মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন আজ (২৮ জুন)। ১৯৪০ সালের এই দিনে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর জন্মদিন ‘সামাজিক ব্যবসা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পালন হয়ে আসছে।
তবে এবার সরকারি পর্যায়ে জন্মদিন উদযাপনের কোনো আয়োজন রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা এবং গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে, দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ৮ আগস্ট তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর সরকার এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও জনপ্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছে।
ড. ইউনূসের শিক্ষা ও কর্মজীবন:
শিক্ষাজীবনে ড. ইউনূস ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ৩৯ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করেন। ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় যান এবং ১৯৭১ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে টেনেসির মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সমর্থনে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনা করেন।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ তাঁকে গ্রামীণ অর্থনীতির দিকে মনোযোগী করে তোলে। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জোবরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে পরে ১৯৮৩ সালে তা ‘গ্রামীণ ব্যাংক’-এ রূপান্তরিত হয়। এই মডেল বর্তমানে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে অনুসৃত হচ্ছে।
ড. ইউনূস স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রদান করেন।
ব্যক্তিজীবনে:
ড. ইউনূসের পিতা ছিলেন দুলা মিঞা সওদাগর এবং মাতা সুফিয়া খাতুন। তাঁর সহধর্মিণী অধ্যাপক ড. আফরোজী ইউনূস। তাঁদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার জন্মদিন উপলক্ষে প্রেস সচিব শফিকুল আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে লেখেন, “শুভ জন্মদিন, স্যার। আপনার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার জীবনের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরাও জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।