সাভারে মেয়ের হাতে বাবার খুনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মেয়ে জান্নাত জাহান শিফা (২৩) একজন মাদকাসক্ত ও সমকামী। অন্যদিকে শিফার দাবি, তার বাবা আব্দুস সাত্তার (৫৬) তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে মত দিয়েছেন, কেউ সমর্থনে, কেউ বা তীব্র বিরোধিতায় মুখর।
প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আব্দুস সাত্তার তার মেয়ে শিফা ও শিফার দুই বান্ধবীকে নিয়ে সাভারের মজিদপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। পাঁচতলায় ওই ফ্ল্যাটে ডাইনিং রুমে থাকতেন সাত্তার, মেয়েরা অন্য রুমে। দীর্ঘদিন ধরেই মেয়ের উশৃঙ্খল চলাফেরা, মাদক সেবন এবং বান্ধবীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বাবা। অভিযোগ রয়েছে, এসব অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বললে মেয়ের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, শিফা ও তার বান্ধবীরা সমকামী সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। একপর্যায়ে আব্দুস সাত্তার মেয়েকে এ বাসা থেকে বান্ধবীদের চলে যেতে বললে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়েটি বাবাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে ভোরে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ ফোন করে হত্যার বিষয়টি জানান।
তবে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে মেয়েটি দাবি করেন, বাবা তাকে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তর মোবাইল ফোনে ভিডিওর কোনো প্রমাণ মেলেনি। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবীর জানান, মেয়েটি স্বীকার করেছেন, বাবাকে ২০টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করে। একই সঙ্গে দাবি করেছেন, বাবা তার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার আগে ২০২৩ সালেও নাটোরের সিংড়া থানায় শিফা তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। সে সময় গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন সাত্তার। তবে ফরেনসিক প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত না পাওয়ায় আদালত সাত্তারকে জামিন দেন। সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, ওই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। দুজনই অসুস্থ; মেয়ে মাদকাসক্ত এবং বাবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে সাভারের কাঠালবাগান এলাকার আব্দুল কাদেরের ভাড়া বাড়ির ৫ম তলায় হত্যাকাণ্ড ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আব্দুস সাত্তারের মরদেহ উদ্ধার করে এবং মেয়েকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।
ঘটনার পর মেয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আবার মেয়ের পক্ষেও অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত দিয়েছেন। কেউ বলছেন, ধর্ষক বাবাকে খুন করে শাস্তি দিয়েছে মেয়ে, আবার কেউ বলছেন, মাদক ও অনৈতিক সম্পর্ক ঢাকতেই সাজানো হয়েছে ধর্ষণের নাটক।
সব মিলিয়ে বাবা-মেয়ের সম্পর্কের জটিলতা, পূর্বের মামলা এবং ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্তে সবদিক বিবেচনায় রেখে প্রকৃত তথ্য তুলে আনার চেষ্টা চলছে। সূত্র: সময়টিভি ও ঢাকাপোস্ট