শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ২৫ মে, ২০২৩, ১২:২২ দুপুর
আপডেট : ২৫ মে, ২০২৩, ১২:২৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বাস্থ্যখাতের পদ্মা সেতু ‘বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড’ হাসপাতাল : ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ

ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] আমাদের অর্থনীতি : সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কতোখানি সেবা দিতে পারছে এখন হাসপাতালটি। রোগীদের রেসপন্স কেমন?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালÑআনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু এখনো পূর্ণদ্যোমে কার্যক্রম শুরু হয়নি। কারণ করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমরা ডায়ালাইসিস ও এনেস্থেশিয়া মেশিন-সহ সকল যন্ত্রপাতি গত বছরের ডিসেম্বরে পাইনি। তাতে হাসপাতাল কার্যক্রম আটকে থাকেনি। 

আংশিক হলেও হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেছি। মানুষকে সেবা দিচ্ছি। নিয়মানুসারে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা কিছু জনবল নিয়োগ দিয়েছি ও কিছু লোকজনকে কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ৩৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে আমরা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। 

এমআরআই, এক্স-রে, সিটিস্ক্যান এবং রক্তের সকল পরীক্ষাসহ টেস্ট করেছি ২২ হাজারের বেশি রোগীর। হাসপাতালটিতে প্রায় ১ হাজার ৭শ’রও বেশি লোকবল দরকার। চিফ কন্সালট্যান্ট, সিনিয়র কন্সালট্যান্টÑ যারা প্রফেসর তারা সিনিয়র কন্সালট্যান্ট এবং সহকারী প্রফেসরেরা কন্সালট্যান্টের দায়িত্ব পাবেন। বাজেটেরিয়াল এলোকেশন আমাদের হাতে এসে না পৌঁছানো পর্যন্ত লোকবল নিয়োগ দিতে পারবো না। সরকারের টাকা আসার সঙ্গে সঙ্গেই পরবর্তী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে কন্সালট্যান্ট নিয়োগ হবে। 

[৩] পোস্ট গ্রাজুয়েট করা কোনো মেডিকেল অফিসার যোগদান করতে চাইলে আমরা তাকে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়োগের ব্যবস্থা করবো। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যারা আছেন, তারা চাইলে ডেপুটেশনও নিতে পারেন এবং নিয়োগের মাধ্যেমেও ওখানে যেতে পারেন। কীভাবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনা করবো, তার জন্য একটা সংবিধি তৈরি করেছি এবং একটা পরিচালনা পর্ষদও গঠন করেছি, যার চিফ আমি। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনায় পরিচালক থাকবেন, একইসঙ্গে প্রো-ভিসিরাও থাকবেন। সিন্ডিকেট মেম্বাররা থাকবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ডিজি অফিসের প্রতিনিধিও থাকবেন। নিয়োগের সংখ্যা, ধরন, কার্যবিধি ইত্যাদি এই কমিটি নির্ধারণ করবেন। 

[৪] হাসপাতালের পুরোপুরি কার্যক্রম চালু হবে কবে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : মন্ত্রণালয় এবং পিএম অফিসের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া আর আমরা এগোতে পারছি না। যন্ত্র না আসার ব্যর্থতার দায়ভার কার? ঠিক ব্যর্থতা বলবো না। কিছু যুক্তিসংগত কারণেই বিলম্ব হচ্ছে, যা আগেই বলেছি। বিষয়টি পিডি সাহেব দেখছেন। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সবকিছু চলে আসবে। এর মধ্যে যদি নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারি, আংশিক হলেও ১ জুলাই থেকে আমরা কিছু কার্যক্রম, অন্তত ২৫ শতাংশ কাজ শুরু করতে পারবো এবং ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারিতে ৫০ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের ১ জুলাই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের শতভাগ কার্যক্রম শুরু করতে পারবো আশা করি। এর আগে পারলেও করবো। তবে তার আগে এই জুলাইয়ে অবশ্যই কিছু কাজ শুরু করবো।

[৫] আমি একটা নতুন ফর্মুলা দিয়েছি, ‘১০দ্ধ২০’Ñ যার অর্থ হচ্ছে একজন বিশেষজ্ঞ ২০ জনের বেশি রোগী দেখবেন না এবং ১০ মিনিটের কম সময় দেখবেন না। ইনভেস্টিগেশনে কোনো রোগী এসে ফিরে যাবে না। এছাড়াও বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রত্যেকটা রোগীর সঙ্গে ভালো আচরণ ও ইভেস্টিগেশন সুবিধাসহ সার্বিক সেবায় তারা খুশি। ১ জুলাইয়ের মধ্যে ইনডোর চালু হয়ে গেলে আমরা আরও বর্ধিত সেবা দিতে পারবো, যার মধ্যে থাকবে ডায়ালাইসিস, ওটি, মা ও শিশু, এক্সিডেন্ট ও ইমারজেন্সি, কিডনি, লিভার, ইউরোলজি, আইইএনটি, ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি, রোবোটিক সার্জারি এবং বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট। ইতোমধ্যে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করে দেশে আমরা যে সুনাম অর্জন করেছি, আশা করি বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ও রোবোটিক সার্জারি চালু করতে পারলে  আমরা এদেশের মানুষের আশা পূরণ করতে সক্ষম হবো এবং এটা আমি ছয় মাসের মধ্যে করবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

[৬] বিশ্বমানের হাসপাতাল। অথচ এখনো মানুষ জানে না। প্রচার-প্রচারণা নেই কেন? মানুষকে জানানোর কোনো উদ্যোগ কি আছে আপনাদের?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : ১ জুলাই ২৫ শতাংশ সেবা কার্যক্রম চালু করার আগে ১৫ জুন থেকে আমরা মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নেবো। তা না করলে দেশের মানুষ জানতে পারবে না আমাদের সেবা সম্পর্কে। এখন যারা হাসপাতালটির সেবা গ্রহণ করছেন তাদের অনেকেই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যারা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতেনÑ তাদের অনেকেও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন। এই অল্প সময়েই হয়তো মানুষের প্রত্যাশা কিছুটা পূরণ করতে পারছি। তবে ১ জুলাইয়ের পরে আমরা যদি পুরোদমে চালু করতে পারি, তাহলে দেশের একমাত্র পেডিয়াট্রিক ইন্টেসিভ কেয়ার ইউনিট এখানে হবে। এনআইসিইউ বা নিওনেটাল ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট অলরেডি এখানে আছে। ডায়ালাইসিস মেশিন যদি ৬৪টা চালু হয়, আমরা অনেক কিডনি রোগীকে হেল্প করতে পারবো। লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট আরও বাড়াতে পারবো। সবকিছু মিলিয়ে মানুষের প্রত্যাশা তো পূরণ করবোই, দেশের অর্থও দেশে থাকবেÑ এটাই আমার চাওয়া।

[৭] সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইমার্জেন্সির মধ্যে আমরা যেটা চালু করেছি সেটা হলো ক্যাথলার। নিউরো ক্যাথলার আমাদের এখানে আছে, আমরা স্ট্রোকের চিকিৎসা দিচ্ছি। আসলে সবকিছু বাস্তবায়িত হতে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিট উদ্ভোধনের ছয় মাস পরেও তারা চালু করতে পারেনি, যদিও পরবর্তী সময়ে হয়েছে। আমাদের লোকবল নিতে হবে, তার জন্য অর্থ লাগবে। যেকোনো চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলে তো আমরা এগোতে পারবো না। আমার মনে হয়, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা টাকা পেয়ে গেলে ইনশা আল্লাহ্ ১ জুলাই থেকে আমরা চালু করতে পারবো। 

[৮] স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কেমন হবে? বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় কি সাশ্রয়ী হবে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : বিদেশের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী হবে। যে রোগী বিদেশে ১০ লাখ টাকা খরচ করতেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে খরচ হবে মাত্র ২ লাখ টাকা। যেমন বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ভারতে গিয়ে করতে ২২ লাখ টাকা খরচ হয়, আমাদের এখানে ২ লাখেই হয়ে যাবে। হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট যেটা মানুষ সাধারণত তুরস্কে গিয়ে করতে অন্তত ২০ লাখ খরচ করে, আমাদের এখানে ২ লাখেই হবে। চিকিৎসার জন্য মানুষ যেন বাইরে না যায় সেই ব্যবস্থাই হবে। বর্তমান বিএসএমএমইউ হাসপাতালের তুলনায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসা একটু এক্সপেন্সিভ হবে। আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা ভেবেছি, বিএসএমএমইউ (পিজি হাসপাতাল) ১০০ টাকার চিকিৎসা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ২০০ টাকা লাগবে। তবে কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়, আমাদের কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে।  দেশের টাকা দেশে রাখার ব্যাপারে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি। কিছুটা সময় হয়তো লাগছে তবে উই উইল টেইক অফ।

[৯] বিদেশে আর রোগী যাবে না। ডলার বাঁচবে। এমন আশার কথা শুনিয়েছিলেন। এখনকার বাস্তবতা কী। পারছেন কি রোগীদের বিদেশমুখিতা ঠেকাতে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : কিছু লোক নিউ মার্কেটে সব পাবে, তারপরও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ছাড়া বিয়ের বাজার করবে না। ভারতের নিউমার্কেটে একটু যাবে, এদের আমরা ঠেকাতে পারবো না। আমার এখানে একবার কর্নিয়ার এক বিদেশি রোগী এসেছিলেন, যার চিকিৎসা করতে আমাদের সময় লাগে মাত্র এক মিনিট, কিন্তু তিনি চার্টার্ড ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে গেছেন। আমাদের বরিশালের মেয়রের কিন্তু পিউপিল ডাইলেটেড, সে অবস্থাতেও তিনি সিঙ্গাপুরে গেছেন, অনেক টাকা খরচ করেছেন। আমার যেই কথাটা, আজকে ক্যান্সারের জন্য যারা বাইরে যান, তারা কিন্তু তাদের পরিবারের জন্য কিছু রেখে যেতে পারেন না, তার সন্তানেরা পরবর্তী সময়ে অনেক কষ্ট করে, যেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা আমাদের দেশেই করা সম্ভব। উদাহরণ হিসাবে করোনার বিগত দুই বছরকে টানতে পারেন যখন আমাদের দেশ থেকে  কেউ  চিকিৎসার জন্য বাইরে যাননি। তাদের চিকিৎসা কে করেছে? আমরাই করেছি। কিছু লোক যেমন বিয়ের বাজার করতে বিদেশে যায়, তেমন চিকিৎসার জন্যও যায়। একটু বিদেশ ঘুরতে যায়, সঙ্গে চেক-আপটাও করে আসে।
 
[১০] ] চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে একটা আস্থার সংকট বিদ্যমান। ফলে যোগ্য চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও অনেক রোগী বিদেশে চলে যান। এর সঙ্গে আপনি একমত? চিকিৎসক ও রোগীদের আস্থার সংকট কাটানোর উপায় বা উদ্যোগ কী হতে পারে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : ধরুন আমি কোনো একজন রোগীকে যে ওষুধ দিয়েছি, তাতে তার ৭ দিনে সুস্থ হওয়ার কথা, কিন্তু তিনি তিনদিন ওষুধ খেয়েই ভাবলেন এই ওষুধে কোনো কাজ হচ্ছে না, একটু দেখিয়ে আসি। এইভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যায়। অধৈর্য ও আস্থাহীনতা। এক্ষেত্রে প্রচারণা ও সচেতনতা এবং আমাদের চিকিৎসকদের কাউন্সিলিং বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন আমার কাছে যদি কোনো অন্ধ রোগী আসেন এবং আমি বুঝি তার চোখ আর ভালো হবে না, আমি তাকে পরামর্শ দিই বিদেশে টাকা খরচ না করতে, তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি যে তিনি অহেতুক টাকা খরচ করলে তার সন্তানেরা বঞ্চিত হবেন। ব্রেইল দিয়ে চলার পরামর্শ দিই। ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও একই। আমার দেশে যে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে বিদেশে এর অতিরিক্ত কিছু নেই, ভারতেও নেই। রোবোটিক সার্জারি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, এটা যদি ছয় মাসের মধ্যে চালু করতে পারি, তাহলে অনেক রোগীকে সেবা দিতে পারবো এবং একইসঙ্গে অনেক ডলার সাশ্রয় করতে পারবো। তবে পূর্বশর্ত হচ্ছে আমাদের আগে আপনাদের (মিডিয়া) মাধ্যমে দেশের মানুষকে বুঝাতে হবে যে বিদেশে গিয়ে অতিরিক্ত লাভ কিছু হবে না, দেশেই মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। 

[১১] দ্বিতীয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি কেমন। কবে কাজ শুরু হবে? অর্থায়ন কে করছে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি উদ্যোগ নেওয়ার কারণেই কোরিয়ান সরকার ও এক্সিম ব্যাংক বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হসপিটালে সহায়তা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি উদ্যোগ নিয়ে আরেকটি হাসপাতাল এখানে করতে চাই, যার মধ্যে থাকবে একাডেমিক, রিসার্চ সেন্টার ও সিমুলেশন ল্যাব। সঙ্গে কিছু এক্সটেনশন ও উন্নতীকরণ। যেমন ভাস্কুলার সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি। অন্য হাসপাতালটি বেতার ভবনে করতে চাচ্ছি। ফেলে রাখার থেকে কাজ করা উচিত বলে আমি অলরেডি উদ্যোগ নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ল্যান্ড দেখা হয়েছে, ইআরডি সম্মতি দিয়েছে। আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবো। 

[১২] সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনায় কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন কি?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের চ্যালেঞ্জ বলতে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক সঙ্কট। ৩০ জন রোগীর জন্য একজন চিকিৎসক হলে যে সেবাটা দিতে পারতাম, সেটা এখন দিতে পারছি না। মানুষ আস্থা পেয়েছে বিধায় দূর-দুরান্ত থেকে রোগীরা এখানে আসছেন। প্রতিদিন আট থেকে নয় হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যদি আরও কিছু ডাক্তার পেতাম, আরও কিছু সেন্টার বাড়াতে পারতাম, তাহলে আমরা হয়তো আরও ভালো সেবা দিতে পারতাম।

[১৩] বিএসএমএমইউ হাসপাতালের আউটরীচ সেন্টার তৈরির কোনো পরিকল্পনা কি আছে? 

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : এতো রোগীর যেন এক জায়গায় না আসতে হয়, সেজন্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্ল্যান আছে আউটরীচ সেন্টার করার, যেটা হতে পারে শিবচর, আমিনবাজার বা পূর্বাচলের মতো জায়গায়। এতে করে এতো লোকের ভিড় এখানে হবে না। রোগীদের আরও ভালো সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে বিভাগীয় শহরে আউটরিচ সেন্টার করা হবে।

[১৪] জাতীয় বাজেট আসছে। স্বাস্থ্যখাতে যে বাজেট দেওয়া হয়, তা নিয়ে অনেক অভিযোগ। পর্যাপ্ত নয় স্বাস্থ্য বাজেট। আপনার অভিমত কী?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : আমি একজন একাডেমিক লিডার ছাড়াও একজন প্রফেশনাল লিডার। আমি দীর্ঘদিন জনগণের জন্য আন্দোলন করেছি। চিকিৎসকদের জন্যও আন্দোলন করেছি। আমরা বরাবরই বাজেটের ১০ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে দিতে বলেছি, কিন্তু ৫-৬ শতাংশের বেশি এখনো পাইনি। আমার মনে হয় আমরা স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ১০ শতাংশে উন্নীত করতে পারলে আমরা গরীব মানুষসহ অনেক বেশি মানুষকে হেল্প করতে পারবো। তবে সরকার রিসেন্টলি আমার আরেকটা প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করেছে, সেটা হলো বিভিন্ন হাসপাতালে ওপিবি সার্ভিস চালু করা, ইনভেস্টিগেশন সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে। এটার মাধ্যমেও আমরা মানুষকে সেবা দিতে পারছি। তবে ওপিবি সার্ভিস এক জায়গায় চালু করলে হবে না, সব জায়গায় চালু করা দরকার। আমার আসলেই মনে হয় স্বাস্থ্যখাতে বাজেট আরও বাড়ানো দরকার এবং ট্রেইনিংয়ের মাধ্যমে নতুন জনশক্তি তৈরি করা দরকার। কিছু লোককে আমরা দেশের মধ্যে ট্রেইনিং করাতে পারি, কিছু সংখ্যককে বিদেশে যারা ট্রেইনিং করে এসে আমাদের দেশের লোকদের ট্রেইনিং করাবেন। বিশেষজ্ঞদের রেসিডেন্সি ভাতাসহ তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে পারবো এবং তাদের সংখ্যাও বাড়াতে পারবো। এই কাজগুলো করতে পারলে আমরা স্বাস্থ্যখাতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারবো। 

[১৫] বাজেট যা দেওয়া হয়, সেটাও তো ব্যয় হয় না। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রেইনিংয়ের অভাবে বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ ব্যয় করা যাচ্ছে না বলে ফেরত দিতে হচ্ছে। যারা পরিচালক আছেন, সিভিল সার্জন আছেন উনাদের যা ক্রয় করার কথা পিআরএল-এ গিয়ে জবাবদিহি করতে হবে বিধায় তারা সেগুলো ক্রয় করছেন না। এক্ষেত্রে একটু রিল্যাক্স হতে হবে, ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, ওই অর্থ ফেরত যাবে না। তবে ম্যানপাওয়ার গত ১৫ বছরে ১৫ হাজার টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ১৫ হাজার লোকেকে নিয়োগ দিতে না পারার যে অর্থ সেটা ফেরত দিয়েছে।

[১৬] আমরা বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে একটা টেকনোলজিস্ট কোর্স চালু করবো প্ল্যান করেছি এবং ট্রেইনিংয়ের ব্যাবস্থা করবো। বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় সরকার বিগত ১৫ বছর যাবৎ যে টেকনোলজিস্ট নিয়োগের পরীক্ষা নিতে পারেনি সেটা এবার নিতে পেরেছে। সরকার এবার মামলাটা জিতে পিএসসির মাধ্যমে পরীক্ষাটি নিয়েছে। আমাদের এখানের যে নিয়োগ আমি ভেবেছি পিএসসির মাধ্যমে নিয়ে নেবো, আমার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবো, স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ দেবো। এই হলো আমাদের প্ল্যান। 

[১৭] আমার ব্যক্তিগত একটা চাওয়া আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা চাওয়া আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান প্রত্যেকটা মানুষ ভালো করে সেবা পাক। তো সেক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকে ডাক্তার দিতে হবে, সেকথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা করবেন আরেকটু উপর লেভেলে, এখানে যারা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার তারাই চিকিৎসা দেবে’। এটা অলরেডি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুরু করেছেন তবে তাদের একটু ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। এক্ষেত্রে আমি একটা উদ্যোগ নিতে পারি। একটা রিফ্রেশার্স কোর্স চালু করা যেতে পারে। যেমন ১০টা রোগী দেখলো, তাদের কীভাবে রেফার করতে হবে, সেই রেফারাল ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন ডাক্তার প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে মাসে একদিন দেখেলে চিকিৎসা সেবার মান আরও উন্নত হবে। আমাদের যে আউটরীচ মডেল সেটা উপজেলা পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন করতে পারলে আরও ইফেক্টিভ হবে। আমিতো চোখের ডাক্তার, চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসাবে আমি জানি অনেক মেয়েরা হার্ড টু রীচ এরিয়াতে থাকার কারণে তারা অন্ধ হয়ে বসে থাকে, চোখের সামান্য অপারেশনটাও করাতে পারেনা। আমরা তাদের বিভিন্ন আই ক্যাম্পের মাধ্যমে এনে চোখের সার্জারি করাই। আমি মনে করি এরকম একটা উদ্যোগ নিলে খারাপ হয় না।

[১৮] আমি আসার পরে গবেষণার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আমার সভাপতিত্বে ইউএন এসেম্বেলিতে আমরা বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য একটা সেমিনার করেছি। সেখানে আমরা বিদেশিদের নিয়ে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে গবেষণায় মাত্র ৪ কোটি টাকা বাজেট ছিলো, আমি ২২ কোটিতে উন্নীত করেছি। আমার সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গবেষণায় সম্মিলিত বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ২০ কোটি টাকা পেয়েছি। আমরা বেশকিছু মৌলিক গবেষণা করেছি। প্রফেসর লায়লার অধীনে ডেলটা ও ওমিক্রনের জেনেটিক এনালাইসিস করেছি, যেটা কখনোই আমাদের অধীনে ছিলো না। দ্বিতীয়ত আমরা এন্টিবডি সেনসিবিলিটি টেস্ট করেছি। ৩০০০ টাকা মূল্যের করোনার কিট যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ১৬ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে দিয়েছেন, আমরা বিসিআইআর-এর সাথে একই কিট তৈরি করেছি মাত্র ২৫০ টাকায়। তার পরে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেলে কী ক্ষতি হয়, ফ্রিজের ড্রিঙ্কস খেলে কী ক্ষতি হয় এগুলোর সঙ্গে আমাদের পাবলিক হেলথ রিলেটেড হয়েছে। কীভাবে ডায়াবেটিকস কমানো যায়, হাইপারটেনশন কমানো যায় তার উপরে আমাদের রিসার্চ ওয়ার্ক হয়েছে। আমরা আরেকটা গবেষণা করছি ভিটামিন ডি লেভেল নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের সবারই ভিটামিন-ডি লেভেল কম। আমার মনে হয় এটাও সঠিক নয়। লেভেল পুনঃনির্ধারণ করার জন্য আমাদের গবেষণা চলমান। 

[১৯] আমাদের এখানে গবেষণা যারা করেন তাদের ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। ফ্যাকাল্টিদের আগে যেখানে ২ লাখের বেশি দেওয়া হতো না, সেখানে এখন ১০ লাখ করে দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমি বাজেটারি এলোকেশনে গবেষণায় বাজেট আরও বাড়াবো। ফ্যাকাল্টিদের বলেছি, যারা পদোন্নতি চান তারা গবেষণা ছাড়া পদোন্নতি পাবেন না আর যাদের পদোন্নতি প্রয়োজন নেই তাদেরও বছরে অন্তত একটা গবেষণা করতে হবে। এর দ্বারা তাদের গবেষণার প্রতি আগ্রহ ও জনবান্ধবতা আরও বৃদ্ধি পাবে। 

[২০] রেসিডেন্সি কোর্সে যারা আসেন, তাদের ভাতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আলোচনা হয়Ñ কম ভাতা পান তারা। রেসিডেন্সি চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা কি আছে?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : যারা রেসিডেন্সি কোর্সে আসে তাদের ভাতা বাড়ানো উচিত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, করোনা মহামারীর জন্য বাজেটারি এলোকেশনে তো একটা চাপ পড়েছে, সেই চাপ সত্ত্বেও আমাদের উচ্চশিক্ষা অব্যাহত রাখতে হলে, আমাদের এই শিক্ষকরা যারা ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ চালাবে, তাদের দিকে তাকিয়ে মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা করার ব্যাপারে আমি ছাত্রদের সাথে একমত। সিদ্ধান্ত আগে হলেও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা পাইনি। আমি মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি যে যতো দ্রুত সম্ভব এই বাজেটে এটা অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা। উনারা আশ্বাস দিয়েছেন, দেখি কী হয়। আপাতত ৩০ হাজার টাকা হলে ভবিষ্যতে যদি আমাদের আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়, আরও বাড়ে সে ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে। একবারে ডাবল-ট্রিপল করতে গেলে মোটেই হবে না। এটা তো ভাতা। 

[২১] জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত একটি রেজল্যুশন পাস হয়েছে। ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে কী বলবেন

অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ : কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতি বছর ১৬ কোটির বেশি মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়। লোক আমরা ১৬ কোটি, তাহলে ১৬ কোটির বেশি মানুষকে কীভাবে সেবা দিচ্ছে? একই লোক দুই তিনবার যাচ্ছে। সেখানে বাচ্চা প্রসব হচ্ছে, ২৮টা ওষুধ ফ্রিতে দেওয়া হচ্ছে, সামনে ইনসুলিনও দেওয়া হবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। তো সবকিছু মিলিয়ে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ এমন একটা পর্যায়ে এসেছে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিরকাল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। 

১৭ মে ছিলো প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ছিলো। তিনি দেশে না আসলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কী হতো আমি তার একটা তুলনা করবো। উনি এলেন বলেই কমিউনিটি ক্লিনিক হলো। ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক আজকে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। দ্বিতীয় যে কাজটা হলো, বাংলাদেশে মাত্র ৮টি মেডিকেল কলেজ ছিলো, এখন সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি, বেসরকারি ৭৬টি, সর্বমোট ১১৩টি মেডিকেল কলেজ। প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজে ১০ শতাংশ বেড গরিবদের জন্য বরাদ্দ থাকার কথা যেখানে গরিব মানুষরা সেবা পাবেন। যেমন উনি বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কভাতা দিচ্ছেন, তেমনি ১০ শতাংশ গরিব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাও করেছেন। 

[২২] আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শক্তির জায়গাটা কী। দুর্বলতা কোন কোন জায়গায় বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : আমরা ২৬ বছর একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলন করেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা করেছেন। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তি আমার সময়ে হলো। আমার আমলেই বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল হলো, যেটাকে আমি স্বাস্থ্য খাতে পদ্মা সেতু বলি। এই সাউথ-ইস্ট এশিয়ায় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিকের ৫০০ বেড আর কোথাও নেই, শুধু আমাদেরই আছে। আমাদের নিটোলে ১২০০ বেড, অর্থোপেডিক্সে আর কোথাও এতো বেড নেই। এনআইসিপিডির যে ১২০০ বেড, এই টোটাল সাউথ-ইস্ট এশিয়ার আর কোথাও এতো বেড নেই। উনি আমার বাজেটেরিয়াল এলোকেশন যথেষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনা যুদ্ধে উনি প্রথম প্রণোদনা দিলেন ৪১ হাজার কোটি টাকা, পরে ১ লাখ কোটি টাকা দেন। 

পরবর্তী সময়ে আমরা হিসাব করে দেখলাম যে, আমাদের দেশের জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের ৬০ হাজার জনের মৃত্যুর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেছে ১০ লাখ মানুষ। ব্যবস্থাপনায় জো বাইডেনের থেকে প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা সফল। সার্বিক করোনা মোকাবেলায় সাউথ-ইস্ট এশিয়ায় প্রথম এবং সারা বিশ্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। এটাও স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটা বড় অর্জন। করোনার দুই বছরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ কাউকে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়নি তার কারণ আমরা কম্পিটেন্ট বিশেষজ্ঞ। চতুর্থ হলো, জনগণের জন্য উনি যেমন প্রতিটা উপজেলায় মসজিদ তৈরি করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসস্থল করেছেন, ঠিক তেমনি প্রত্যেকটা উপজেলা লেভেল ও জেলা লেভেল হাসপাতালে বেড সংখ্যা বাড়িয়েছেন। শুধু বেড সংখ্যাই বাড়াননি, জনগণের নিয়োগ হয়েছে, হেলথ ম্যানপাওয়ার এসেছে। এখন কিন্তু শরীয়তপুরেও হার্টের ডাক্তার, কিডনির ডাক্তার, গায়নোকোলজিস্ট, আই সার্জন আছে। এটা একান্তই জনগণের স্বার্থে। আরেকটা কথা উনি বলেছেন যে প্রতিটা বিভাগে হার্ট সেন্টার, কার্ডিয়াক সেন্টার, কিডনি সেন্টার এবং একটা ক্যান্সার সেন্টার করবেন। 

জনগণের জন্যেই উনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এসব উন্নয়ন করেছেন। এখনও যে জিনিসটা আমরা পারছি না তা হলো চিকিৎসকদের সুষম বণ্টন। যেমন মনপুরা, ভোলার উপজেলায় আছেন ২ জন ডাক্তার, শ্রীনগরে আছেন ২০ বা ৩০ জন, ঢাকা মেডিকেলে একটি সাবজেক্ট পড়ানোর জন্য আছেন ৬ জন অধ্যাপক, অপরদিকে মাগুরা বা সুনামগঞ্জে মোটেই নেই। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং যেখানে যেখানে আমরা বিকালে ওপিডি সার্ভিস চালু করেছি সেখানে বিশেষজ্ঞের সংখ্যা শুন্য থাকলে তা পুরণ করতে হবে, সাথে সাথে ইনভেস্টিগেশন ফ্যাসিলিটিও বাড়াতে হবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো পূরণ করতে পারলে স্বাস্থ্যক্ষেত্র আরও এগিয়ে যাবে। 

[২৩] ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট হচ্ছে। বিএসএমএমইউ বা বিএসমএমএমই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালকে স্মার্ট করার কোনো প্ল্যান আছে কি!

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে চাওয়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার, আমরা তার সৈনিক হিসাবে কাজ করছি। আমি বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করবো। লাইন দিতে হবে না। এখানে নীচ তলায় এসে যখন রক্ত দেবেন, রক্তটা কোনো মানুষ নিয়ে যাবে না। নিউমেরিক চেম্বারে এটা কতো নাম্বার ওয়ার্ডের, কতো নাম্বার বেডে যাবে এটা অটোমেটিক চলে যাবে। দ্বিতীয়ত এখানের এস্কেলেটর সবসময় চলবে না, আপনি এসে সামনে দাঁড়াবেন তারপরে চালু হবে। এগুলোও কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটা অংশ। আমি হিসাব করে দেখেছি, শুধু বায়োকেমিস্ট্রিতে প্রতিদিন ২৫০ জন লোক আসে এবং পরদিন যদি রিপোর্টটা নিতে আসে তাহলে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই রিপোর্টটা আমরা সাথে সাথে বা অনলাইনে প্রদান করে ৪০ হাজার টাকা বাঁচিয়ে দেবো। এই সবকিছুই স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ। 

আরেকটা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আমরা ইনভেস্টিগেশনসহ যতো ধরনের মেশিন লার্নিং আছে, যেমন নারী স্বাস্থ্য, পুরুষ স্বাস্থ্য ইত্যাদি আমরা এখানে চালু করবো। রোবোটিক সার্জারিও কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটা অংশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে স্বাস্থ্যখাত বাকি বিশ্বে যেখানে যতোটুকু আগাচ্ছে, আমরাও তার চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে থাকবো না। সুতরাং, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আমরা চালু করতে সক্ষম হবো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে তার পথিকৃৎ। 

[২৪] আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে অনেকেই বলে বেকারত্ব বাড়বে কিনা! কিন্তু আমি বলি ‘ম্যান বিহাইন্ড দ্য মেশিন’। যেই ম্যান ভালো না হলেই ঘটনা ঘটে। তো আমরা প্রপার ট্রেইনিং ও ম্যানপাওয়ার ছাড়া এগুলো চালু করবো না। সেক্ষেত্রে আমি  রোবট আনলে আমাদের সাপ্লায়ারের কমপক্ষে আমাদের ১০০ জনকে ট্রেইনিং করাতে হবে, আমাদের লোকের সাথে তাদের কমপক্ষে ১ বছর কাজ করতে হবে, যাদের উপস্থিতিতে অপারেশন সম্পন্ন হবে এবং এসব ব্যাপারে আমি সাপ্লায়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। সম্পাদনা : ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল। শ্রুতিলিখন : মুস্তাফিজুর রহমান

ভিএআর/জিএইচইউ/এএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়