ইমা এলিস/বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ঘোষণা করেছে যে ১৯টি দেশের নাগরিকদের অভিবাসন আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হচ্ছে এবং বাইডেন প্রশাসনের সময় অনুমোদিত অভিবাসন ও আশ্রয় সংক্রান্ত কেসগুলো পুনরায় পরীক্ষা করা হবে। তবে ১৯টি দেশের এ তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস) চার পৃষ্ঠার এক স্মারকে জানায়, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর নাগরিকদের করা সব মুলতুবি আশ্রয় আবেদন এবং ইউএসসিআইএস সুবিধার আবেদনগুলো স্থগিত করা ও পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে।
স্মারকে বলা হয়েছে,উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর আশ্রয়প্রার্থী বা বিদেশি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর যাতে জাতীয় নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়-এটি নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রভাবিত ১৯ দেশের নাগরিকদের আগেও বিভিন্ন মাত্রার প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছিল। চলতি বছরের জুনে ট্রাম্প ১২ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেন এবং বাকি ৭ দেশের ক্ষেত্রে আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
নতুন আদেশে ঘোষিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বার্মা, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলা।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন দমন আরো জোরদার করেছে। ঘটনায় হামলাকারী হিসেবে শনাক্ত রহমানুল্লাহ লাকানওয়াল (২৯), আফগান নাগরিক। তিনি পূর্বে সিআইএ’র হয়ে তালেবান নেতাদের টার্গেট শনাক্তে সহযোগিতা করেছিলেন বলে কর্মকর্তারা জানান। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, অপরাধে জড়িত অভিবাসীদের একটি বড় অংশই বাইডেন প্রশাসনের সময় দেশে এসেছে। স্মারকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয় নাসির আহমাদ তাওহেদিকে, যিনি ২০২৪ নির্বাচনের দিনে হামলার ষড়যন্ত্রের দায়ে জুনে দোষ স্বীকার করেন, এবং লাকানওয়ালের ঘটনাকে–যার ভিত্তিতে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যদিও লাকানওয়াল বাইডেন প্রশাসনের সময় দেশে প্রবেশ করেছিলেন, তাকে আশ্রয় দেওয়া হয় ট্রাম্প প্রশাসনের সময় চলতি বছরের এপ্রিলে।
ইউএসসিআইএস বলেছে, আমেরিকান জনগণের নিরাপত্তা ও চিহ্নিত ঝুঁকির কারণে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সব নাগরিককে পুনঃপর্যালোচনা, সম্ভাব্য সাক্ষাৎকার ও পুনঃসাক্ষাৎকারের আওতায় আনা জরুরি।
সোমবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই দেশগুলোতে পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ করেন, যাদের তিনি অভিযোগ করে বলেন 'হত্যাকারী, রক্তচোষা ও সুযোগসন্ধানী বিপজ্জনক লোকজন পাঠাচ্ছে।'
ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক ঘটনাকে সামনে রেখে ট্রাম্প সব 'থার্ড-ওয়ার্ল্ড দেশ' থেকে অভিবাসন সাময়িক স্থগিতের আহ্বান জানান।
ইউএসসিআইএস সামাজিক মাধ্যমে জানায়, বাইডেন প্রশাসনের সময় যেসব বিদেশি যাচাইবাছাই ছাড়াই দেশে ঢুকেছে বলে অভিযোগ তাদের সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে আমেরিকান জনগণকে সুরক্ষায় ইউএসসিআইএস দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সব সম্ভাব্য পদক্ষেপ বিবেচনায় রয়েছে।
এ পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে শিগগিরই অভিবাসন অধিকার গোষ্ঠীগুলোর তীব্র সমালোচনা ও আইনি চ্যালেঞ্জ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মুরাদ আওয়াওদে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাদের অনেকেই বহু বছরের কঠোর যাচাই-বাছাই শেষে দেশে এসেছে। নিরাপত্তা ও নতুন জীবনের সন্ধানেই তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে। আইনগত সুরক্ষা ছিনিয়ে নেওয়া হলে পরিবার ও কমিউনিটিতে ভীতির পরিবেশ তৈরি হবে এবং স্থিতিশীলতা ধসে পড়বে।