আহসান হাবিব: [১] দর্শনের প্রধান কাজ হচ্ছে বিদ্যমান চিন্তাকে প্রশ্ন করা এবং পরীক্ষা করা। একজন গবেষক যেমন করে থাকেন, একজন বিজ্ঞানী যেমন করে থাকেন। চিন্তার নবায়ন এবং তাকে গ্রহণীয় করাই একজন দার্শনিকের কাজ। একজন রাজনীতিক যেমন সমাজকে এগিয়ে নিতে যুগোপযোগী কর্মসূচি বা ইশতেহার দিয়ে থাকেন।
[২] বাংলাদেশে যারা এই কাজগুলি করেন বলে দেখি, শুনি, তারা চিন্তাকে প্রশ্ন করার বদলে সেগুলি নিয়ে পল্লবগ্রাহিতায় মেতে ওঠেন। এবং প্রায়শ এই চিন্তাগুলো ইতিহাস কর্তৃক বর্জিত। এখানে মার্ক্সবাদকে ধর্মের সংগে গুলিয়ে একটা জগাখিচুড়ি পাকানোর কাজ চলে। এখানে মাদ্রাসা শিক্ষাকে বিজ্ঞান শিক্ষার চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দার্শনিক বচন প্রচার করা হয়।
[৩] স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে যে সব রাজনীতিবিদ ইতিহাস কর্তৃক বর্জিত, আজ দেখি তাদেরকে নিয়েই শোরগোল তোলা হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ যদি হয় একটি জাতীয় বুর্জোয়া বিপ্লব, তাহলে এই বিপ্লবের পরের স্তর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। দরকার এই বিপ্লবের পক্ষে কাজ করা। কিন্তু এখানে তার পরিবর্তে দেশকে কি করে আরো পেছনে নিয়ে যাওয়া যায়, তার পক্ষে নানা রক্ষণশীল বক্তব্য এবং দর্শন হাজির করা হয়।
[৪] ফলে বুর্জোয়া শাসন তার নিষ্ঠুরতা নিয়ে মহাধুমধামে শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। বুর্জোয়া শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেয়ে এখানে আরো পশ্চাদপদ চিন্তার চর্চা চলছে। এর ফল যা হবার তাই হচ্ছে। আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে আছে এমন রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা যা ঐ চিন্তাগুলোর চেয়ে অগ্রগামী। এজন্য আমরা দেখি যারা তথাকথিত বুর্জোয়াবিরোধী রাজনীতি করছে, তাদের সব ফসল ওদের ঘর ভরে তুলছে, এদের হাত শূন্য। [৫] চিন্তার চর্চার অন্তঃসারশূন্যতা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। লেখক: ঔপন্যাসিক