সৌদি আরবের পক্ষ থেকে দেওয়া কড়া আল্টিমেটামের ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই ইয়েমেনে চলমান সামরিক ও সন্ত্রাসবিরোধী মিশন সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) আবুধাবি নিশ্চিত করেছে যে, তারা শিগগিরই ইয়েমেন থেকে তাদের অবশিষ্ট সকল সৈন্যকে ফিরিয়ে আনবে। আমিরাতের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে আমিরাত সরকার জানিয়েছে যে, তারা ইয়েমেনে তাদের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করেছে এবং এখন দেশটিতে অবস্থানরত সকল আমিরাতি সেনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) সঙ্গে আমিরাতের ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার বিষয়টি রিয়াদের জন্য চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে আমিরাতের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক তিক্ততা ও আস্থার সংকট গত মঙ্গলবার এক চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সৌদি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আবুধাবিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সেনাদের ইয়েমেন ত্যাগ করতে হবে। সৌদির এই নজিরবিহীন আল্টিমেটাম এবং সরাসরি সামরিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ইয়েমেনের এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে, যখন ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করে নেয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদী সৌদিতে আশ্রয় নেওয়ার পর হুথিদের দমন ও হাদীর শাসন পুনরুদ্ধার করতে সৌদি আরব, আমিরাত এবং ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একটি প্রভাবশালী প্রতিরক্ষা জোট গঠিত হয়।
২০১৫ সাল থেকে এই জোট ইয়েমেনে বিমান হামলাসহ বড় ধরণের সামরিক অভিযান শুরু করে। যদিও দীর্ঘ সময় পার হলেও হুথি বিদ্রোহীদের পুরোপুরি দমনে এই জোট সফল হয়নি, বরং জোটের শরিকদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ও কৌশলগত উদ্দেশ্য নিয়ে বিভেদ বাড়তে থাকে।
২০১৯ সাল থেকেই আমিরাত কৌশলে জোট থেকে তাদের সেনাসংখ্যা কমিয়ে আনা শুরু করেছিল, যদিও জোটের প্রতি মৌখিক সমর্থন অব্যাহত রাখে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমিরাত সমর্থিত এসটিসি যোদ্ধারা দক্ষিণ ইয়েমেনে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা মূলত সৌদি-সমর্থিত সরকারি বাহিনীর জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমিরাতের এই পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা ইয়েমেনের যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৌদি আরব এখন এককভাবে এই যুদ্ধ পরিচালনা করবে নাকি নতুন কোনো কৌশলের পথে হাঁটবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা চলছে।
সূত্র: ওয়াম