শিরোনাম
◈ আলোচনা চালাতে চান ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, 'আগ্রাসন' বন্ধের শর্ত ইরানের ◈ সৌদি আরবকে হজের কোটা নিয়ে যে অনুরোধ করলেন ধর্ম উপদেষ্টার ◈ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আমানতের রেকর্ড: কারা পাচার করল, কীভাবে করল? ◈ যুদ্ধের মুখে ইসরায়েলের নাগরিকদের সুরক্ষা রাখে ‘মামাদ’ কৌশল ◈ গাজায় ‘মানবসৃষ্ট খরা’তে শিশুরা তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে: ইউনিসেফের সতর্কবার্তা ◈ বাংলাদেশের এক বিভাগের চেয়েও ছোট আয়তনের ইসরায়েলের জনসংখ্যা কত? ◈ সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার ডিবি হেফাজতে, বেইলি রোড থেকে আটক ◈ এই ইসরায়েল হাসপাতালে ক্ষতির অভিযোগ করেছে, অথচ তারা গাজায় ৭০০ হাসপাতালে হামলা করেছে: এরদোয়ান ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে, শিগগিরই ফিরবেন: আমীর খসরু ◈ জাতিসংঘ মহাসচিবের হুঁশিয়ারি: সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এমন আগুন জ্বলবে, যা কেউ থামাতে পারবে না

প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:৪৯ রাত
আপডেট : ০২ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:৪৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় বা ওই রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি আছে  

ইমতিয়াজ মাহমুদ 

ইমতিয়াজ মাহমুদ: [১]  প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে পোস্টটার পর বেশ কয়েকটা কথা দেখতে পেলাম আপনারা বলছেন। ভাবছি সেগুলো প্রসঙ্গ ধরে ধরে একেকটা ছোট ছোট পোস্ট লিখলে বেশ হয়। আলোচনাটা প্রয়োজন আছে। আমার আলস্য হয়তো আমাকে সবগুলো ইস্যু নিয়ে লিখতে বিঘ্ন তৈরি করবে, তবুও দেখা যাক। আপনারা কেউ আগ্রহী হলে প্রয়োজনে মনে করিয়ে দিতে পারেন। এখন একটা ছোট প্রসঙ্গ- বলা উচিত ছোট বিভ্রান্তি- সংক্ষিপ্ত আকারে পরিষ্কার করে দিই। প্রসঙ্গটা হচ্ছে বিদেশে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি ছাত্র রাজনীতি আছে? সেগুলোও কি আমাদের দেশের মতো? সোজা উত্তর হচ্ছে যে হ্যাঁ, পৃথিবীর প্রায় সবকটা বিশ্ববিদ্যালয় বা ওইরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি আছে। তাদের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয় প্রতি বছর নিয়ম করে। ছাত্ররা মিটিং মিছিল করে, বিতর্ক করে, সভা সমিতি করে। জাতীয় নির্বাচনের সময় তারা ছাত্রদের মধ্যে ক্যাম্পেইন করে। তবে প্রতিটা দেশের নিজস্ব ধরন আছে- ইংল্যান্ডের ছাত্র ছাত্রীরা যেভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আমেরিকার ছাত্ররা সেভাবে করে না। আবার আমাদের এদিকে- ভারত বাংলাদেশ নেপাল- এদিকে যেরকম ছাত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সংস্কৃতি পশ্চিমা দেশে সেরকম নয়। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে আবার একদম ভিন্ন রকম আরকি। অন্যান্য দেশে প্রায় সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র রাজনীতি আছে, ছোটদের স্কুলগুলো বাদ দিয়ে আরকি। কোথাও কোথাও আবার হাইস্কুলেও তারা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক উৎসাহিত করে। উদ্দেশ্যটা তো স্পষ্ট- যাতে করে ছেলে-মেয়েরা রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে, রাষ্ট্রের নীতি ও কার্যপদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন মতামত তৈরি করতে পারে এবং সেভাবে বড় হলে নিজের অবস্থান থেকে মতামত দিতে সক্ষম হয়। আমেরিকার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে আমাদের খানিকটা মিল আছে, তবে তাদের স্টাইল অনেক রঙিন ও প্রাণবন্ত। নাচ গান বন্দুক মারামারি রঙিন ব্যানার ফেস্টুন সবকিছুই তাদের প্রাণবন্ত। 

