংস্কৃতির অর্থ শুধুমাত্র শিক্ষাদীক্ষা, গান-বাজনা, যাত্রা-নাটক, ফেব্রুয়ারি ২১, পহেলা বৈশাখ,রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, কবি ও কবিতা, শিল্পী ও শিল্প, বুদ্ধিজীবীতা, বাম রাজনীতি, ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়। সংস্কৃতির আসল অর্থ লুকিয়ে আছে আমাদের জীবনযাপন প্রণালীতে। আমাদের জন্ম, সংসার আর মৃত্যুর সাথে জড়িত সবকিছুই সংস্কৃতি। আমাদের আজান, নামাজ, পুজা, আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বর, মিলাদ, আরতি, চার্চের ঘণ্টা, গায়ে হলুদ, কুলখানি, স্রাদ্ধ ইত্যাদিসহ সবকিছুই হল আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ধর্ম মানা না মানা নির্ভর করে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত অভিরুচির উপর, প্রগতিশীলতার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। ধর্ম কিংবা সম্প্রদায় নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে, জেহাদ বা বিদ্রোহের ডাক দিয়ে সমাজ উন্নয়নের বিপক্ষে কাজ করে, তারা হল প্রতিক্রিয়াশীল। ধর্মকে ব্যবহার করে যারা ভন্ডামি করে কিংবা সামাজিক শোষণ চালাতে চায়, তারাও প্রতিক্রিয়াশীল।
যে প্রগতিশীলরা সহনশীল ধর্মকে সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মানে না, তারাও প্রতিক্রিয়াশীল। এমন প্রগতিশীলরা জনগণবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমাদের দেশে এমন ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটেছে। আরেকটা বিষয় এখানে বলা আবশ্যক, কোন ঐতিহাসিক কারণে যদি দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, পরশ্রীকাতরতা, হীনমন্যতা এবং অন্য কোনো রকম দোষ যদি আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়ে থাকে, তবে সেগুলোকেও বিচারে এনে সংশোধনের পথ বের করতে হবে। এ কাজটি করবে সরকার, এবং অবশ্যই তা করবে জনগণের সহযোগীতায়। আমাদের মনে রাখতে হবে সংস্কৃতিবান আর প্রগতিশীলতার প্রধান অনুষঙ্গ হল দেশপ্রেম, আর তারপরের যোগ্যতাগুলো হল ভাল মানুষ হবার জন্য প্রয়োজনীয় সবধরনের গুণ থাকা। আপনি ধর্ম পালন করেন কি করেন না, কিংবা আপনি জন্মগতভাবে কোন ধর্মের লোক, তা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। আপনারা সবাই আসল সংস্কৃতিবান আর প্রগতিশীল হন, নকল প্রগতিবাদী হয়ে জনগণবিচ্ছিন্ন হবেন না। ফেসবুক থেকে