টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিংক, এক্সএআই ও দ্য বোরিং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মাস্ককে ঘিরে রহস্যের কমতি নেই। এই বিশাল কর্মভারের মাঝেও তিনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি চালু করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুলছেন, আবার কখনো হয়ে উঠছেন রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। তবে সবকিছু তিনি সামলান কীভাবে, নিয়ে মনে প্রশ্ন আসতেই পারে।
এর উত্তর খুঁজতে গেলে বারবার উঠে আসে একটি সহজ অথচ শক্তিশালী কৌশল—‘ফাইভ মিনিট রুল’ বা ‘৫ মিনিটের নিয়ম’।
‘ফাইভ মিনিট রুল’
ইলন মাস্কের সময় ব্যবস্থাপনার গোপন রহস্য হলো তাঁর দিনটিকে পাঁচ মিনিটের ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নেওয়া। অধিকাংশ মানুষ যেখানে ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টার ভিত্তিতে কাজ পরিকল্পনা করে, মাস্ক সেখানে প্রতিটি পাঁচ মিনিটের ব্লকে নির্দিষ্ট একটি কাজ বরাদ্দ করেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—
বিনিয়োগকারীদের ই-মেইলের উত্তর দেওয়া।
রকেট উৎক্ষেপণের পরিসংখ্যান দেখা।
টেসলা প্রকৌশল প্রধানকে ফোন করা।
এক্স বিজ্ঞাপন ড্যাশবোর্ড পর্যবেক্ষণ।
দুপুরের খাবার খাওয়া।
এই কৌশলে সময়ের একটুও অপচয় হয় না, মনোযোগ ছড়ায় না, আর প্রতিটি মুহূর্তে লক্ষ্য থাকে স্পষ্ট।
মাস্ক প্রতিটি কাজের জন্য মাত্র পাঁচ মিনিট রাখেন যে কারণে—
বর্তমান যুগে মনোযোগের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আকস্মিক আলোচনা, আর অবসাদ। পাঁচ মিনিটের এই নিয়ম কাজে লাগিয়ে মাস্ক নিজেকে সব সময় উজ্জীবিত ও মনোযোগী রাখেন।
এর সুফলগুলো হলো—
সময় অপচয় রোধ: মাত্র পাঁচ মিনিট সময় থাকলে গড়িমসি বা দীর্ঘ চিন্তায় সময় নষ্ট হওয়ার সুযোগ কমে।
চূড়ান্ত মনোযোগ: ছোট সময়ের চাপ আপনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে দেয়।
সিদ্ধান্ত ক্লান্তি কমে: প্রতিটি কাজ আগে থেকেই নির্ধারিত, তাই কী করবেন, তা ভাবতে হয় না।
অবিরাম গতি: ফ্রেশ থাকার জন্য কাজের ধরন বদলানো হয় বারবার।
দ্রুত ফলাফল: স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করা সহজ হয়।
ইলন মাস্ক প্রতিদিন এই নিয়ম পালন করেন যেভাবে—
বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও জীবনী থেকে জানা যায়, মাস্কের দিন শুরু হয় সকাল ৭টায়—ব্যক্তিগত যত্ন, ই-মেইল দেখা ও ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে পাঁচ মিনিটভিত্তিক সেশন—যার মধ্যে থাকে ইঞ্জিনিয়ারিং মিটিং, প্রোডাক্ট ডিজাইন, লজিস্টিক আপডেট কিংবা সমস্যা সমাধান।
মাঝেমধ্যে তিনি এক অফিস থেকে আরেক অফিসে যান ব্যক্তিগত বিমানে, যেখানে চলতে থাকে ফোন কল কিংবা ডেটা বিশ্লেষণ। দুপুরের খাবারও দ্রুত শেষ করেন—অনেক সময় কাজ করতে করেই খেয়ে নেন।
বিকেল ও সন্ধ্যায় আবার শুরু হয় পাঁচ মিনিটের ব্লকে ভাগ করা কাজ—যেমন এক্স-এর কোডিং রিভিউ, নিউরালিংকের গবেষণা, স্পেসএক্সের লঞ্চ পরিকল্পনা।
পারিবারিক সময় ও বিশ্রামও মাস্ক পূর্বনির্ধারিত সময়সূচিতে রাখেন।
এই নিয়ম আপনার জীবনে যেভাবে কাজে লাগবে
১. কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন। দিনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বেছে নিন—যতটা সম্ভব নির্দিষ্ট করে। যেমন—‘কোনো প্রজেক্টে নিয়ে কাজ করব’–না বলে কর্মপরিকল্পনায় লিখুন ‘প্রস্তাবনার ৩০০ শব্দ লিখব’।
২. কাজগুলো ৫ মিনিটের ছোট ছোট ধাপে ভাগ করুন। যেমন—‘ই-মেইল ড্রাফট লেখা’, ‘এক্সেল কলাম রিভিউ, ‘৩টি স্লাইডের খসড়া তৈরি।
৩. টাইমার ব্যবহার করুন। মোবাইল, স্মার্টওয়াচের অ্যাপে পাঁচ মিনিট সেট করে কাজ করুন।
৪. বিরতির পরিকল্পনাও রাখুন। মাঝেমধ্যে ৫ মিনিটের বিশ্রামও রাখুন—ক্যাজুয়াল সোশ্যাল মিডিয়া চেক বা কফি বিরতির জন্য। এতে ক্লান্তি আসে না।
৫. নিয়মিত পর্যালোচনা ও পরিবর্তন আনুন। প্রথম দিনেই পারদর্শী হওয়া জরুরি নয়। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নিয়মটি সামঞ্জস্য করুন।
এই নিয়মের সুফল হলো—
সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
মনোযোগ বৃদ্ধি হবে।
কাজ দ্রুত শেষ করার অভ্যাস তৈরি হবে।
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের দিকে দৃঢ় অগ্রগতি।
সবচেয়ে বড় কথা, সময়কে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে দেখতে শিখবেন।