সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে ৩০–৪০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনিয়মিতভাবে বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে একটি জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট রোগ (lifestyle-related disease) হিসেবে দেখছেন, যেখানে অনিয়মিত খাবার, কম শারীরিক কার্যকলাপ ও অন্যান্য আধুনিক অভ্যাসের বড় ভূমিকা রয়েছে।
বৈজ্ঞানিক কারণগুলো কী বলে?
ইনসুলিন রেজিস্টেন্স:
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মূল কারণ হচ্ছে দেহের কোষগুলো ইনসুলিন-এর প্রতি সংবেদনশীলতা হারানো—যা রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থাকে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স বলা হয়।
সেডেনটারি জীবনযাপন:
স্ক্রিন-টাইম, অফিসের কাজ ও কম শারীরিক কার্যকলাপ ইন্সুলিন কার্যকারিতা কমিয়ে শরীরে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটায়, ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ওজন বৃদ্ধি:
প্রসেসড ফুড, অতিরিক্ত মিষ্টি ও ফাস্টফুড গ্রহণ এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে শরীর চর্বি জমায়, যা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স বাড়ায়। এর ফলে শরীরের গ্লুকোজ হরমোন নিয়ন্ত্রণে বাধা পড়ে।
ঘুমের বিঘ্ন ও চাপ:
নিয়মিত কম ঘুম ও দ্রুত জীবনযাত্রা শরীরের মেটাবলিজম ও হরমোন নিয়ন্ত্রণকে বিঘ্নিত করে, এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়।
জিনেটিক প্রভাব ও পরিবেশ:
বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ানদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে জিনেটিক ও উপকারী পরিবেশগত প্রভাবও অন্তর্ভুক্ত।
গবেষণা কি বলছে?
বিশ্বব্যাপী গবেষণা দেখাচ্ছে, ৩০-এর নিচের বয়সেও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হার দ্রুত বাড়ছে এবং এটি এখন শুধু “বয়স্কদের রোগ” নয়। একটি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে ২০–৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হার কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের মতো শহুরে পরিবেশে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, কম শারীরিক কার্যকলাপ ও আধুনিক জীবনযাত্রা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।
কিভাবে এড়িয়ে চলবেন?
নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন:
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হালকা বা মাঝারি ব্যায়াম—যেমন brisk হাঁটা, সাইক্লিং বা যোগ—রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
পশ্চিমা/প্রসেসড খাবারের বদলে শাকসবজি, ভাজি কম, সম্পূর্ণ শস্য ও কম চিনিযুক্ত খাবার বেছে নিন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ:
পেটের চারপাশের চর্বি কমাতে সাহায্য করলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:
প্রতিদিন নিয়মিত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম এবং স্ট্রেস-ম্যানেজমেন্ট—যেমন মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম—রক্তে শর্করার স্থিতিশীল রাখে।
নিয়মিত স্ক্রিনিং:
প্রতি বছর গ্লুকোজ পরীক্ষা করিয়ে নিলে প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস শুরু হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
ডায়াবেটিস এখন আর অপেক্ষা করে না — এটি দ্রুতগতিতে যুবক প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরেও প্রবেশ করছে। বিজ্ঞান বলছে জীবনযাত্রা বদলালে আমরা এই “নিঃশব্দ ঘাতক” অনেকাংশে প্রতিরোধ করতে পারি। সচেতনতা ও স্থায়ী স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আজই শুরু করুন।
সূত্র: ইনকিলাব