নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল অবরোধে বিভিন্ন যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনে এসব হরতাল-অবরোধ ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ২২৩টি অগ্নিসংযোগের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এর মধ্যে কয়েকটি স্থাপনা থাকলেও অধিকাংশ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে যানবাহনে। গত ৩০দিনে ২১২টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা। দিনে গড়ে ৭টি যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৫টিই বাস।
এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৫টি যানবাহনে আগুন লাগানোর সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ১টি, হবিগঞ্জে ১টি, পাবনায় ১টি, টাঙ্গাইলে ১টি ও খুলনায় ১টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১টি ট্রেনের বগি, ৩টি বাস ও ১টি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে চলামান হরতকাল অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতায় জড়িত গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, দলীয় বড় পদ পাওয়ার জন্য এবং টাকার বিনিময়ে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এমনকি যাদের সুনির্দিষ্ট আয়ের পথ নেই তাদের টাকার বিনিময়ে, কখনো খাবারের বিনিময়ে বাসে আগুন দিতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। আবার এসব আগুন দেয়ার ঘটনার ভিডিও ধারণ করে বড় ভাইদের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় নাশকতাকারীদের।
পুলিশ জানতে পেরেছে, বড় ভাইরা এসব ধারণকৃত নাশকতার ভিডিও দেশে বিদেশে উচ্চ পর্যায়ে নেতাদের কাছে পাঠিয়ে থাকেন।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ কেরে দেখতে পেয়েছে, চলমান হরতাল অবরোধে যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশি। এরমধ্যে বাসের সংখ্যাই বেশি। জেলা হিসেবে গাজীপুর জেলায় আগুনের ঘটনা বেশি।
উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে ফায়ার সার্ভিস দেখতে পেয়েছে, বগুড়া সদর উপজেলায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিশ্লেষণ করে ফায়ার সার্ভিস দেখতে পেয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগুনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এছাড়া রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে আগুনের ঘটনা বেশি। এরপরেই রয়েছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা।
এসব আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৪০০টি ইউনিট ও ২ হাজারের বেশি সদস্য কাজ করেছেন। সব ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ২জন সদস্য ও ৩ জন সাধারণ নাগরিক আহত হন।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা মো. শাজাহান শিকদার এসব তথ্য উল্লেখ করে বলেন, গত এক মাসে যেসব আগুনের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে কিছু স্থাপনা থাকলেও বেশিরভাগ যানবাহন। গড়ে প্রতিদিন ৭টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে যারমধ্যে ৫টিই গণপরিবহনের যাত্রীবাহি বাস। এসব ঘটনায় দিন থেকে রাতে বেশি আগুন দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৮ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ৩০ দিনে ১৩২টি বাস, ৩৫টি ট্রাক, ১৬টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটর সাইকেল, ২টি প্রাইভেটকার, ৩টি মাইক্রোবাস, ৩টি পিকআপ, ৩টি সিএনজি, ৩টি ট্রেন ও ৩টি লেগুনায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ১টি করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, ১টি পুলিশের গাড়ি, ১টি নছিমন ও ১টি অ্যাম্বুলেন্ন্সে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ১১টি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিএনপি অফিস ৫টি, আওয়ামী লীগ অফিস ১টি, পুলিশ বক্স ১টি, কাউন্সিলর অফিস ১টি, বিদ্যুৎ অফিস ২টি, বাস কাউন্টার ১টি, শোরুম ২টি আরও ২টি স্থাপনা পুড়ে যায়।
এদিকে রাজধানীর মিরপুরে শিকড় পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়ার সময় হাতেনাতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আসাদুল তালুকদার (৩০) ও মো. ইউসুফ শেখ (২৭)। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মিরপুরের পল্লবী থানাধীন ১২ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডে কেএফসির সামনে বাসটিতে আগুন দেয়ার সময় হাতেনাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পলাতক বিএনপি নেতা মামুনের নির্দেশে এবং ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বাসটিতে আগুন দেয়া হয় বলে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা।
গণপরিবহণে আগুন দেয়ার বিষয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে গত ১ মাসে বাসে আগুন দেয়ার সময় এখন পর্যন্ত ৩২ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের সুনির্দিষ্ট আয়ের পথ নেই তাদের টাকার বিনিময়ে আবার কখনো খাবারের বিনিময়ে বাসে আগুন দিতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন নেতার নির্দেশনার পর এটি বাস্তবায়ন করা হয়।