রবিউল আলম: রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে মুক্ত আলোচনায় স্থানীয় সরকার, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পাদ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় বিশ্ব থেকে কিছু উদাহরণ দিয়ে সকলের প্রতি নীতি-আদর্শ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। [১] বিশ্বের অনেক দেশে ঈদ উৎসবে খাদ্যদ্রবের দাম কমানো হয় [২] শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিজেদের সচেতন হতে হয়। [৩] খাদ্যে ভেজাল নিজেদের জীবন বিপন্নের আমন্ত্রণ জানানো হয়। [৪] অতিরিক্ত মুনাফার জন্য রমজানের পবিত্রতা নষ্ট হয়। এই সব কারণে সরকারের অনিচ্ছা সত্ত্ব্যেও ভাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়। আমি বিশ্বাস করি আপনারা সবাই সচেতন।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলিÑ [১] বিশ্ব উদাহরণের বিপরীতে চলছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। কোরবানির ঈদে গরুর হাটের খাজনা দ্বিগুণ করে, তিন টাকার খাজনা, পাঁচ টাকা আদায় করা হয়। [২] কর্পোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্সের সঙ্গে ময়লার কর আদায় করা হয়। ময়লার জন্য আলাদা টেন্ডারে অবৈধ চাঁদাবাজির লাইসেন্স দেওয়া হবে। নাগরিক যন্ত্রণার কারণ হবে। প্রয়োজন হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হোক। এমনিতেই কবরস্থান, পার্কিং, গুদারাঘাট, বাস টার্মিনাল, হাটবাজার, গরুর হাটের সিডিউলে শর্ত মানানো যাচ্ছে না, তার উপর ময়লার ট্যাক্স আদায় চাঁদাবাজির লাইসেন্স দিলে শহরের নাগরিক সুবিধার বিপর্যয় ঘটবে। [৩] নিরাপদ খাদ্যের জন্য পশু জবাই খানায় ভেটেরিনারি সার্ভিস ছিলো, বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। কর্পোরেশন দুই ভাগ, ডিজিটাল সেবায় যথাযথ পশু জবাই করে নিরাপদ খাদ্য আশা করেন কীভাবে? আমরা জনগণকে সর্বরাহ করবো কীভাবে? আমরা কী খাচ্ছি, কী খাওয়াচ্ছি নিজেরাই জানি না। ভারতীয় মাংস দুই-তিন বছর ফ্রিজিংয়ের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছে, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন কেউ অনুভব করে না। মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত কি না।
[৪] চিনি, তেল লবণ, স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ হলেও মাংসের মূল্য নির্ধারণকে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে লুটের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ৪৫ বছর এই কর্পোরেশনের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ হওয়াতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাংসের দাম ছিলো ৩২০ টাকা। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ হলেও মাংস আমদানির কোনো জবাবদিহিতা নেই। ১৮০-২২০ টাকার মাংস সীমান্ত পার হলেই ৭-৮শ টাকা কীভাবে হয়? খুচরা দোকানে ভোক্তা অধিকার রিসিট দেখেন। আমদানিকারকদের রিসিট দেখা হয় না কেন? কতো টাকায় কিনেন, কতো টাকায় বিক্রি করেন। মাননীয় সভাপতি, যুক্তির কোনো শেষ নেই, যুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। সব সমস্যা একবারে সমাধান হবে না। তবে আমরা শুরু করতে পারি, গরুর হাটের খাজনার সমন্বয়, জবাইখানায় ভেটেরিনারি সার্ভিস, আমদানির মাংসের মান ও দামের বিষয়। ময়লার জন্য চাঁদাবাজির লাইসেন্স দেওয়া থেকে বিরত, নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ থেকে রক্ষার জন্য। আমরা সব ব্যবসায়ী সৎ হয়ে যাবো না, সব ব্যবসায়ী রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে না।
আইন সবার জন্য সমান হলে সরকারের, করপোরেশনের ভুলগুলো সংশোধন করে নিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সবজি চাষ করে জাতিকে উপদেশ দিয়েছেন। জবাবদিহিতা উন্মুক্ত রাখতে হবে। ময়লা ও গরুর হাটের ইজারাদারদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নেবেন না। র্যাব গঠন করে বিএনপি-জামায়াত, প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলো আমেরিকা, এখন হায়-হুতাশ করছে! জনগণের অধিকার হরণের মাস্তানদের লাইসেন্স দিয়ে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা যাবে না। হা-হুতাশের অংশ হবেন না! লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি