লুৎফর রহমান হিমেল: শেখ মুজিব অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদী হতেন। এমনকি খেটে খাওয়া মানুষদের ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের জন্যও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তিনি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যয্য একটি আন্দোলনে শুধু সমর্থনই দিলেন না, দিলেন নেতৃত্বও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে বহিষ্কার করল। সাথে আন্দোলনকারী আরও চারজন নেতাকে। তবে বলা হয়েছিল যে ১৫ রুপী জরিমানা এবং পরিবারের মাধ্যমে মুচলেকা দিয়ে তাঁরা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেন। শেখ মুজিব ছাড়া অন্য চারজন ছিলেন কল্যাণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, নাঈমউদ্দিন আহমেদ, নাদেরা বেগম এবং আবদুল ওয়াদুদ। এরা সবাই জরিমানা এবং মুচলেকা দিলেও শেখ মুজিব আপোসহীন থাকেন। তিনি তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব ত্যাগ করেন ‘সামান্য’ চতুর্থশ্রেণির কর্মচারীদের ন্যয্য একটি আন্দোলনের জন্য। শুধু এই ঘটনাই নয়, শেখ মুজিবের জীবনে এরকম বহুবার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এসেছে, এমনকি এসেছে রাজনীতি ছেড়ে দিতে মৃত্যু পরোয়ানা, কিন্তু তিনি আপোস করেননি কোনোদিন। তিনি রাজনীতি করতেন এই ভূখণ্ডের জন্য, এই ভূখণ্ডের মানুষের জন্য।
এই মাটি ও মানুষরাই ছিলো তাঁর এই সাহস ও আপোসহীনতার মূল শক্তি। শেখ মুজিবের সাথে আরও একটি রাজনৈতিক টার্ম বেশিবার উচ্চারিত হয়েছে, সেটি হল ‘নিঃশর্ত’ মুক্তি। বারবার কারাবরণে তখন এই কথাটি আসতো। শর্ত দিয়ে পাক সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে প্রস্তাব করতো। কিন্তু শর্তহীন মুক্তি দাবি করতেন তিনি। সেই দাবি থেকেও তিনি সরতেন না কখনো। সেই দাবির ধারায় আজও এ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই ‘নিঃশর্ত’ কথাটি ব্যবহার করেন। আজ আপোসহীন এই নেতা বাঙালি জাতির স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক: সম্পাদক, দ্য রিপোর্ট.লাইভ