বাংলাদেশ সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল ছাড়াই ঢাকা সফর করেছেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কোনো ধরনের কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া বিদেশি একটি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার এই ‘বিশেষ সফর’ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম রাজনৈতিক বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) মোল্লা নূর আহমদ নূর (যিনি ‘মোল্লা জাওয়ান্দি’ নামেও পরিচিত) গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান। তবে এই সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সিটিটিসি-সহ দেশের কোনো নিরাপত্তা সংস্থাকেই আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়নি বলে জানা গেছে।
সফরের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি গত এক সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন এবং বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সফরটি মূলত গত সেপ্টেম্বর মাসে মামুনুল হকের নেতৃত্বে একদল ইসলামি নেতার আফগানিস্তান সফরের ধারাবাহিকতা। উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিনিধি দল কাবুল সফর করেছিলেন।
এই সফর সম্পর্কে চরম বিস্ময় প্রকাশ করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা এই সফরের বিষয়ে কিছুই জানেন না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “বিদেশি কোনো সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফরে এলে সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে সৌজন্য সাক্ষাতের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কূটনৈতিক প্রটোকল বা শিষ্টাচারের কোনো তোয়াক্কাই করা হয়নি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বা সচিবের সঙ্গে তার কোনো সৌজন্য সাক্ষাৎও নির্ধারিত নেই।”
কূটনৈতিক প্রটোকল অনুযায়ী এ ধরনের কর্মকর্তারা ঢাকা সফরে এলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বা সচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন, যা মুফতি নূর আহমদ নূরের ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সামনে জাতীয় নির্বাচন এবং সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে এই সফরের সময় ও গোপনীয়তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। একজন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, প্রটোকল ছাড়া একজন বিদেশি কর্মকর্তার এভাবে বিভিন্ন মাদরাসা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সরকারি পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া না গেলেও, একজন তালেবান নেতার এভাবে বাংলাদেশে অবস্থান ও কর্মকাণ্ড নিয়ে জনমনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব