শিরোনাম
◈ ডাকসুতে শি‌বির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন বড় ধর‌নের মাদ্রাসা, মন্তব্য ক‌রে বিপা‌কে ফজলুর রহমান, দায় নেবে না বিএনপি ◈ যুক্তরাষ্ট্রে আখতারের ওপর হামলা, সারজিসের হুঁশিয়ারি ◈ ঢাকায় অ্যামাজনের সেই সাইনবোর্ডের আড়ালে যা দেখা গেলো (ভিডিও) ◈ বেলজিয়ামের রানি এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ ◈ ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ তিন বছরের জন্য বিপিএলে যুক্ত হচ্ছে  ◈ নিউইয়র্কের বিমানবন্দরে আখতারের ওপর ডিম নিক্ষেপকারী আ.লীগ কর্মী আটক ◈ তরুণদের ঐক্য, সামাজিক ব্যবসা ও প্রযুক্তির শক্তিতেই বদলাবে বিশ্ব: প্রধান উপদেষ্টা ◈ এশিয়া কাপের ফাইনা‌লে খেলার এখনও সুযোগ রয়েছে পাকিস্তানের?  ◈ নিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতারের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেছেন আওয়ামী লীগের-নেতাকর্মীরা ◈ ফরা‌সি উইঙ্গার উসমান ডে‌ম্বে‌লে পে‌লেন ২০২৫ সা‌লের ব্যালন ডি’অর 

প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৪৩ দুপুর
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০৩ দুপুর

প্রতিবেদক : আর রিয়াজ

তরুণদের ঐক্য, সামাজিক ব্যবসা ও প্রযুক্তির শক্তিতেই বদলাবে বিশ্ব: প্রধান উপদেষ্টা

বাসস: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে তরুণদের ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘সোশ্যাল বিজনেস, ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের এক সাইডলাইন বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি তিন শূণ্যের এক পৃথিবীর কথা বলছি— শূণ্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূণ্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ (যাতে দারিদ্র্েযর অবসান ঘটে) এবং শূন্য বেকারত্ব (যা সবার সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে সম্ভব)।’

তিনি আরও বলেন, শূণ্য বর্জ্য (জিরো ওয়েস্ট) ধারণাটিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘জিরো ওয়েস্ট ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশ।

‘এটি কোনো কল্পনা নয়, ইতোমধ্যেই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।

‘এ কারণেই আমরা তরুণদের সর্বত্র ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছি—যেখানে প্রত্যেকে থ্রি-জিরো মানুষ হয়ে উঠতে পারে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, একজন থ্রি-জিরো মানুষ প্রতিশ্রুতি দেয় টেকসইভাবে জীবনযাপন করার, বর্জ্য কমিয়ে আনার এবং সামাজিক উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার। একই সঙ্গে তারা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদ বৈষম্য এবং বেকারত্বে কোনো অবদান না রাখার জন্য সচেষ্ট হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যত বেশি মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হবে, এই ক্লাবগুলো রূপ নেবে থ্রি-জিরো পরিবারে, থ্রি-জিরো গ্রামে, থ্রি-জিরো শহরে—এবং একদিন গড়ে উঠবে একটি থ্রি-জিরো বিশ্ব।

‘এটি একটি ছোট্ট পদক্ষেপ দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু একসাথে সেই পদক্ষেপগুলোই বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে।’

তিনি জানান, তিনি সবসময় বিশ্বাস করেছেন যে এই ধরনের ফোরাম কেবল বক্তৃতার জায়গা নয়—এটি অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'এই অস্থির সময়ে প্রকৃত রূপান্তর নিহিত আছে আমাদের ঐক্যে। যদি আমরা একসঙ্গে হাত মিলাই—সামাজিক ব্যবসার শক্তি, তরুণদের উদ্যম এবং প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাই—তবে জটিলতম বৈশ্বিক সংকটও আমরা সমাধান করতে পারব।’

‘আসুন আমরা এক নতুন তরঙ্গের স্থপতি হই—ন্যায়, টেকসই ও আশার ভিত্তিতে নির্মিত এক পৃথিবীর। এমন এক পৃথিবী, যেখানে আমাদের যৌথ স্বপ্ন মানবতার জন্য নতুন ভোরের সূচনা করবে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজকের পৃথিবী এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দাবানল পৃথিবীকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, বৈষম্য বাড়ছে, সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে। ন্যায়বিচার ও শান্তির জন্য সংগ্রাম আমাদের মানবিকতারই পরীক্ষা করছে।’

তিনি বলেন, এই সংকটগুলো আলাদা নয়, পরস্পরের সঙ্গে জড়িত সূতার মতো একে অপরকে টেনে পুরো ব্যবস্থাকেই নাড়িয়ে দিচ্ছে। ‘এটিকে মেরামত করার শক্তি অতীতে ছিল না, তা লুকিয়ে আছে আমাদের কল্পিত ভবিষ্যতে—এবং আজ এখানে আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব তাতেই,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুতি-সীমান্ত অতিক্রম করে অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করছে, খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে এবং অসংখ্য মানুষের জীবন ছিন্নভিন্ন করছে। এ পরিস্থিতিতে পুরনো ব্যবস্থায় সমাধান যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন নতুন কূটনীতি, গভীরতর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়নে সমষ্টিগত প্রতিশ্রুতি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশসহ বহু দেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে রয়েছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া, জলবায়ু বিপর্যয়ের ঘনঘন আঘাত সামলানো এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করা।

তিনি বলেন, ‘এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাজেট সংকোচন বা উন্নয়ন সহায়তা হ্রাস করা হবে বিপরীতমুখী পদক্ষেপ। বরং আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানো, কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ন্যায়সঙ্গত উত্তরণের নিশ্চয়তা দেওয়া জরুরি।’

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফা বেশি গুরুত্ব পায়, সেখানে এসব লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ব্যবস্থা পরিবর্তন, এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলা, যেখানে মানুষের কল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশ সুরক্ষা সম্পদের সঞ্চয়ের চেয়ে বড় অগ্রাধিকার পাবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই নতুন অর্থনীতির কেন্দ্রে রয়েছে সামাজিক ব্যবসা। এক ডলারের ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু হওয়া এই ধারণা আজ বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত নানা খাতে সামাজিক ব্যবসা প্রমাণ করছে যে বিশ্ব সমস্যার সমাধান করেও আর্থিকভাবে টিকে থাকা যায়।

‘এগুলোই প্রমাণ করছে—অন্য এক পৃথিবী সম্ভব। এমন এক পৃথিবী যেখানে বাণিজ্য হবে মানবতার সেবক, প্রবৃদ্ধি সবার জন্য এবং মুনাফার মাপকাঠি শুধু আর্থিক সাফল্য নয়, বরং মানুষের জীবনমানের উন্নতি, কমিউনিটিকে শক্তিশালী করা ও পৃথিবীর আরোগ্য,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, বর্তমান সভ্যতা সীমাহীন ভোগ, শোষণ ও সঞ্চয়ের ধ্বংসাত্মক পথে হাঁটছে, যা মানবজাতির টিকে থাকার ভিত্তি—পৃথিবীকেই ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এজন্য প্রয়োজন নতুন সভ্যতা, যা লোভ নয়, বরং মানবিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সমাধানের অঙ্গীকারে পরিচালিত হবে।

অধ্যাপক ইউনূস আরো বলেন, ‘এ নতুন সভ্যতার স্থপতি হবে তরুণ প্রজন্ম। তাদের স্বপ্ন সীমাহীন। আমি প্রায়ই বলি—যেখানে স্বপ্ন নেতৃত্ব দেয়, সেখানেই উদ্ভাবন জন্ম নেয়। যদি আমরা কল্পনা করতে পারি, তবে তা সম্ভব। যদি না পারি, তবে কখনোই হবে না।’

তিনি তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্য মোকাবিলায় সামাজিক ব্যবসায় নিজেদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতনার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘তরুণদের নেতৃত্ব দিতে হবে আজই, কাল নয়। বড় স্বপ্ন দেখো, তবে তা বাস্তবায়নে সচেতন পদক্ষেপ নাও।’

প্রযুক্তির প্রসঙ্গ তুলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্ব এখন এক নতুন প্রযুক্তিগত যুগের দ্বারপ্রান্তে—যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নানান উদ্ভাবন মানব অগ্রগতির ধারা পাল্টে দিচ্ছে।’

‘কিন্তু এর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে রয়েছে দায়িত্বও। প্রযুক্তি মানবতার জন্য আশীর্বাদ হবে নাকি অভিশাপ, তা নির্ধারণ করবে আজকের আমাদের সিদ্ধান্ত আর আগামী দিনের নেতৃত্বে আমাদের যে মূল্যবোধ আমরা বপন করব তার ওপর,’ বলেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রযুক্তির ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলতে হবে বিবেক দিয়ে—প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার মাধ্যমে। কিছু মানুষের জন্য নয়, বরং সবার জন্য।

তিনি বলেন, ‘আসুন নিশ্চিত করি, নতুন প্রযুক্তির যুগ হোক সহমর্মিতা, ন্যায়বিচার ও সমষ্টিগত অগ্রগতির যুগ।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়