শিরোনাম
◈ ন্যায়বিচার পেয়েছেন তারেক রহমান: ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ◈ জি এম কাদের ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ◈ তারেক রহমান দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন: আযম খান ◈ বিশ্বব‌্যাপী মা‌র্কিন প্রভা‌ব রুখ‌তে ইরান ও চীনের ২৫ বছরের ব্যাপক চুক্তি ◈ ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী ও পরিবারের ৮ হাজার কোটি টাকার লেনদেন ◈ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কক্সবাজারে, কৌতূহল ◈ আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০ গাড়ি কেনা হচ্ছে ◈ সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারে তাণ্ডব, হামলার নেপথ্য কারন যা জানাগেল ◈ এবার জেলেনস্কিকে মস্কোয় আমন্ত্রণ জানালেন পুতিন ◈ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক রহমান-বাবরের খালাসের রায় আপিল বিভাগেও বহাল

প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:০৬ দুপুর
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

আ‌মে‌রিকার নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে চীনের জোরালো বার্তা

এল আর বাদল : তিয়েনআনমেন স্কয়ারে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল কামানের গোলার শব্দ, আর বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল সেনাদের প্রথম দলটি। কিন্তু এসবের আগেই সামনে এলো দিনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি।

দীর্ঘ সময় ধরে হাত মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনকে স্বাগত জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, এরপর অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে। একটু পর বিশ্বের সবচেয়ে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত এই দুই নেতাকে পাশে নিয়ে নিজের আসনে বসেন শি।

এটিকে বলা যায় নিছক রাজনৈতিক নাটক। চীনের সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শনীর চেয়ে এই বৈঠকটিই বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিরক্তই বেশি করেছে বলে মনে হচ্ছে। --- বি‌বি‌সি বাংলা

চীনে কুচকাওয়াজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে কঠোর ভাষায় একটি বার্তা পাঠান ট্রাম্প, যেখানে তিনি এই তিন নেতার বিরুদ্ধে আমেরিকা-বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন। পুরো প্যারেড জুড়ে পুতিনকে ডানে এবং কিমকে বামে রেখে প্রেসিডেন্ট শি সম্ভবত এমন প্রতিক্রিয়াই আশা করেছিলেন।

এমনকি এই মুহূর্তটি এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষুব্ধ করার জন্যও তৈরি করা হতে পারে, যিনি সম্ভবত বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতেই পছন্দ করেন।

সব মনযোগ মূলত নিজের দিকেই টেনে নিয়েছেন চীনা নেতা, যা ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলের-নেতৃত্বাধীন একটি জোটের ওপর নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাব জাহির করতে পেরেছেন। এটি এমন একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী যা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ট্রাম্পের নেতৃত্বের নানা কারণে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, তখন শি'র কাছ থেকে এটি একটি জোরালো বার্তা। কিম এবং পুতিন ছাড়াও আরও ২০ জনেরও বেশি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সপ্তাহের শুরুতে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে শি'র সাক্ষাৎ নিজেদের মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে।

ভারতীয় পণ্য আমদানির ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে দীর্ঘদিনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন-ভারতের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে বলেও মনে হচ্ছে।

বুধবার চীনের এই আয়োজনে মূলত জাপানের বিরুদ্ধে ৮০ বছরের পুরনো বিজয় উদযাপনের কথা ছিল। কিন্তু এটি আসলে সামনে তুলে ধরেছে–– ভবিষ্যতে চীন কোথায় যাচ্ছে সেদিকে এবং একজন বিশ্বনেতা হিসেরে শি-এর ভূমিকা পালনের বিষয়টিকে।

আর পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো একটি সামরিক বাহিনীও যে চীন গড়ে তুলেছে সেটাও ছিল শি জিনপিংয়ের সামনেই।

চীনের হাতেই এখন ক্ষমতার লাগাম

এই প্রথম একসাথে দেখা গেল শি, পুতিন ও কিমকে। আর তারা একসাথে, ঐতিহাসিক 'গেট অব হ্যাভেনলি পিস' স্কয়ারে উঠলেন সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার জন্য। এর প্রতীকী রূপটিও নজর এড়ায়নি।

