বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে কোনো ভূমি মালিকের নামজারি আবেদন বাতিল বা খারিজ করা যাবে না। ছোটখাটো ভুল বা নথিপত্রের ঘাটতি থাকলেও আবেদন অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে এবং আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি কোনো এসিল্যান্ড (AC Land) কর্মকর্তা অযৌক্তিকভাবে নামজারি আবেদন রিজেক্ট করেন, তবে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তকে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা সাধারণ ভূমি মালিকদের হয়রানি কমাবে এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরাসরি এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, কোনো বৈধ ভূমি মালিককে নামজারি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সরকারি কর্মকর্তা জনগণের শাসক নয়, বরং সেবক হিসেবে কাজ করবেন—এমন নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
নামজারি সংক্রান্ত অভিযোগ ও হয়রানি প্রতিরোধে সরকার হটলাইন ১৬১২২ চালু রেখেছে, যা আরও হালনাগাদ করা হয়েছে। ভূমি মালিকরা এই নাম্বারে ফোন করে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া নতুন প্রজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নামজারি আবেদনের পর সর্বোচ্চ ২৮ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করতে হবে। এর আগে এ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক ভূমি মালিক মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতেন। এবার সেই জটিলতা দূর হচ্ছে—এখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নামজারি সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক।
সরকারের মতে, এই সিদ্ধান্ত কেবল ভূমি মালিকদের জন্য স্বস্তি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় রাজস্ব বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, নামজারি ছাড়া কোনো ভূমি মালিক খাজনা দিতে পারেন না। ফলে নামজারি প্রক্রিয়া সহজ হলে সরকারও রাজস্ব আয় বাড়াতে পারবে।
অবশেষে বলা যায়, এই ঐতিহাসিক রায়ের ফলে এখন থেকে দেশের কোনো বৈধ ভূমি মালিক আর নামজারি থেকে বঞ্চিত হবেন না। জনগণের হয়রানি কমবে, দুর্নীতি হ্রাস পাবে, আর ভূমি প্রশাসন আরও জবাবদিহিমূলক ও জনগণের সেবায় নিবেদিত হবে। সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