জিল্লুর রহমান : ১৪ মার্চ, আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। ১৯৯৮ সাল থেকে বিশে^ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৭ সালের মার্চে ব্রাজিলের কুরিতিয়া শহরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নদীর প্রতি মানুষের করণীয়, নদী রক্ষায় দায়িত্ব, মানুষের দায়বদ্ধতা কতোটুকুÑ এসব বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবারের আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘নদীর আইনি অধিকার’।
নদীর স্বীয় আইনগত অধিকারের প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতির সময় এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট এবং অন্যান্য দুর্যোগে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃতির পুনরুজ্জীবনে এখন প্রাগৈতাহাসিক সমাধানগুলোর পথে এগোচ্ছে বহু দেশ। বিশে^র অনেক দেশ এখন তাদের আদালত ও আইন সভার মাধ্যমে প্রকৃতিকে সুসংহত রাখতে তাকে মানুষের আইনি অধিকারের সমতুল্য মর্যাদা প্রদান করছে প্রকৃতির আইনি অধিকারের বিষয়টি আসলে কোনো পঞ্চশক্তি নয়। আমাদের দীর্ঘ অবহেলিত নদীগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হলে সরকার, আদালত, বিভিন্ন সংস্থা এবং সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে ব্যাপক এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন হবে। তবে প্রকৃতির অধিকারের ধারণাটি ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রমের একটি কর্মপরিকল্পনা নির্দেশ করে। এর মধ্য দিয়ে প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার প্রতি আমাদের নৈতিক ও আধ্যাত্বিক বাধ্যবাধকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং সুদূরপ্রসারী কার্যকরযোগ্য অধিকার এবং দায়িত্ববোধ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রকৃতির আইনি ব্যক্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য। কারণ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং পরিবেশের প্রতি আমাদের রয়েছে অনেক ঋণ।
আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই নদীর যথেচ্ছ ও অযাচিত শোষণকে বলতে গেলে একপ্রকার উদ্বুদ্ধ করা হয়Ñ কেবল মাত্র লাভের আশায় নদীর পানি, এর উপরে নির্ভরশীল বিভিন্ন প্রাণি ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যকে বিনষ্ট করা হয়। পরিবেশ আইনের মাধ্যমে এক্ষেত্রে কিছুটা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও আইন বরাবরই এই সমস্যা সমাধানের মূলে গিয়ে পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকের কাছেই বিষয়টিকে গল্প-উপন্যাসের মতো মনে হতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব আইনি অধিকারের বিষয়টি আমাদের আধুনিক আইনি ব্যবস্থার মধ্যে খুব সহজেই অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। আইন সবসময়ই ‘মানুষ নয় এমন আইনি স্বত্তার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে এক যুগান্তকারী রায় দেয়। এতে বলা হয়, দেশের সব নদ-নদী এখন থেকে ‘জীবন্ত সত্তা’র অধিকার প্রাপ্য হবে। এই নীতি বাস্তবায়ন ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকার এরই মধ্যে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ নামে একটি স্বাধীন সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করেছে। বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের সকলের উচিত নদীর আইনি অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসা। লেখক: সাংবাদিক ও সদস্য সচিব, ‘ডাকাতিয়া সুরক্ষা আন্দোলন’