শিরোনাম
◈ এবার নিউ ইয়র্ক মেয়রপ্রার্থী মামদানিকে গ্রেপ্তারের হুমকি ট্রাম্পের!, তীব্র প্রতিক্রিয়া ◈ বউ পেটানোয় শীর্ষে খুলনা ও বরিশালের মানুষ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (ভিডিও) ◈ ক‌ষ্টের জ‌য়ে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনা‌লে রিয়াল মা‌দ্রিদ ◈ দুপু‌রে এ‌শিয়ান কাপ বাছাই‌য়ে স্বাগ‌তিক মিয়ানমা‌রের বিরু‌দ্ধে লড়‌বে বাংলাদেশ নারী দল ◈ প্রথম ওয়ান‌ডে ম‌্যা‌চে মুশফিক-রিয়াদের জায়গায় খেলবেন লিটন দাস ও মিরাজ ◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২৩, ০১:৫৩ রাত
আপডেট : ১৬ মে, ২০২৩, ০১:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গণমানুষের কবি হওয়ার শর্তসমূহ কী

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: [২] একজন মানুষ যখন বুঝে ফেলে কবি হিসেবে সে ব্যর্থ, তখন তার ভেতর নানা রকম মনোবিকলন দেখা দেয়। তার একটি প্রমাণ হচ্ছে সে তখন আর কাউকেই কবি হিসেবে মানতে চায় না। সে আত্মঅভিমানে ভুগতে থাকে। নিজেকে সেরা ভাবতে শুরু করে। সে তখন কবিতা বিষয়ে নানা পাণ্ডিত্য ফলাতে থাকে। কবিতা কাকে বলে, কোনটা হয় কোনটা হয় না ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষকতা করতে থাকে। সে সাহিত্য মাপার কাজ করতে থাকে। সে একটি যন্ত্রে পরিণত হয়, সাহিত্য মাপক যন্ত্রে। এসব যত করতে থাকে, তত সে সমাজে হাস্যকর হয়ে উঠতে থাকে। তখন সমাজের মানুষগুলো সম্পর্কে সে নানারকম হীন মন্তব্য করতে থাকে। মানুষ আরো হাসে। তখন লোকটি বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হতে থাকে। এটার একটি কারণ হচ্ছে তার নিজের এমন কোনো সৃষ্টি নেই যা মানুষের ভেতর তার বক্তব্যে প্রত্যয় জাগাতে পারে।

[৩] কে কবি কে কবি নয়Ñ এটা কাউকে বলে দিতে হয় না। এটা এমনিই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ধরুন জীবনানন্দ দাশ কবি এই কথা কি কারো বলার পর মানুষ তাকে কবি বলে স্বীকৃতি দেবে? নজরুল বা রবীন্দ্রনাথ বা আবুল হাসান কবি এই অভিধা কারো বলার পর আসেনি। তাদের কবিতাই বলে দিয়েছে তারা কবি। এখন সমালোচকদের কাজ হলো তাদের সাহিত্য সম্পর্কে আলোচনা করা। গণমানুষ যাকে কবি বলে মেনে নেয়, কোন পাণ্ডিত হাজারো লেখা দিয়ে বাতিল করতে পারে না। নজরুলের কবিতার মান নিয়ে কত লেখা হয়েছে, তাতে নজরুলকে কবি হিসেবে একবিন্দু টলাতে পারেনি। তার জন্ম মৃত্যু পালিত করে মানুষ সাড়ম্বরে পালন করে। শিল্পোত্তীর্ণ কবিতা লিখলেই তাকে সমাজ কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেবে এমন নয়। এমন অজস্র কবি কালের অতলে হারিয়ে গেছে।

তাহলে নজরুল মানের দিক থেকে উত্তীর্ণ নয়, কবিতা লিখেও কেন কবি হিসেবে এমন উচ্চকিত স্বীকৃতি পেলেন? এর কারণ তার জীবন এবং কাব্য একসূত্রে গাঁথা। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য কবিতার আশ্রয় নিয়েছেন, কোনো রহস্য সৃষ্টি করেননি। তার কাব্য শিল্পের জন্য শিল্প নয়। একটি বৈষম্যপূর্ণ সমাজে একজন কবির কবিতা যদি ব্যক্তিঅনুভবে ব্ুঁদ করে রাখে পাঠককে, তা তার বিচ্ছিন্নতাকে আরো বাড়িয়ে তোলে, বৈষম্যকারীরা এই সুযোগে মহালুটপাটে ব্যস্ত থাকে। নজরুল শাসক এবং শোষিত উভয়কে জাগিয়ে তুলেছে। শাসক তাকে জেলে পুরেছে, বই বাজেয়াপ্ত করেছে, শোষিতরা তার মুক্তির জন্য পথে নেমেছে।

