উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে মাত্র ১৪ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়ান ইউসুফ রাত ৩টা ৫০ মিনিটে বার্ন ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।
মর্গের সামনে সায়ানের নিথর দেহের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন তার বাবা ইউসুফ। তিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেমিস্ট্রির সহকারী অধ্যাপক। তার স্ত্রীও একই কলেজের কেমিস্ট্রির লেকচারার। কিন্তু আজ সব পরিচয়ের ওপরে তিনি কেবল এক সন্তানহারা পিতা। কান্নায় গলা ভার হয়ে যাওয়া কাঁপা কাঁপা গলায় তিনি বললেন, ‘আমি আর এ দেশে থাকবো না। এদেশের পলিটিশিয়ানরা এদেশটাকে পলিউট করে ফেলছে। আমরা থাকবো না এই দেশে।’
মোহাম্মদ ইউসুফ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ক্যাম্পাসে ক্লাস নেন। আর ছেলে সায়ান দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।
গতকাল বিকেলে খবর পান, ছেলে দগ্ধ হয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যালে ভর্তি, সেখান থেকে আনা হয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিউতে। সায়ানের শরীরের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। রাত ৩টা ৫০ মিনিটে মারা যান সায়ান।
রাত গড়িয়ে সকাল হয়, কিন্তু বাবার কান্না থামেনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘এটা কোনো দেশ হলো বলেন। লোকালয়ের ওপর দিয়ে কেন একটি ট্রেনিং বিমান চলবে? বলেন। এ দেশে কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই। এ কারণে আমি আর এ দেশে থাকব না। আমার পুরো ফ্যামিলি এ দেশ থেকে চলে যাব।’
ছেলের স্মৃতিচারণ করে ফের কেঁদে ওঠেন এই বাবা। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, পুরো কলেজে ফার্স্ট হয়। আমার ছেলে সবচেয়ে স্মার্ট।... এদেশের পলিটিশিয়ানরা এদেশটাকে পলিউট করে ফেলছে। আমরা থাকব না এই দেশে।’
স্বজনরা জানান, এই শিক্ষক দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছিল সায়ান। ছোট মেয়েও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ত, তবে সে নিরাপদে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার দুপুর ১টার পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। সে সময় সেখানে বহু শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ব্যাপক, যার বেশিরভাগই স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী।