শিরোনাম
◈ অশ্রুতে ভাসছে উত্তরার আকাশ-বাতাস: নিহত বেড়ে ৩২, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক ◈ মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় দগ্ধদের চিকিৎসায় ঢাকায় পৌঁছেছেন সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ◈ ইংরেজিতে সচিবালয় বানান করতে পারলে তোমাকে ছেড়ে দেব, শিক্ষার্থীকে ডিসি মাসুদ (ভিডিও) ◈ মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ৬ অজ্ঞাত মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু ◈ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ নিহত শিক্ষার্থীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স উল্টে আহত স্বজনেরা ◈ ভারত থেকে আজই আসছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও সরঞ্জাম: বিবিসি বাংলা ◈ জাকেরের ফিফটি ও বোলারদের দাপটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ ◈ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আংশিক উৎপাদন বন্ধ, ফলে উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং ◈ পুত্রহারা মায়ের আহাজারি, ভাই হারানো বোনের কান্না—তৌকিরের জানাজায় শোকাবহ রাজশাহী

প্রকাশিত : ২২ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৪৯ রাত
আপডেট : ২৩ জুলাই, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

কুমিল্লার ১১টি আসনেই সক্রিয় বিএনপি, বসে নেই জামায়াতও,২টি আসনে আলোচনায় এনসিপি

শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা: দেশের সর্ববৃহৎ জেলার গুলোর মধ্যে অন্যতম কুমিল্লা। ১৭টি উপজেলা , ১৮টি থানা , ৮টি পৌরসভা ও ১টি সিটি কর্পোরেশন  নিয়ে এ জেলা গঠিত।  ২০০১ সাল পর্যন্ত এ জেলায় সংসদীয় আসন ১২টি থাকলেও  ২০০৮ সালে একটি কমিয়ে দেশের এই বৃহৎ জেলার সংসদীয় আসন করা হয় ১১টি।

স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। সেই থেকে অদ্য পর্যন্ত শুধু মাত্র ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী চৌদ্দগ্রাম সংসদীয় আসনে একবার নির্বাচিত হয়। এ ছাড়া জামায়াত কুমিল্লায় আর কখনো এমপি নির্বাচিত হতে পারেনি। এই আসন গুলোতে বিএনপি, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ , জাতীয়পার্টি কখনো বা স্বতন্ত্র বিজয়ী হয়ে আসছে। এবারও জামায়াত ইসলাম কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রামে খুবই শক্তিশালী প্রার্থী। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি আসনে এবার তারা জোর প্রচেষ্টা চালাতে প্রথম বারের মতো জেলায় আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে। 

অপরদিকে, দেশের অন্যতম বৃহত্ত ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি চাচ্ছে, যেহেতু এবার জামায়াতকে চৌদ্দগ্রাম ছেড়ে দেওয়া হবে না, তাই জেলার সকল আসনই ধানের শীষের বাক্সে নিয়ে আসার জন্য। 

অন্যদিকে, ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি চাচ্ছে, যে করেই হোক জেলার দেবিদ্বার ও মুরাদনগরের আসন দুটিতে জয়লাভ করতে। তিনটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। 

আগামী ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা জুড়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের অনুপস্থিতিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, বসে নেই বর্তমান সময়ের দ্বিতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল জামায়াত। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাঠ ২টি আসনে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নতুন রাজনৈতিক দল এনপিপিও। 
 
জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি বেশ চাঙা। প্রতিটি আসনেই বিএনপির শক্ত অবস্থান। তবে কয়েকটি উপজেলা বাদে অধিকাংশ উপজেলায়ই দলের মধ্যে আছে গ্রুপিং। কুমিল্লার প্রতিটি আসনেই এখন জোরেশোরে চলছে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে দলটির প্রার্থীর সংখ্যাও। তবে আওয়ামীলীগ বিহীন ভিন্ন প্রেক্ষাপটের এই নির্বাচনে কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বেশীর ভাগ আসনেই প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। যে কয়েকটা আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি সেখানে শুধু মাত্র যদি,কিন্তু বাকী আছে। 

আর জামায়াতের কুমিল্লার সব আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত এবং ২/১টি ছাড়া সবার নামই ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই প্রার্থীরা সবাই এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। 

আর সদ্য নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) এখনো নির্বাচন নিয়ে তাদের তোড়জোড় চোখে পড়েনি। তবে কুমিল্লা – ৪ দেবিদ্বারে অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ নিয়মিত এলাকায় আসছেন এবং নানা উন্নয়ন কাজে অংশ নিচ্ছেন। আর কুমিল্লা ৩ মুরাদনগরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিরতী দিয়ে এলাকায় আসলেও সেখানে বিএনপির সাথে তার রয়েছে সাপে নেউলে সম্পর্ক। 