তার কবিতা এবং জীবন একই ধারা থেকে উৎসারিত। ফলত গণমানুষ তাকে কবির আসনে বসিয়েছে। এখন একজন কাব্যবিশারদ কিংবা অসফল জানাশোনা কবি তার বিরুদ্ধে যতই একাডেমিক লেখা লিখুক, কোনো কাজ হবে না। কবিতা হয়ে ওঠা না ওঠা নিয়ে মানুষের চিন্তা যতটুকু তার চেয়ে বেশি হলো সেই কবিতা তার জীবনের কথা বলছে কি না। রবীন্দ্রনাথের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। তবে তার কবিতায় জীবন যেভাবে এসেছে, নজরুল থেকে আলাদা। কিন্তু মৌলিকভাবে একই, দুজনেই মানুষের মুক্তির কথা বলেছে। তাদের কবিতা চিত্তকে শুধু আনন্দ নয়, দিশাও দিয়েছে। 

জীবনানন্দের বেলায়ও একই কথা খাটে। তার কবিতা সময় এবং তার মনস্তত্ত্বকে যেভাবে তুলে এনেছেন, আর কেউ তার মতো পারেনি। রূপসী বাংলা, বনলতা সেন কিংবা ঝরা পালক যদি তিনি না লিখতেন, লিখতেন মহাপৃথিবী কিংবা সাতটি তারার তিমির কিংবা বেলা অবেলা কালবেলা, তাহলে তাকে কবি হিসেবে আজকের যে স্বীকৃতি তা মিলতো কি না সন্দেহ ছিলো। অথচ তার কবিতা নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের মতো নয়। কিন্তু তার কবিতা বুঁদ করার পাশাপাশি জাগিয়েও তোলে। ‘তোমাদের যেখানে সাধ চলে যাও, আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাবো”Ñ এই লাইন স্বদেশপ্রেমকে জাগ্রত করে, বিশেষত সে যখন পরাধীন।

[৪] কবিতা শিল্প হিসেবে উত্তীর্ণ হলেই কেউ কবি স্বীকৃতি পেয়ে যাবেন, এ ধারণা ইতিহাসের ধোপে টেকে না। তাই যে কবি শুধু শিল্প নিয়ে থাকে, তার কবি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন। শিল্প এবং জীবনকে যে মেলাতে পারে না, কবি হিসেবে সে ব্যর্থ। শামসুর রাহমানের কবিতার চেয়ে আবুল হাসানের কবিতা শিল্পমণ্ডিত, কিন্তু গণমানুষ কবি হিসেবে কাছে টেনে নেয় রাহমানকে। কেন? কারণ তার কবিতায় সময় এবং মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস আছে বোধগম্য ভাষায়। সে হিসেবে আবুল হাসান একটু দূরবর্তী। তার মানে এই নয় তিনি কবি হিসেবে ব্যর্থ, তিনি গণমানুষের কবি হয়ে উঠতে পারেননি।

এখন একজন এমন কবি বলতেই পারেন বয়ে গেছে আমার গণমানুষের কবি হতে! বলতে পারেন। কিন্তু তিনি যখন স্বীকৃত কবিদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলবেন, তিনি হাস্যস্পদ হয়ে উঠবেন। আর কে না চায়, মানুষ কবি হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিক। এই স্বীকৃতি কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো বিষয় নয়, এটা ঘটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তাই বলছি কে কবি কে নয়, এটা একজন কবি নয়, নির্ধারণ করবে প্রধানত গণমানুষ তা গণমানুষের রুচি যে স্তরেই থাকুক না কেন। যদিও কোনো রুচিই সমসত্ব নয়, হেটারোজেনাস। আর একটা ছেনি আছে, তার নাম কাল। কালই বলবে কে কবি কে নয়। আপনি শুধু লিখে যান, কাউকে বাতিলের ঘোষণা ব্যতিরেকে। লেখক: ঔপন্যাসিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়