শিরোনাম
◈ সামরিক কর্মকর্তার পরিচয়ে হুমকি, সহায়তা চাইলেন গোলাম মাওলা রনি ◈ আলোচিত ‘তুমি কে? আমি কে?, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানের যে ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ ◈ ‘মুরুব্বি মুরুব্বি’ ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা বললেন তাহেরী (ভিডিও) ◈ মধ্যরাতে নেতাকর্মীদের জরুরি যে নির্দেশনা দিল আওয়ামী লীগ ◈ দুই বাংলার সিনেমা অঙ্গনে বাড়ছে ‘দুরত্ব’ ◈ ‘বিড়াল ধরে খাওয়ার অপরাধে’ হাইতির অভিবাসীদের তাড়াতে চান ট্রাম্প ◈ বাংলাদেশের উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের ◈ বাংলাদেশ ও ভারতের তিনজন করে ক্রিকেটার রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে  ◈ ধর্ষণ মামলা নিতে দেরি করায় ওসি গ্রেপ্তার! ◈ সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল

প্রকাশিত : ০১ মে, ২০২৩, ০৪:০৪ দুপুর
আপডেট : ০২ মে, ২০২৩, ০৪:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এলডিপি অংশগ্রহণ করবে: ড. রেদোয়ান আহমেদ

ড. রেদোয়ান আহমেদ

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] সামনে নির্বাচন। এলডিপির নির্বাচনী প্রস্তুতি কী। আপনারা কি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন?

এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে এলডিপি অংশগ্রহণ করবে। তা না হলে এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা তারা রাখেনি। সেটা পুরো জাতি দেখেছে। তখনকার সরকারপ্রধানের আশ্বাসে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, একটা সুন্দর, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন। কিন্তু সেটার প্রতিফলন কি তখন আমরা দেখেছিলাম? কথার সঙ্গে কাজের তো কোনো মিল ছিলো না। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, কিন্তু এমন গণতন্ত্র দেখানো হয়েছিলো, যা বিশ্ব কোনোদিন দেখেনি। ভোটের আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে! এই গণতন্ত্রের জন্য বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 

[৩] অনেকে বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি বা তার জোট ভুল করেছে, যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। আপনি কি তা মানেন?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত ছিলো এটা তো বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দও বলছেন। আমরাও বলি, চৌদ্দ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সমীচীন ছিলো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়া সঠিক হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রয়োজন ছিলো। তবে না গিয়েও তো যা হওয়ার তা হয়েছিলো। ৩০০শ আসনের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওটা তো কোনো সরকারই হয় না। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ওটা ছিলো একটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। আমরা আবারও একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করবো। কিন্তু তারা তো পার পেয়ে গেছেন! ৫ বছর ক্ষমতায়ও ছিলেন। ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগ একই রকমের ফ্রড করেছে জাতির সঙ্গে। ফলে বর্তমান সরকারপ্রধানের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 

[৪] ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ২০১৮ সালে অংশগ্রহণ করলেও বর্তমান সরকারই সরকারগঠন করেছে। অনেক দিন তো ক্ষমতার বাইরে আছেন। আপনাদের এখনকার কৌশল কী, কীভাবে এই বৃত্ত থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন? আপনাদের এখনকার কৌশলটা আসলে কী?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: আমাদের এখনকার কৌশল আন্দোলন। সরকারের পতন। তারপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। 

[৫] বিএনপিদলীয় জোটের বিপুল কর্মী-সমর্থক থাকলেও জনসমর্থন আদায়ে কি কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে, এমন অভিযোগ অনেকের। আপনারও কি তা মনে হয় না?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: বিএনপিদলীয় জোটের ৯০ শতাংশ জনসমর্থন আছে। কিন্তু সরকার যেটা করছে, রাস্তায় নামলে কাউকে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। গুলি করছে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ অনেক বড় বড় আন্দোলনের সঙ্গেই আমার সম্পৃক্ততা ছিলো। কিন্তু বর্তমান সরকার যেটা করছে, আন্দোলনকারীদের ওপর কথায় কথায়, গুলি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি ইতোমধ্যে কখনোই সৃষ্টি হয়নি। মিছিল, মিটিং, প্রতিবাদ করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। এই অধিকার বাস্তবায়ন করতে গেলে মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলবে? এটা হত্যার সামিল। 

[৬] কোনো সরকারই তো চায় না তার বিরুদ্ধে এমন কিছু করুক, যাতে তার ক্ষতি হয়। দেশের ক্ষতি হয়। আর কোনো সরকারই তো চায় না ক্ষমতা ছাড়তে! 

ড. রেদোয়ান আহমেদ: ক্ষমতা যাতে ছাড়তে হয়, সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হবে এবার!

[৭] সেই ব্যবস্থাটা কী?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: অনেক রকম পদ্ধতিই আছে। ১৯৯১ থেকে ৯৬ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন টানা হরতাল করেছিলো। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিলো। কার্যত পুরো অর্থনীতিই ধ্বংস করে দিয়েছিলো তৎকালীন বিরোধীদল। রপ্তানিকারকদের হাহাকার ছিলো। তখন আমি বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আমিও আমাদের সরকারকে বলেছিলাম, আপনি হয় একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, না হয় সরকার ছেড়ে দিন। আমি তখন বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলাম। কিছুদিন মন্ত্রীও ছিলাম। এখন তো বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ওই ধরনের ব্যবস্থাই নিতে হবে, যা করেছিলো আওয়ামী লীগ। এছাড়া তো কোনো উপায়ও নেই। 

[৮] তার মানে কি টানা হরতাল কর্মসূচির মতো কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপিদলীয় জোট?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: হরতাল কর্মসূচি ছাড়াও তো অনেক প্রোগাম আছে। সেই কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করে দেখি। ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে যদি ক্ষমতা ছেড়ে দেয় সরকার, দেশ ও গণতন্ত্রকে যদি শেখ হাসিনা ভালোবাসেন, তাহলে তো সবাই তা স্বাগত জানাবে। আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে মানুষের গণতান্ত্রিক চর্চার জায়গাটা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য তো আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। সাম্য, মানবতা ও গণতন্ত্র সবই তো ধ্বংস হয়ে গেছে। 

[৯] সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতায় বিরোধী দলগুলোর যে দায়িত্ব পালন করার কথা, সেটা সঠিকভাবে তারা পালন করছে না তারা। যার ফলে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। মানুষের এমন অভিযোগের ব্যাপারে আপনার মত কী?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: আমরা তো আর লাঠি নিয়ে মারামারি করবো না। গোলাগুলিও করবো। অধিকার আদায়ে পদযাত্রা করছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তারপরও তো বিভিন্ন জায়গায় বিরোধী নেতাকর্মীদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়। 

[১০] বলছেন, ৯০ শতাংশ জনসমর্থন আপনাদের জোটের পক্ষে আছে। এই বিপুল জনসমর্থন দৃর্শ্যমান হচ্ছে না কেন? কোনো আন্দোলনেই তো সাধারণত সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না!

ড. রেদোয়ান আহমেদ: জনগণের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন না থাকলে কীভাবে হাজার হাজার লোক একটা আহ্বানে চলে আসে? এটা কি জনসমর্থন নয়? একটা দলের কি এতো কর্মী থাকে নাকি! 

[১১] নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিদলীয় জোটের পরিকল্পনা কী

ড. রেদোয়ান আহমেদ: নির্দদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। 

[১২] ২০১৪ সালে সরকার সর্বদলীয় সরকারের একটা প্রস্তাব রেখেছিলো। বিরোধী দলগুলোকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দেওয়ারও কথা বলেছিলো। এ ধরনের কোনো প্রস্তাব নতুন করে সরকার দিলে, আপনাদের জোট কি তা গ্রহণ করবে? আপনাদের কোনো প্রস্তাব আছে কি?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প কোনো প্রস্তাব নেই আমাদের। 

[১৩] নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা কি আছে এলডিপির?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: সরকারের সঙ্গে যেতে চাইলে আমরা যেতে পারতাম। অনেক অফারই ছিলো। ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবরে যখন আমরা নতুন দল গঠন করি, তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের একটা প্রস্তাবনা ছিলো, তাদের সঙ্গে এলডিপিও ছিলো। আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা আর তাদের সঙ্গে ছিলাম না। যাদের যে প্রত্যাশা দিয়ে আমরা দল ভাগ করেছিলাম, সেটা যখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পূরণ করা হয়নি, কয়েকটি সীট নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া বেঈমানি হয়। সে কারণেই আমরা তাদের সঙ্গে যাইনি। আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। ২০১২ সাল থেকে আমরা বিএনপির সঙ্গেই আছি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নানান প্রস্তাব এলেও কোনো প্রস্তাবেই এবার আমরা ছাড় দিতে নারাজ!

[১৪] সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া ও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে নিয়ে আসার চাপ আছে সরকারের ওপর। সেটা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যায় থেকে। আপনাদের ওপর কি এ ধরনের কোনো চাপ আছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: আমার মনে হয় না এ ধরনের কোনো চাপ আমাদের জোটের ওপর আছে। আমি জানি না। যেসব গণতান্ত্রিক দেশ বিশ্বে আছে, তারা সকলেই চায় বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একমাত্র উপযুক্ত সরকার তত্ত্বাবাধয়ক সরকার। আর যাই হোক, তত্ত্বাবায়ক সরকার পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো স্বৈরশাসক সৃষ্টি হয় না। 

[১৫] ২০০১ সালে সরকার বদলের পর দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যার শিকার হতে হয়েছিলো। এবার সরকার পবির্তন হলে আওয়ামী লীগের বিপুল নেতাকর্মী জীবননাশের আশঙ্কা করছে দলটি। তাদের এ শঙ্কার ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

ড. রেদোয়ান আহমেদ: সাধারণত আমাদের দেশের নির্বাচনের আগে-পরে কিছু মারামারি, কাটাকাটি হয়! কিন্তু তোফায়েল আহমেদ যে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিলে দুই লাখ লোক মেরে ফেলবে বিএনপি, আমার মনে হয় না এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে বিএনপিও তো আগে অনেকবার আশ্বস্ত করেছে। বিএনপি মারমুখি কোনো সংগঠন নয়। নির্দদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এমন ঘোষণা এলে সাময়িক একটু হৈচৈ হলেও ২ লাখ মেরে ফেলা হবে, এটা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগের নেতাদের মনে একটা ভয় আছে। কারণ বিরোধী নেতাকর্মীদের তারা এমনভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতন করেছেন, যাতাকলে রেখেছেন এর একটা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিস্ফোরণের অনুমান করেই হয়তো তোফায়েল আহমেদ বা তার দলের লোকজন এ ধরনের আশঙ্কার কথা বলছেন। কিন্তু আমার মনে হয় না, বিএনপি বা তার জোটের লোকজন এতো উশৃঙ্খলতা দেখাবে!

বিশেষ এই সাক্ষাৎকার গ্রহণে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন ফখরুল ইসলাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়