কুমিল্লা–১ (দাউদকান্দি ও তিতাস) :
 ২০১৮ সালে কুমিল্লা–১ ও কুমিল্লা–২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বর্তমানে শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও তার ছেলে  খন্দকার মারুফ হোসেন। এই আসনে তাদের পিতা পুত্রকে নিয়ে কোন দ্বন্ধ কিংবা গ্রুপিং নেই।  

এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী  দাউদকান্দি উপজেলা জামায়াতের আমির মনিরুজ্জামান বাহলুল। এখানে চোখে পড়ার মতো কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই এনসিপির। ইসলামী আন্দোলন মাঠে নিজেদের অবস্থান তৈরিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা জামাল হোসেন । 

কুমিল্লা–২ (হোমনা ও মেঘনা)
এই আসনে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান বেশ শক্ত। পাশাপাশি মাঠে সক্রিয় জামায়াতও। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া নিয়মিত সভা–সমাবেশ করছেন। আসনটিতে সেলিম ভূঁইয়ার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত হলেও এখানে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন, প্রয়াত এমপি মন্ত্রী এম কে আনোয়ারের ছেলে মাহমুদ আনোয়ার (কাইজার), খালেদা জিয়ারসাবেক  এপিএস–২ আবদুল মতিন ও হোমনা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান মোল্লা। 

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য নাজিম উদ্দিন মোল্লা তাদের প্রার্থী। এনসিপির তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই।

কুমিল্লা–৩ (মুরাদনগর)
আসনটি সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কারণে দেশময় বেশ আলোচনায়। এ আলোচনা মূলত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও ৫ বারের সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয়  উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে ঘিরে। গুঞ্জন আছে, এ আসন থেকে এনসিপির হয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভোটে লড়তে পারেন।

রাজনৈতিক কারণে কায়কোবাদকে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে ফেরা কায়কোবাদের নেতৃত্বে মুরাদনগরে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে বিএনপি। তিনি নিয়মিত সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। জামায়াত দলটির কুমিল্লা উত্তর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হাকিম সোহেলকে প্রার্থী বাছাই করেছে।

তবে এখানে যদি বিএনপির সাথে এনসিপির জোট হয় তাহলে দলের শতভাগ নিশ্চিত বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রার্থী কায়কোবাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। 

কুমিল্লা–৪ (দেবিদ্বার)
এই আসনে জোড় আলোচনায় আছে এনসিপি। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর বাড়ি  এই আসনে। তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত বলা চলে। তিনি নিয়মিত এলাকায় সভা–সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ ২০০১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি। বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও এই আসনে দলের মধ্যে অন্তর্কোন্দল ও গ্রুপিং আছে। বর্তমানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি, মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির ছেলে ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিজভীউল আহসান মুন্সি ও রাজধানীর গুলশান থানা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান।

এক সময়ের দাপুটে এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি এখন শারিরিক ভাবে বেশ অসুস্থ। সুতরাং দল হিসেবে এখানে বিএনপি বেশ শক্তিশালী হলেও প্রর্থী হিসেবে এখনো কেউ সেভাবে উঠে আসতে পারেনি বলে জানা গেছে। যদি এখানে এনসিপির সাথে বিএনপির জোট হয় তাহলে নিশ্চিত আসনটি পাবে হাসনাত আবদুল্লাহ । আর বিএনপি যদি নির্বাচন করে তাহলে এ এফ এম তারেক মুন্সি ও  রিজভীউল আহসান মুন্সির যে কোন একজন পেয়ে যেতে পারেন ধানের শীষ প্রতীক। এ আসনে জামায়াতের কুমিল্লা উত্তর জেলার সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম (শহীদ) দলের প্রার্থী হচ্ছেন। 

কুমিল্লা–৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া)
সর্বশেষ ২০০১ সালে এ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত নেতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস। বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও এই আসনে দলের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। নির্বাচনের আগে কোন্দল নিরসন করা না গেলে ভোটে প্রভাব পড়তে পারে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম উদ্দন, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম মিজানুর রহমান ও ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেনকে এ আসনে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী কে হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে একেবারে শেষ পর্যন্ত। 
 
কুমিল্লা–৬ (সদর)
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা–৬ আসনটি। সর্বশেষ ২০০১ সালে বিএনপির প্রয়াত কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীর প্রতীক জয় পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে এই আসনে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমিন–উর রশিদ ইয়াছিনের কাছে। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি আমিন–উর রশিদ ইয়াছিনের ওপর আস্থা রাখে। আগামী নির্বাচনেও বিএনপি ইয়াছিনের ওপর আস্থা রাখবে, এমনটাই মনে করেন দলের নেতা–কর্মীরা।

তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর দলটাকে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আগলে রেখেছি। তখন কিন্তু কাউকে মাঠে দেখিনি।’তবে কেন্দ্র সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, এই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হাজী আমিন–উর রশিদ ইয়াছিন- এটা প্রায় নিশ্চিত। এদিকে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জানিয়েছেন, ‘সংসদ বা সিটি নির্বাচন, যেটা আগে হবে, আমি সেটাতে প্রার্থী হব। দল আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমি নির্বাচন করব। কারণ, দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি দলকে ছেড়ে যাইনি।’

কুমিল্লা সদর আসনে জামায়াত এরই মধ্যে সংগঠনের মহানগর শাখার আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। কুমিল্লা মহানগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎপরতা থাকলেও এনসিপির সেভাবে তৎপরতা এখনো শুরু হয়নি। ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা এখানে সক্রিয়।

কুমিল্লা–৭ (চান্দিনা)
কুমিল্লা জেলার মধ্যে শুধু চান্দিনায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) শক্ত অবস্থান আছে। দলটির কেন্দ্রীয় মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ওই আসনে সর্বশেষ ২০০১ সালে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালেও বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। বর্তমানে রেদোয়ান আহমেদ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল আলম ওরফে শাওনের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন আতিকুল আলম ওরফে শাওন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ–আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (জাহিন), জাতীয়তাবাদী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। এই আসনে জামায়াত দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোশাররফ হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে।

এখানে বিএনপির সাথে এলডিপির জোট হলে আসনটি এলডিপি পাবে এটা প্রায় নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।
 
কুমিল্লা–৮ (বরুড়া)
বরুড়ায় বর্তমানে বিএনপির বেশ শক্ত অবস্থান আছে। আগামী নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের (সুমন) এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবি দলটির নেতা–কর্মীদের। স্থানীয় বিএনপিতে দৃশ্যমান কোনো গ্রুপিং নেই। তবে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুরতাজুল করিম এ আসনে মনোনয়ন চান বলে জানা গেছে। কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলালকে এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

কুমিল্লা–৯ (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ)
লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে চলছে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং। এই আসনে বিএনপির ২০১৮ সালে সর্বশেষ মনোনয়ন পেয়েছিলেন প্রয়াত সাবেক এমপি কর্নেল আনোয়ারুল আজিম। আজিম সাহেব মারা যাওয়ার পর দৃশ্যত মনোনয়ন দৌঁড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম। এছাড়াও দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন আজিম কণ্যা দোলা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও বিজিএমইএর পরিচালক রশিদ আহমদ হোসাইনী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সফিকুর রহমান। 

এখানে বিএনপির দলীয় ভাবে গ্রুপিং , দ্বন্দ্ব রয়েছে। কর্নেল আজিম সাহেব মারা গেলেও তার কর্মী সমর্থকরা এখন তার কণ্যাকে সামনে রেখে আগাতে চান। ইতিমধ্যে লাকসামে একটা বড় শো ডাউনও করেছে দোলা আজিম।

এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সেক্রেটারি সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্টসহ কয়েকটি দল সক্রিয় থাকলেও এখনো এনসিপির তৎপরতা শুরু হয়নি।

কুমিল্লা–১০ (নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই)
সর্বশেষ ২০১৮ সালে বর্তমান কুমিল্লা–১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা  মনিরুল হক চৌধুরী। এবার তিনি ও আবদুল গফুর ভূঁইয়া ছাড়া এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত ও এনসিপিও বেশ সক্রিয়। এরই মধ্যে জামায়াত তাঁদের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা ইয়াসিন আরাফাতের নাম ঘোষণা করেছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন গণসংযোগ করছেন।

তবে এখানে আসন বিন্যাস অপরিবর্তিত থাকলে মনিরুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানা গেছে। 

কুমিল্লা–১১ (চৌদ্দগ্রাম)
চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচনে চৌদ্দগ্রামের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সর্বশেষ ২০১৮ সালেও বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। সবার কাছে চৌদ্দগ্রাম জামায়াতের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত হলেও এবার রাজনীতির মাঠের চিত্রটা ভিন্ন। কারণ, এবার চৌদ্দগ্রামে জামায়াতের প্রতিপক্ষ বিএনপি। এরপরও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা আত্মবিশ্বাসী নিজেদের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে।
 
জামায়াতের একক প্রার্থী আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হলেও এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলার আহ্বায়ক কামরুল হুদা, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কাদের চৌধুরী ওরফে নোবেল, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাজী নাসিমুল হক।
তবে বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিএনপি যদি এবার চৌদ্দগ্রামে একক নির্বাচন করে সেক্ষেত্রে উপজেলা  বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। 

কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, বিএনপি অনেক বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্ব ও মনোনয়নের প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিটি আসনেই দল এখন চাঙা। এরই মধ্যে অধিকাংশ উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সম্মেলন শেষ হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় কুমিল্লার ১১টি আসনেই বিএনপি জয়লাভ করবে বলে তিনি আশা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়