কালোজিরা নামক ছোট এই জিনিস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ। এটি যেন এক প্রাকৃতিক উপহার। বহু বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কালোজিরা শুধু মসলা হিসেবেই নয়, ওষধি গুণের জন্যও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আধুনিক গবেষণাতেও কালোজিরার উপকারিতা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।
কালোজিরাকে ইংরেজিতে ব্ল্যাক সিড বা নাইজেলা সিডস বলা হয়। এতে রয়েছে নানা ধরনের বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কালোজিরার বিরাট গুণ
কালোজিরার অন্যতম বড় গুণ হলো এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। গবেষণায় দেখা গেছে, কালোজিরার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে বলে পরীক্ষাগারে প্রমাণ মিলেছে।
নিয়মিত ও সঠিক পরিমাণে কালোজিরা খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমতে পারে।
কালোজিরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে থাকা থাইমোকুইনোন, কারভাক্রল, টি-অ্যানিথল ও টারপিনিওলের মতো যৌগ শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল কোষের ক্ষতি করে এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কালোজিরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে শরীরকে ভেতর থেকে সুরক্ষিত করতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধেও কালোজিরা নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, কালোজিরার কিছু উপাদান নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে এবং ক্ষতিকর কোষ ধ্বংসে সাহায্য করতে পারে। যদিও মানুষের ওপর এর প্রভাব নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি, তবে প্রাথমিক ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কালোজিরা ভবিষ্যতে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে।
হৃদ্স্বাস্থ্যের জন্যও কালোজিরা উপকারী বলে মনে করা হয়।
নিয়মিত কালোজিরা খেলে মোট কোলেস্টেরল, খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমতে পারে। এর ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং রক্তনালির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কোলেস্টেরলের রোগীদের জন্য কালোজিরা একটি প্রাকৃতিক সহায়ক উপাদান।
কালোজিরার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো এর প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা। শরীরের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ অনেক রোগের মূল কারণ। কালোজিরার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান শরীরের ভেতরের প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে জয়েন্টের ব্যথা, পেশির অস্বস্তি কিংবা হালকা ইনফ্ল্যামেটরি সমস্যায় উপকার মিলতে পারে।
মেটাবলিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও কালোজিরার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কালোজিরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস ও ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে এটি সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের বিপাকক্রিয়া আরো ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, কালোজিরা শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, এটি শরীরের ভেতর থেকেও সুস্থতা গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। তবে যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদানের মতোই কালোজিরা নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। অবশ্য দীর্ঘদিন কোনো রোগ থাকলে বা ওষুধ চললে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস