শিরোনাম
◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০১:৫৩ দুপুর
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১০:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নতুন মার্কিন শ্রম নীতি বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য কতটা শঙ্কার? 

ইকবাল খান: [২] বিবিসি জানায়, ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন শ্রমিক অধিকার নীতিতে বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদের উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা বলা হয়। 

[৩] বিশ্লেষকদের অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই ঘোষণায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য বাড়তি উদ্বেগের জায়গা রয়েছে। 

[৪] ১৬ নভেম্বর একটি স্মারকে সই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই নীতি সব দেশের জন্য প্রযোজ্য হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যখন এর বিস্তারিত তুলে ধরেন সেখানে উঠে এসেছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।

[৫] তিনি বলেছিলেন, “যারা হুমকি দেয়, ভয় দেখায়, যারা ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক অধিকার রক্ষাকারী বা শ্রমিক সংগঠনকে আক্রমণ করে তাদেরকে আমরা জবাবদিহি করবো। নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যে শাস্তি, ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো যতো বিষয় রয়েছে তার সবই ব্যবহার করা হবে। আমরা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের সাথে থাকতে চাই। কল্পনা আক্তার একজন বাংলাদেশি গার্মেন্টস কর্মী এবং গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার কর্মী। তিনি বলেছেন যে, তিনি জীবিত রয়েছেন কারণ মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করেছে।''

[৬] মার্কিন এই নতুন শ্রমনীতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধে। এর সাথে শ্রমিক অধিকারের বিষয় যুক্ত হয়ে ঝুঁকির জায়গা সৃষ্টি করছে বলে করছেন অনেকে। তাদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও এই শ্রম নীতি ব্যবহার করা হতে পারে।

[৭] সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে শ্রম সংক্রান্ত এই বিষয়টির সাথে রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা সংশ্লেষ থাকায় “রাজনৈতিক বিষয়গুলোকেও সরকারের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার প্রয়োজন পড়বে।”

[৮] পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর একজন পরিচালক ও সাবেক সভাপতি আরশাদ জামাল দীপুও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে বলে মনে করছেন। বিশেষত উদাহরণ হিসেবে সেক্রেটারি ব্লিংকেন যেহেতু বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আখতারের নাম উল্লেখ করেছেন, ফলে একে যথেষ্ট উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন “আমরা এটাকে হালকাভাবে নিচ্ছি না।” প্রেসিডেন্সিয়াল স্মারকে বাংলাদেশের এভাবে উদাহরণ টানার নজির নেই বলে “এখানে রাজনৈতিক সংমিশ্রণ আছে” বলে মনে করছেন আরশাদ জামাল।

[৯] এই বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্ব সহকারে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন। যেমন সিপিডির খন্দকার মোয়াজ্জেম বলছিলেন “রাজনৈতিক জায়গাগুলোকে, বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সমস্ত অনিশ্চয়তা অস্থিরতা রয়েছে সেই জায়গাগুলোকে সরকার কীভাবে অ্যাড্রেস করবে তার উপরও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করতে পারে আমাদের ওপর শ্রম নীতির প্রয়োগ কোন পর্যায়ে হতে পারে।” বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি যাতে না হয় সেজন্য সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তারা দুজনেই মনে করেন।

[১০] বিজিএমইএর একজন পরিচালক ও সাবেক সভাপতি আরশাদ জামাল দীপু বলছিলেন “নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, এটা যথেষ্ট উদ্বেগের, কারণ যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এক নম্বর বাজার।” গার্মেন্টস শিল্পে আগের তুলনায় যথেষ্ট উন্নতি হলেও নানাবিধ চ্যালেঞ্জ যে রয়েছে বলে মনে করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমও।

[১১] মজুরি, কারখানার কর্মপরিবেশ, শ্রম-নিরাপত্তা, শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার এমন সব দুর্বলতার কথা তুলে ধরে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন “সামগ্রিকভাবে আমাদের রপ্তানিমুখী খাতগুলো যদি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে তাহলে এই মুহূর্তে অর্থনীতির যে পরিস্থিতি তাতে এটি বহন করবার মতো শক্তি আমাদের কম।”

[১২] বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ ফজলুল হক বলছিলেন “আমরা শঙ্কিত যে কোনোভাবে যদি আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় তাহলে আমাদের এ ব্যবসাটা চালানো কঠিন থেকে কঠিনতম পর্যায়ে চলে যাবে।” 

[১৩] যদিও এমন আশঙ্কার তেমন কারণ দেখছেন না বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও ও শ্রম আইনের সব নিয়ম নীতি পালন করা হয় দাবি করে তিনি মনে করেন, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মতো কোনো কারণ নেই।

[১৪] একই রকম মত দেন চট্টগ্রামের একজন গার্মেন্টস মালিক ও বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদা ও নিয়মকানুন মেনেই ফ্যাক্টরি চালানো হয় দাবি করে তিনিও নিষেধাজ্ঞার কোন শঙ্কা আছে বলে মনে করেন না। 

[১৫] রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। এরপরে শ্রম পরিবেশ উন্নয়নের যেসব শর্ত ছিল তার বেশির ভাগ পূরণ করা হলেও বাংলাদেশের জন্য খোলেনি জিএসপি সুবিধা।

[১৬] সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, নির্বাচন ঘিরে বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা খাত মার্কিন নীতির কষাঘাতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা আছে, এমন অবস্থায় নতুন এই শ্রম নীতির বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার দরকার আছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়