সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়লে ২০২৬ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও সশস্ত্র সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর)। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞদের ওপর করা এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এই মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে। খবর এনডিটিভি।
গত রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান ও সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক সংঘাত নিয়ে করা ওই জরিপে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ‘উচ্চমাত্রার সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ককে আবারও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন কঙ্গো, গাজা উপত্যকা ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন অঞ্চলের চলমান সংঘাত অবসানের চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে ভারত–পাকিস্তান এবং কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ডের মধ্যকার উত্তেজনাও প্রশমনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
সিএফআর প্রতিবেদনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বল্প সময়ের একটি সামরিক মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার এক মাস পর তিন দিনের ওই সংঘাত ঘটে। ৬ মে রাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে পাকিস্তানের ভেতরে কথিত সন্ত্রাসী শিবির লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ভারতের দাবি, ওই অভিযানে ১০০ জনের বেশি জঙ্গি ও ৯টি সন্ত্রাসী শিবির ধ্বংস করা হয়।
এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত পাকিস্তান সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার চেষ্টা চালায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, প্রতিটি ড্রোন অনুপ্রবেশ সফলভাবে প্রতিহত করা হয় এবং এতে কোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব সংঘাত কমানোর উদ্যোগ নেয়। ১০ মে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনের সঙ্গে তার পাকিস্তানি সমকক্ষের যোগাযোগের পর নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) জুড়ে গোলাগুলি ও সামরিক তৎপরতা বন্ধে উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যেও সীমান্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অক্টোবরের শুরুতে কাবুলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) প্রধান নুর ওয়ালি মেহসুদকে লক্ষ্য করে পাকিস্তান বিমান হামলা চালায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর জবাবে আফগানিস্তানের কঠোর প্রতিক্রিয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে সিএফআর সতর্ক করে বলেছে, আফগানিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা আবার বাড়লে ২০২৬ সালে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যেও ‘মাঝারি মাত্রার’ সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরনের দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। সূত্র: ইত্তেফাক