[২] আমাদের ঢাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো তো গুণে মানে অনন্য, অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে হয়তো তুল্য হবে না, তথাপি অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ নামে বিলেতে দুইটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে, হার্ভার্ড নামে আমেরিকার একটা আছে যেগুলো মোটামুটি খারাপ না। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে ছাত্ররা। বিলেতের লেবার পার্টির ছাত্র সংগঠন আছে, কনজারভেটিভ পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেট তাদেরও আছে। আমেরিকার ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের ছাত্র সংগঠনও আছে। এছাড়া কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী ও নৈরাজ্যবাদীরা আছে, তবে তাদের মধ্যে অনেক বিভক্তি, শক্তি কম। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশ, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো ছাড়া আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতেও ছাত্রদের অংশগ্রহণ আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের কথা তো আমরা জানি। আফগানিস্তানের ছাত্ররা, যাদের আমরা তালিবান বলে চিনি, তারা তো মৌলবাদী রাজনীতি শুরু করে জঙ্গিবাদী পথে রাষ্ট্রের ক্ষমতাও দখল করে ফেলেছে। নেপালে একসময় দুইটা কমিউনিস্ট পার্টি- ইউএমএল ও মাওবাদী- তাদের ছাত্র সংগঠন দেশব্যাপী বিস্তৃত ছিল। নেপালি কংগ্রেসেরও ছাত্র যুব সংগঠন ছিল। পরে তো দুই কইউনিস্ট পার্টি এক হয়ে গেলো, ছাত্র সংগঠনগুলোর কি হয়েছে সে খবর ঠিক জানি না। এশিয়ার কোরিয়া ও জাপানে  ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে, ছাত্র রাজনীতি এখনো বেশ তৎপর। আশির দশকে, তখন আমি ছাত্র ইউনিয়ন করি। কোরিয়াতে ছাত্রদের একটা তুমুল আন্দোলন হয়েছিল, ছাত্ররা প্রাণও দিয়েছিল সে আন্দোলনে। দীর্ঘদিন কোরিয়ার একটা বিশ্ববিদ্যালয় একদম বন্ধ হয়ে ছিল। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন জয়যুক্ত হয়, তাদের সংবিধানে কিছু সংশোধনী আনা হয়। কোরিয়ার গণতন্ত্রের বিকাশে সে আময়ের ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা করিয়া এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। আর কোরিয়া যতদিন জাপানের অধীনে ছিল, সেসময় স্বাধীনতার আন্দোলনেও কোরিয়ার ছাত্রদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

[৩]  জাপানের জেঙ্গাকুরেন নামের সংগঠনটি সম্পর্কে অন্তর্জালে খুঁজলে ভালো ভালো লেখা পাবেন। এ সংগঠনটি গঠিত হয় যুদ্ধের পর [১৯৪৭ বা ৪৮ সালে হবে।] গণতন্ত্রের পথে জাপানের যাত্রার ইতিহাসের সঙ্গে জেঙ্গাকুরেনের ইতিহাস যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একসময় কমিউনিস্টদের ছাত্র সংগঠন ছিল জেঙ্গাকুরেন, পড়ে বিভক্তি হয়, স্তালিনপন্থার বিরোধীরা শক্তিশালী হয়, পরে আরও ভিভক্তি হয়ে নানা গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। ৮১ বা ৮২ সালে চট্টগ্রামে এক কর্মশালায় সে সময়ের ছাত্র ইউনিয়নের একজন কেন্দ্রীয় নেতার মুখে আমি জেঙ্গাকুরেনের কথা বিস্তারিত শুনেছিলাম। ভুলে গেছি, দেখি কোনো লিটারেচার পাই যদি। চীনে ছাত্র রাজনীতি এখনো আছে। তবে চীন এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে এক পার্টি ব্যবস্থা থাকায় ছাত্র রাজনীতি ঠিক স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভূমিকা রাখতে পারে না। তাদের ভূমিকা খুবই সীমাবদ্ধ। তথাপি চীনে তিয়েনমিয়ান [নামটা ঠিক লিখলাম কি?] স্কয়ারে যে বিক্ষোভ হয়েছিল সেখানে অনেক ছাত্ররা অংশ নিয়েছিল। সত্তর ও আশির দশকে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বিরোধী শান্তি আন্দোলনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ছাত্র যুবকদের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর ছাত্র যুবকদের বিপুল অংশগ্রহণ গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে আর বললাম না।

এ আলোচনাটা এখানেই সীমিত রাখি, ছাত্র রাজনীতি বা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা জাতির রাজনীতিতে ছাত্রদের অংশগ্রহণ অস্বাভাবিক কিছু না বা অভিনব কিছু না। অন্যায় বা নেতিবাচক কিছু তো মোটেই না। যারা বলতে চান যে, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  রাজনীতি  নেই তারা ভুল বলেন। রাজনীতি করা সকল নাগরিকের মতো ছাত্রদেরও একটা স্বাভাবিক মৌলিক অধিকার। সুতরাং রাজনীতির এ বিশেষ ক্ষেত্রটিতে যদি অপরাধ প্রবণতা বাড়ে তাহলে সেটার সমাধান অপরাধ দমনের মাধ্যমেই করতে হবে, নাগরিকদের অধিকার খর্ব করে নয়। অন্যভাবে বললে, অপরাধ দমন করুন, রাজনৈতিক অধিকার নয়। লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়