শামসুদ্দিন পেয়ারা: ১৯৭১-এর পাকিস্তানি সৈন্যরা ১৯৭৫-এর পর থেকে ভোর পাল্টে বেসামরিক পোশাক পরে নানা রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়ে রাজনীতির নামে ওই একসাম্প্রদায়িক ঘৃণার আগুনে বাঙলাদেশকে পুড়ে ছারখার করে দিচ্ছে যেমনটি তারা বিমান কামান গোলা বন্দুক দিয়ে করেছিল মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস। তারা বুঝতে পারছে না যে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এদেশ থেকে জাতিগত, ধর্মীয়, বণভিত্তিক, ভাষিক, আঞ্চলিক ও নৃতাত্ত্বিকÑ এককথায় সকল ধরনের সাম্প্রদায়িকতা চিরকালের জন্য উৎখাত হয়ে গিয়েছে। ওটা আর কখনো ফিরে আসবে না।
যারা বাংলাদেশকে ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বে নিয়ে যাবার গোপন ও প্রকাশ্য নানা চেষ্টায় লিপ্ত এরাই হলো ১৯৭১-এর আত্মগোপনকারী আলবদর। এরাই মুখোশ পরা রাজাকার। এরাই ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যের ইউনিফর্ম পরে ঢাকা শহরে ২০ হাজার নিরীহ বাঙালিকে নির্বিচারে ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। নয় মাসে ত্রিশ লাখ বাঙালির প্রাণ সংহার করে এরাই ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা সংঘটিত করেছিল। এদের নাম রশিদ ফারুক ডালিম হুদা নূর। এরাই জিয়া, এরাই এরশাদ। এরাই ১৫ আগস্টের জল্লাদ। এরাই ২১ আগস্টের জনসভায় গ্রেনেড ছুঁড়ে রক্তগঙ্গা বহায়। এরাই সেই ঘৃণ্য অস্পৃশ্য ‘মগজকুষ্ঠ’ রোগে আক্রান্ত সাম্প্রদায়িক শক্তি যারা মানুষকে মানুষ নয় বরং তাদের মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান শিখ ইহুদি জৈন পার্শি হিসাবে গণ্য করে। প্রতিমা ভাঙে, মন্দির আক্রমণ করে। নির্বাচনে জিতলে বা হারলে হিন্দুর বাড়িতে হামলা চালায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী চাকমা-মার্মাদের গ্রামে আগুন লাগিয়ে তাদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। তাদের জমিজমা জুমগুলো দখল করে নেয়। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, দখল, উৎখাত, উচ্ছেদ ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণার নজিরহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশীয়ার নতুন গাজা, হেব্রন, নাবলুস, বেথলেহেম ও জেরুজালেমে পরিণত করে।
পরধর্মকে যারা তুচ্ছজ্ঞান করে তাদের চাইতে পরধর্মকে যারা সম্মান করে তেমন লোকের সংখ্যা এদেশে এখনো হাজার গুণ বেশি। আমরা ‘৭১-এর রক্তে ধোয়া পুতপবিত্র জাতি। এ জাতি অতীতে কখনো সাম্প্রদায়িক হিংসাচর্চা করেনি, এখনকরে না, ভবিষ্যতেও করবে না। সাম্প্রদায়িকতা একটি অপবিত্র ঘৃণ্য আচরণ। এ দেশকে আমরা কখনো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আচ্ছন্ন হতে দেবো না। আঠারো কোটি মানুষ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আঠারো কোটি প্রতিরোধদুর্গ। জয় বাংলা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :