দেবদুলাল মুন্না : ৬ মে প্যারিসে একদম একেলা নভেরা মারা যান। বিছানার একপাশে শিল্পী আমিনুল ইসলাম অন্যপাশে হামিদুর রহমান। তাদের দুজনের মধ্যে পুরো মেকআপ নিয়ে এসে শুয়ে পড়লেন ভাস্কর শিল্পী নভেরা আহমেদ। স্থান ইতালির কোনো এক শহর। গভীর রাত। কেন? কমলা ভাসকিনকে বলেছিলেন, সুন্দর দেখাতে হয়। অসুন্দর লুকিয়ে রাখতে হয়। যদিও সুন্দর নিরপেক্ষ ও নিরীহ না। ও আচ্ছা, কবি শামসুর রাহমানও প্রেমে পড়েছিলেন নভেরার। তাকে ২০০৯ সালের দিকে প্যারিসের একটি পাবে ওয়াইন পানরত অবস্থায় আবিষ্কার করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। এর আগে হাসনাত আবদুল হাই তাকে স্বজন ও বন্ধুদের মাধ্যমে কোথায় আছেন জানার জন্য অনেক খুঁজেছিলেন। পাননি। শেষে নভেরা নামে একটি উপন্যাস লিখেন।
নভেরা সব রহস্য নিয়ে একদিন বাংলাদেশ থেকে গোপনে চলে গিয়েছিলেন দূর পরবাসে। নিরুদ্দেশের মতো। কেউ জানত না, তিনি কোথায়। কোথাও নিজে পরিচয়ও দিতেন না। তিনি আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থপতি হামিদুরের সাথে জীবনের সেরা সময় কাটিয়েছিলেনই না, শহীদ মিনার তৈরিতে অবদান তারও। কিন্তু পরে নাম হয় শুধু হামিদুরের। এতে সম্ভবত কষ্ট পেয়েছিলেন। যদিও পরে সরকারি ভাবে শহীদ মিনার তৈরির ব্যাপারে নভেরাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি নিন নি। দেশে আসেননি।
নভেরা মাঝে মাঝে গানও করতেন ঘরোয়া পরিবেশে। রবীন্দ্রসঙ্গীত। তার প্রিয় গান ছিল, মেঘের কোলে মেঘ জমেছে। গানটি প্রথম শোনেন, চিটাগংয়ের পাহাড়তলি। এক ভোরে। তখন তার বয়স মাত্র ১৩। সাইক্লিং করছিলেন। এক বাসা থেকে গানটি ভেসে এসেছিল। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন,সারা শরীরে শেকলবাঁধা এক মধ্যবয়সী লোক গানটি গাইছিলেন। ওই গান ও ওই শেকল বাধা মানুষটি তাকে অনেকদিন ভাবিয়েছে। মাদ্রাজ গিয়েছিলেন নাচ শেখার জন্য বৈজয়ন্তীমালার কাছে। নাচও শিখেছিলেন। একা একা নাচতেন। বাসায়। কারো সামনে না। নিজের জন্যই। লেখক: সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :