আহসান হাবিব: রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণের পথে ষড়যন্ত্র একটি ঐতিহাসিক উপাদান। ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে ইতিহাস পেয়েছে অসংখ্য মৃত্যু। কিন্তু সত্য এই ষড়যন্ত্র খুব বেশিদিন চাপা থাকেনি, একদিন উদঘাটিত হয়ে পড়েছে। তখন শুরু হয়েছে প্রতিশোধের লড়াই। সাম্রাজ্যে এইসব ষড়যন্ত্র দেখা দিতো প্রধানত নিজ পরিবারেই। যেমন হ্যামলেটের সম্রাট বাবাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে তারই আপন ভাই। এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা হয় কিন্তু নিহত সম্রাটের ছেলে হ্যামলেট ঠিকই এই ষড়যন্ত্র ধরে ফেলে এবং তার মাথায় প্রতিশোধের নেশা চেপে বসে। হ্যামলেট অসম্ভব ভালোবাসতো তার পিতাকে। কিন্তু কিভাবে নেবে এই প্রতিশোধ? তাকে তো প্রমাণ করতে হবে কে এই ষড়যন্ত্রকারী? সে একটি নাটক মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করে যে নাটকে সম্রাটকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তার অভিনয় তুলে ধরা হবে। তাই হয়, প্রাসাদে সেই নাটক মঞ্চস্থ হলে নতুন সম্রাট চিৎকার করে ওঠে এবং নাটক বন্ধ করতে বলে। ঠিক তখনই রাজদরবারে সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় কে সম্রাটের হত্যাকারী। এদিকে মন্ত্রীর মেয়ে অফেলিয়া ভালোবাসতো হ্যামলেটকে, কিন্তু অফেলিয়ার বাবা হ্যামলেটকে পছন্দ করতো না। একদিন মা ছেলের কথোপকথন আড়াল থেকে শুনছে টের পেয়ে হ্যামলেট সেই মন্ত্রীকে হত্যা করে। এই হত্যার খবর অফেলিয়ার কানে গেলে সে পাগলিনী হয়ে পড়ে এবং নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এই আত্মহত্যার কথা অফেলিয়ার ভাই জানতে পেরে প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে। সে তার বাবার হত্যাকারী হ্যামলেটকে হত্যা করতে চায়। কিভাবে প্রতিশোধ নেয়া যায়? এগিয়ে আসে নতুন সম্রাট, সম্রাট তাকে বুদ্ধি দেয় একটি ডুয়েল লড়াইয়ের। লড়াইয়ে ব্যবহৃত তরবারিতে বিষ মাখানো থাকবে আর থাকবে হ্যামলেটের প্রিয় ফলের জুসে বিষ মেশানো।
শুরু হয় ডুয়েল, লড়াইয়ে অফেলিয়ার ভাই পরাজিত হয়, তার বিষ মাখানো তলোয়ার যদিও হ্যামলেটকে আঘাত করে কিন্তু হ্যামলেট তার তলোয়ার কেড়ে সেই তলোয়ার অফেলিয়ার ভাইয়ের বুকে বিদ্ধ করে। এদিকে সম্রাট হ্যামলেটকে তার প্রিয় জুস খেতে বললে সে অস্বীকার করে খেতে, লড়াই চালিয়ে যায়। হ্যামলেট লড়াইয়ে জিতে যাচ্ছে দেখে তার মা বর্তমান রাণী যিনি তার স্বামীর মৃত্যুর পর তার ভাইকে বিয়ে করেছেন মাত্র দুমাসের মাথায়, আনন্দে সেই জুস পান করে ফেলে, এটা দেখে রাজা চিৎকার করে ওঠে। ঠিক তখনই অফেলিয়ার ভাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বার আগে সব ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেয়। তখন হ্যামলেট সম্রাটকে সেই একই তলোয়ার দিয়ে হত্যা করে। অফেলিয়ার ভাই, রাণী এবং সম্রাট মৃত্যু বরণ করে। আর হ্যামলেট? হ্যামলেটের হাতে অফেলিয়ার ভাইয়ের তলোয়ার দিয়ে পাওয়া আঘাতে এতক্ষণে বিষক্রিয়া শুরু হয়। এবং কিছু পরে হ্যামলেট মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। একজন সম্রাটকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে একই সময়ে ছয়জনের মৃত্যু ঘটে- মন্ত্রী, অফেলিয়া, অফেলিয়ার ভাই, রাণী, নতুন সম্রাট এবং হ্যামলেট। সাম্রাজ্য নেই, এখন আধুনিক রাষ্ট্রে কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সম্পর্কে সকলের জানা। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল মানেই হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। লেখক: ঔপন্যাসিক