শিরোনাম
◈ চিনি-তেল-আটা-ডালসহ কমতে পারে যেসব পণ্যের দাম ◈ প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৫-২৬: ফ্রিজ-মোবাইল-সিগারেটসহ বাড়তে যেসব পণ্যের দাম ◈ বাজেট ২০২৫-২৬: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতি, ১১০ পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ◈ বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি ◈ সালাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদল ◈ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থান করছেন অর্থ উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ ১৯৭২-২০২৫: এক নজরে বাজেট পেশ করেছেন যারা ◈ এলপিজি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ ◈ টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আখাউড়ায় আকষ্মিক বন্যায় ১৯ গ্রাম প্লাবিত ◈ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কোন খাতে বরাদ্দ কত

প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ০১:৪০ রাত
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ০১:৪০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চিররঞ্জন সরকার: ছাত্র ইউনিয়ন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন- প্রথম প্রেম

চিররঞ্জন সরকার: কৈশোর-যৌবনের পুরো সময়টাই কেটেছে ছাত্র ইউনিয়নের ‘ঐক্য, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’র পক্ষে স্লোগান দিয়ে। আমরা তখন একটা শোষণহীন সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখতাম। যেখানে সব শিশু স্কুলে যাবে, লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। সবাই চিকিৎসার সুযোগ পাবে, কেউ না খেয়ে থাকবে না। সমাজে বৈষম্য থাকবে না। সবাই কাজ পাবে। মূলত এমন একটা সুন্দর সমাজ গঠনের অঙ্গীকার নিয়েই ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলাম। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা বিনিয়োগ করেছিলাম। ছাত্রজীবনের কথা, ছাত্র ইউনিয়নে কাজ করার কথা খুব মনে পড়ে। তখন ভালো ভালো কথা, ভালো ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে ছাত্র ইউনিয়ন ছিল অনন্য প্রতিষ্ঠান। পূর্বসূরীরা আমাদের নানা স্বপ্ন দেখাতেন। সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন। আমাদের বলা হতো সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা। আমাদের কাছে স্বপ্নের দেশ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। আমরা না জেনে, না বুঝেই সেই স্বপ্নের স্রোতে ভেসে যেতাম। বাংলাদেশ কবে সোভিয়েত ইউনিয়ন হবে, আমাদের কৈশোর-যৌবন কেটেছে সেই অপেক্ষায়। আমরা স্কুলজীবনেই সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত ‘উদয়ন’, ‘সোভিয়েত নারী’ এই পত্রিকা দুটি পড়তাম এবং এর পাতা দিয়ে বইয়ের মলাট লাগাতাম।

কী মসৃণ ছিল সেই কাগজ, কী চমৎকার ছিল তার গন্ধ। উদয়নে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা মন দিয়ে পড়তাম এবং ছবিগুলো মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতাম। আর মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম, ইস কবে যে আমাদের দেশটাও এমন হবে। একদা রাশিয়া (সেই আমলের সোভিয়েত ইউনিয়ন) ছিল আমাদের অনেকের কাছে তীর্থক্ষেত্রের মত। রাশিয়া মানে একটা আলাদা আবেগ। একটা স্বপ্ন। ম্যাক্সিম গোর্কির মা। পৃথিবীর পথে, পৃথিবীর পাঠশালায়। দস্তয়েভস্কির বঞ্চিত লাঞ্ছিত। পুশকিন, গোগল, গের্সেন, লেরমন্তভ, তুর্গেনেভ, নেক্রাসভ, চেরনিশেভস্কি, তলস্তয় প্রভৃতি বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিকদের অসাধারণ সব বইয়ের অনুবাদ পড়া। নিকোলাই অস্ত্রভস্কির ‘হাউ দ্য স্টিল ওয়াজ টেম্পার্ড’-এর বাংলা অনুবাদ ‘ইস্পাত’পড়ে শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটত। স্নাছুগুলো বিদ্রোহ করে উঠত। আবার ছোট লাল দোলাই আর দুষ্টু নেকড়ের গল্পে থাকত রূপকথার আমেজ। যৌবনে আমরা কখনও রাশিয়ার কোনো দোষ বা খারাপ কিছু খুঁজে পেতাম না। আমাদের বোঝানো হতো এবং আমরাও তেমনটাই বুঝতে চাইতাম যে, দুনিয়ার একমাত্র খারাপ আর নষ্ট হচ্ছে মার্কিনসাম্রাজ্যবাদ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে পর্যুদুস্ত করতে রাশিয়ার চেয়ে ভালো কিছু আর দুনিয়ায় নেই, হতেও পারে না। 

যাহোক, সমাজতন্ত্রপ্রেম, রাশিয়াপ্রেম বা দদালালি’ আমাদের অস্থি-মজ্জা-রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।

এরপর ১৯৯০ সালে সোভিয়েত রাজনীতিতে শুরু হয় উথাল-পাথাল হাওয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের ‘পেরেস্ত্রাইকা’আর ‘গ্লাসনস্তের’ধাক্কায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে খান খান। সঙ্গে আমাদের হৃদয়ও। পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো একে একে সমাজতন্ত্র পরিত্যাগ করে। আমরা যারা কৈশোর থেকে বুঝে না-বুঝে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম, তাদের মনোজগতে সৃষ্টি হয় দারুণ এক বিপর্যয়, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। পূর্ব ইউরোপের ঢেউয়ে আমাদের প্রিয় কমিউনিস্ট পার্টিও ভেঙ্গে যায়। এক ধরনের হতাশা থেকে আমরা অনেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে ‘অবসর’ (আরলি রিটায়ার্ডমেন্ট) গ্রহণ করি। এর পর মস্কোভা, ভলগা নদী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। বলশেভিকের বিপ্লব, লেনিন, স্ট্যালিনের পাট চুকিয়ে অধুনা ভলাদিমির পুতিনের রাশিয়া এক ভিন্ন দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টিতে ভলাদিমির পুতিন এক জবরদস্ত একনায়ক। তাঁর মধ্যে কেবল দখলদার দুরাত্মার বাস-তাই নয়, তিনি অক্টোবর-বিপ্লবের আগের জারদের মতো স্বৈরতন্ত্রী। রাশিয়ায় সত্যিকার গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিকাশ ও আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না কেজিবির সাবেক কর্মকর্তা ও সাবেক কট্টরপন্থী কমিউনিস্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্যই। 

পুতিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, স্বাধীন মত প্রকাশে সোচ্চার সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর তাঁর দমনপীড়নের রেকর্ড নাকি জারদের আমলকেও ছাড়িয়ে গেছে। আসলে আমাদের জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হচ্ছে প্রথম প্রেমের মতো। মনের গহীন কোণে সেঁটে আছে এই দুটি নাম। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে রূপান্তরিত রাশিয়ার সাফল্য, রাশিয়ার ভালো-মন্দ কেন জানি এখনও মনের মধ্যে দোলা দিয়ে যায়। ছাত্র ইউনিয়নের ক্ষেত্রেও তাই। এক সময় ছাত্র সমাজের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠনটি ভুল নেতৃত্বের ভুল দিকনির্দেশনায় ক্ষয়িঞ্চু ও দ্বিধা-বিভক্ত হলেও এর যেকোনো ভালো কাজ এখনও ভীষণভাবে আনন্দিত করে। আবার নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি বিষণ্ন করে। আজ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেই পুরনো দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। লেখক: কলামিস্ট। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়