শিরোনাম
◈ গাজীপুরে কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা নাগরিকের মৃত্যু ◈ প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব ও গাম্বিয়া সফর বাতিল ◈ এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ ◈ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ৪ পুলিশ সদস্যসহ আহত ২০ ◈ মার্চ মাসে সারাদেশে ৬২৪ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৫০, আহত ৬৮৪  ◈ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে: হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ◈ অস্ত্রসহ কেএনএফের আরও ৯ সদস্য আটক ◈ পাকিস্তানের মুশতাক আহমেদ বাংলাদেশের নতুন স্পিন কোচ ◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩, ০২:৫৯ দুপুর
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৩:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন

রিজার্ভ সংকট কাটাতে আইএমএফের ঋণ বড় কোনো অবদান রাখবে না

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন

ভূঁইয়া আশিক রহমান: বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ডলার সংকট, মুদ্রাস্ফীতি আমাদের ইমিডিয়েট সমস্যা। এই সংকট মোকাবেলা আইএমএফ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ থাকবে এবং কবে তা বাস্তবায়ন হবে সেটা ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। এখানে অর্থটা খুব বড় কোনো বিষয় নয়। কারণ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি খরচ করেছে রিজার্ভ থেকে। আর আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তিতে তো ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে। রিজার্ভের যে সংকট, স্বল্পতা তা ঠেকাতে এই ঋণ বড় কোনো  অবদান রাখবে না। ফলে আইএমএফের কর্মসূচিতে মোটাদাগে যদি কিছু পদক্ষেপ না থাকে, তাহলে এই ঋণ থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। ঋণ অনুমোদন পেয়ে গেলে দুয়েকদিনের মধ্যেই সব জানতে পারার কথা। 

তিনি বলেন, আমরা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে জানি না আইএমএফ কী ধরনের কর্মসূচির ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ঋণটা দেবে। তবে সাধারণভাবে যে ধারণা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, ভর্তুক্তি ও সরকারি ব্যয় যৌক্তিককীকরণ। বিশেষ করে ভর্তুকি কমানো। কর আদায় বৃদ্ধি করা। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের ব্যবস্থাপনা। মুদ্রানীতির আধুনিকায়ন। সামাজিক সুরক্ষা খাতের সংস্কার। আর্থিক খাত। এসবের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কী ধরনের সংস্কার হবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আইএমএফ ৪২ মাসে আমাদের ৪৫০ কোটি ডলার দেবে। কিন্তু আমাদের ইমিডিয়েট যেটা দরকার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেভাবে কমে যাচ্ছে, সেটাকে ঠেকানো। আর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। সেখানে আইএমএফের এই ঋণ সংকট মোকাবেলায় বড় অবদানের রাখার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঋণ অনুমোদন হয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা এখন ডান ডিল। এই অর্থ বছরে বাংলাদেশ পাবে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। তারপর ৬ মাস অন্তর অন্তর ৬০০ মিলিয়ন ডলার করে ছাড় দেওয়ার কথা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে ৪৫০ ও ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাবে না বাংলাদেশ। মানে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের মতো। এটা একটা অংক। এতে ডলার সংকট কিছুটা লাঘব করবে,কিন্তু মোটা দাগে তেমন কিছু না। 

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সবকিছু যদি ঠিক থাকে, তাহলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই অর্থ পাওয়ার কথা। যদিও আইএমএফ ৬ মাস পরপর একটা রিভিউ করে। কারণ কোয়ালিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়াতে (কিউপিসি) থাকে সেটা দেখে। রিজার্ভের একটা ফ্লোর থাকতে পারে যে, এর নীচে রিজার্ভ নামানো যাবে না। হয়তো সেটা ২০ বা ২২ বিলিয়ন ডলারও হতে পারে। রিজার্ভের হিসাব-নিকাশে একটা পরিবর্তনের কথা আইএমএফ ইতোমধ্যেই তুলে ধরেছে। রিজার্ভের হিসাব-নিকাশ থেকে ইডিএফ-আইডিএফ বাদ দেওয়ার কথা তারা বলেছেন। মূল্যও প্রকাশ করতে হবে। ২০ বিলিয়ন ডলারের ফ্লোর যদি থাকে যে, এর নীচে রিজার্ভ নেমে গেলে দ্রুত কোনো অ্যাকশন নিতে হবে। তা না হলে আইএমএফের অর্থ ছাড় হবে না। সরকারের বাজেট ঘাটতির একটা সীমা বেধে দেওয়ার কথা। এরপর কাঠামোগত সংস্কার। এটাই হচ্ছে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলার মতো পলিসি রিফরম বা সংস্কার। একটা টাইমলাইন থাকবে যে, প্রথম কিস্তি ঋণের আগে এই করতে হবে, দ্বিতীয় কিস্তির আগে ওটা করতে হবে ইত্যাদি। প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর যে রিভিউ হবে, তার আগে কাজগুলো শেষ করতে হবে। এসব বলা থাকবে। সব কাজ শেষ না হলে অর্থ ছাড় হবে না। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক এই মুখ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, ঋণ অনুমোদনের পরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় হয়ে যাবে। এজন্য যা করার কথা সেগুলো আগে থেকে না করে থাকলে আইএমএফ বোর্ডে যেতো না। কিন্তু ৬ মাস পরে প্রথম রিভিউ যখন হবে, এর আগে কী ধরনের সংস্কার শেষ করতে হবেÑ সেগুলো আমরা জেনে যাবো দুয়েকদিনের মধ্যেই। সেসব দেখলে বোঝা যাবে কোনো ইম্প্যাক্ট আছে কিনা। কৌশলগত পরিপত্র থাকে, কিন্তু সেগুলোর তো কোনো ইমিডিয়েট ইম্প্যাক্ট থাকে না। এখন দেখার ব্যাপার রেভিনিউ, সরকারি ব্যয়, আর্থিক খাত, সামাজিক সুরক্ষা বলয় কিংবা মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে আইএমএফ থেকে।  

আইএমএফের ঋণের কী ধরনের প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে পড়বে, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো কী জানতে না পারলে পরিষ্কার কিছু বলা মুশকিল। তবে সাধারণভাবে ব্যয় ঘাটতি কমাতে হবে। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে হবে। ন্যূনতম একটা রিজার্ভ মেইটেন করতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে টার্গেটিং ইম্প্রুভ করতে হবে। এর আওতা বাড়াতে হবে। এসব ভালো ভালো কথা আইএমএফের কর্মসূচিতে বলা থাকবে। কিন্তু এসব বাস্তবায়ন করার জন্য পদক্ষেপগুলো কী হবেÑ সেগুলো এখনো জানা যায়নি। 

দেশের অর্থনীতিতে সংকট রয়েছে বলেও মনে করেন ড. জাহিদ হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলার সংকট তো এখনো আছে। যা দেখি পত্রপত্রিকায়, অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘণীভূতি হচ্ছে। রিজার্ভ দেখলেই তো বোঝা যায়, বহুতান্ত্রিক বাণিজ্যিক খাতে যে আশাহীনতা ছিলো তা এখনো রয়ে গেছে। রেভিনিউ কিছুটা গ্রোথ হয়েছে, কিন্তু গত বছরের লক্ষ্যের তুলনায় অনেক কম। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকার যেসব সহজ পদক্ষেপ, যেমন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এতে ভর্তুকি কতোটা কমবে তা পরিষ্কার নয়। কারণ একদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে পিডিবির লস কমিয়েছেন, অপরদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে লস বেড়ে গেছে। সার্ভিকভাবে ভর্তুকি কতোটা কমবে তা তো এখনো পরিষ্কার নয়। 

তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা সুখবর আছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। তেল, গ্যাস ও সারের দাম বেশ কমেছে। শিপিং কস্টও অনেক কমে গেছে। ২০২১ সালে ৫-৬ গুণ বেড়ে গিয়েছিলো, সেটা এখন অনেক কমে গেছে। এর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও পড়বে। যদিও এখনো আমরা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট দেখতে পাচ্ছি না। কাজেই আমাদের অর্থনীতি এখনো নড়বড়ে অবস্থায় আছে। 

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানো, বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা স্থিতিশীল করার জন্য মোটা দাগের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। যদিও সুদের হারের ওপর কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত লোনের ক্ষেত্রে। মেয়াদী ডিপোজিটের ক্ষেত্রে যে একটা ফ্লোর বসানো হয়েছিলো, সেটা তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ডিপোজিট মোবিলাইজ বাড়াতে কিছুুটা সহায়ক হতে পারে। এছাড়া তো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। রেপো রেট যেটা বাড়িয়েছে, এতে লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্ট কস্ট বাড়িয়ে দেবে। মূল্যস্ফীতির ওপর ইম্প্যাক্ট পড়ার সুযোগ খুব একটা নেই। আর বাংলাদেশ ব্যাংক তো সরকারকে ঋণ দিয়েই যাচ্ছে সরাসরি। এ পর্যন্ত তো প্রায় ৪৫-৪৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার সরাসরি নিয়েছে। সেসব তো উল্টোপথে হাঁটার মতো ঘটনা। এই যে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো, এর আগে জ্বালানি তেলে মূল্য বৃদ্ধি করা হলো সবাই তো মনে করছে, এসব আইএমএফের শর্ত পূরণ করার জন্যই করা হয়েছে। আসলেই কি ব্যাপারটা তাই ঘটেছে? সেটা দুয়েকদিনের মধ্যেই পরিষ্কার হবে। 

ভিএআর/এসএ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়