রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার পর তা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী একটি গার্মেন্টস কারখানায়। সেখান থেকে কোনও রকম নিজের জীবন বাঁচিয়ে বেরিয়ে আসেন গার্মেন্টসের কাটিং মাস্টার নাজমুল।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঁচ তলা ভবনটির তিন তলা ও চার তলায় ছিল সুইং ফ্যাক্টরি (গার্মেন্টস) সেটার নাম “আর এন ফ্যাশন”। এর মালিক দুইজন, রেজাউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। দুইজনের নামের আদ্যক্ষর নিয়েই এই ফ্যাক্টরির নাম হয় “আর এন ফ্যাশন”। পাঁচতলার গার্মেন্টসের নাম “বিসমিল্লাহ ফ্যাশন”। এর মালিকের নাম রাজীব। দোতলায় একটি টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম “স্মার্ট প্রিন্টিং”। আর নিচতলা খালি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাজধানীর রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়িতে ‘কসমি ফার্মা’ নামে একটি কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয় যে, কেমিক্যাল গোডাউনেই আগুনের সূত্রপাত। আর তাতে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভয়াবহ আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌনে ১২টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। পরে ইউনিট বাড়িয়ে ১০টি ঘটনাস্থলে কাজ করে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিয়ালবাড়ির একটি গার্মেন্টস ও সংলগ্ন কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মজুত থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।’
যেই গার্মেন্টসে আগুন লাগে সেই গার্মেন্টসে কাজ করছিলেন নাজমুল। কাটিং মাস্টার হিসেবে সেখানে কাজ করেন তিনি। এক বছর ধরে সেখানে চাকরি করেন নাজমুল। তার কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি চারতলায় কাজ করছিলাম। আমি যেখানে কাজ করছিলাম সেটার নাম আর এন ফ্যাশন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি একটা শব্দ শুনতে পাই। তখন জানালা খুলে দেখি সামনের কেমিক্যাল আর ওয়াশ ফ্যাক্টরির মাঝখান দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সেই আগুন আমাদের ফ্যাক্টরির দিকে আসছে। নিচে নামার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নাই। আমরা তখন চার তলায় আটকে পড়ি। পরে আমাদের পেছনের সাইডের জানালা ভেঙে একজন লোক আমাদের বের করে।’
নাজমুল আরও বলেন, ‘আমরা পাশের টিনশেডের ওপর পড়ি। চারতলায় আমরা সাতজন লোক ছিলাম আমরা বের হতে পেরেছি। তিনতলা লোক বের হতে পেরেছে কি-না আমি বলতে পারি না। এখন পর্যন্ত কোনও খবর জানি না।’
অন্য তলায় কতজন করে মানুষ ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি ফ্লোরে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন করে ছিল। এই বিল্ডিংটা ছিল পাঁচ তলা। পাঁচ তলার লোক সব বের হয়েছে। আর তিন তলা থেকে দুইজন বের হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। আর দোতালায় ছিল একটা প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, সেটার ছুটি ছিল। সেখানে ছয়জন লোক ছিল বলে শুনেছি। তারাও বের হয়ে গিয়েছে।’
ঘটনার সময় তার সঙ্গে একই ফ্লোরে যারা কাজ করছিলেন তাদের নামও জানান তিনি। নাজমুল বলেন, ‘আমিসহ আল মামুন, সোহেল, জাহিদ, নজরুল, ছিলাম। আর নতুন একটা ছেলে চাকরি নিয়েছে এক দিন আগে তার আর বুয়ার নাম আমার জানা নেই।’ উৎস: বাংলাট্রিবিউন।