শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:১৭ রাত
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০২৩, ১২:১৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্যারকে টেনে-হিঁচড়ে আমাদেরই সাধারণ্যে নামাতে হবে!

শারফিন শাহ

শারফিন শাহ: জীবনের প্রথম চাকরি নিয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যেদিন জয়েন করি, সেদিন ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে এমডি নজরুল ইসলাম চৌধুরী নতুন কর্মীদের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘এই যে আপনারা আমার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে জ্বী স্যার, জ্বী স্যার করছেন, আপনারা সবাই সত্যি মন থেকে স্যার ডাকছেন তো? এই জীবনে বহু চোর-বাটপারদের স্যার ডাকতে হয়েছে বিপদে পড়ে। সেই থেকে স্যার শব্দটাকে আমার ভালো লাগে না, মাঝেমধ্যে মনে হয় গালি! তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ছাত্র ছিলাম, তাঁকে মন থেকে স্যার ডাকতাম। কারণ তিনি স্যার শব্দটার জন্যে যোগ্য ছিলেন। আপনারা আমাকে স্যার বলে মনে মনে গালি দিচ্ছেন না তো’।

নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মতো আমাদের সবারই নানা কারণে স্যার ডাকতে হয়। কারণ আমাদের মগজে ওই ঔপনিবেশিক ধুলোকালি লেগে আছে। স্যারের জায়গায় ‘ছাগল’ হলেও দেখা যেতো আমরা তা-ই ডাকছি। এটাই উপমহাদেশের রীতি। কাজী নজরুল ইসলাম, সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব বলতেন। মুজতবা আলী সরাসরি রবীন্দ্রনাথের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও স্যার বলতেন না। তারা ঔপনিবেশিক ছায়া মাড়িয়ে গুণীজনকে নতুন সম্বোধন করতে পেরেছিলেন। যেমন শেরে বাংলা একে ফজলুল হককে নজরুল স্যার বলেননি, বলেছেন, হক সাহেব। এখনকার লেখক হলে তো স্যার ডেকে হয়রান হয়ে যায়।  

ব্যক্তিগতভাবে স্যার ডাকা নিয়ে আমার কোনো খেদ নেই। যে কেউ যে কাউকে স্যার ডাকতে পারে। কিন্তু কোনো উচ্চ-পদস্থ কর্মচারী কাউকে স্যার ডাকতে বাধ্য করতে পারে না। আরেকটি চরম সত্যি হলো, স্যার ডাকলেই কেউ স্যার হয়ে যায় না। শব্দটার একটা ওজন আছে, এটা সবাই বহন করতে পারে না। সুতরাং ইচ্ছেমতো স্যার ডাকা যেতে পারে।  

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান আমাকে কথা প্রসঙ্গে অনেক সময় ‘জ্বী স্যার’ সম্বোধন করেন। আমি সবিস্ময়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ঔপনিবেশিক সম্বোধন আপনারা না ছাড়লে আমরা কীভাবে ছাড়ব’? সলিমুল্লাহ খান বলতেন, আমি জানি আপনি স্যার শব্দটার ভার নিয়ে শঙ্কিত। কিন্তু এই শব্দটিকে ক্ষমতার বাইরে প্রীতিকর অর্থেও যে ব্যবহার করা যায়, আমি সেই চেষ্টাও করে থাকি। স্যারকে টেনে-হিঁচড়ে আমাদেরই সাধারণ্যে নামাতে হবে। লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়