কমিউনিস্ট চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও জেদং ১৯৪৯ সালে দেশটিতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১০ বছর পর সেখানেই তিনি কিমের দাদা কিম ইল-সাং এবং তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভকে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেবারই শেষবারের মতো এই তিন দেশের নেতারা একসাথে ছিলেন।

তখন কোল্ড ওয়ার পরিস্থিতি ছিল তুঙ্গে। বিশ্বের বেশিরভাগ অংশ থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিল চীন, যেমনটি ছিল উত্তর কোরিয়াও। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ধনী।

এখন এই সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী, কিন্তু দরিদ্র দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার বেইজিংয়ের সাহায্য প্রয়োজন। আর পুতিনের প্রয়োজন সেই বৈধতা যা শি তাকে দিয়েছেন।

অতীতে পুতিন এবং কিমের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন শি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিলেন বলেই মনে হয়েছিল। অবশ্য এই ঘটনার নিন্দাও করেননি তিনি। এমনকি রাশিয়াকে সাহায্য করার কথাও অস্বীকার করেছিল চীন।

এমনকি রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল যে তিনি হয়তো পাশে ছিলেন। অর্থ এবং প্রযুক্তির বিনিময়ে পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণকে সমর্থন করার জন্য সৈন্যও পাঠিয়েছেন কিম।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শি তার দুই প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, যদিও তারা কিয়েভ আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

চিন্তিত পশ্চিমারা

সামরিক ফ্লাইপাস্ট দেখার জন্য মূল প্যারেড রুট থেকে কিছুটা দূরে চীনের টংহুই নদীর ওপরে একটি সেতুতে জড়ো হয়েছিলেন কিছু সাধারণ মানুষ। ৩০ বছর বয়সী মি. রং বলেন, তিনি প্যারেডটি দেখতে পেয়েছেন।

এই মুহূর্তটিকে লালন করা আমাদের সবচেয়ে মৌলিক কাজ। আমরা বিশ্বাস করি আমরা ২০৩৫ সালের মধ্যে তাইওয়ান পুনরুদ্ধার করব, তিনি ঘোষণা করেন।

যে বক্তব্যের ভয়ে ভীত স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের অনেকেই। চীন অবশ্য বিশ্বাস করে যে এটি একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ যা একদিন মাতৃভূমির সাথে একত্রিত হবে। যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি শি।

বুধবার তিনি যে অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন, তার বেশিরভাগই চীনের নৌ-ক্ষমতার ওপর জোর দিয়েছিল, যা তাইওয়ানের নেতাদের চিন্তায় ফেলতে বাধ্য।

অনেক পশ্চিমা দেশকেও উদ্বিগ্ন করবে। বিশেষ করে ইউরোপে, যারা এখনও ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য লড়াই করছে।

পশ্চিমা নেতারা কুচকাওয়াজ এড়িয়ে গেছেন–– এমন ধারণাকে উড়িয়ে দেন ৭৫ বছর বয়সী হান ইয়ংগুয়াং।

"আসবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার," তিনি বলেন। "চীনের দ্রুত উন্নয়নে তারা ঈর্ষান্বিত। সত্যি বলতে, তারা হৃদয়ে আক্রমণাত্মক। আমরা মানবজাতির সাধারণ সমৃদ্ধির জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আলাদা।

কুচকাওয়াজ এমন এক সময়ে জাতীয়তাবাদের ঢেউকে উসকে দিচ্ছে যখন চীন গুরুতর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের সাথে লড়াই করছে। একটি মন্থর অর্থনীতি, আবাসন সংকট, বয়স্ক জনসংখ্যা, উচ্চ যুব বেকারত্ব এবং স্থানীয় সরকারগুলো ঋণের গভীরে ডুবে আছে।

বিশ্বমঞ্চে চীন যতই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুক না কেন, প্রেসিডেন্ট শি'কে অবশ্যই একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে যাতে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত না হয়।

একসময় চীনের অর্থনৈতিক উত্থান অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হত, কিন্তু এখন আর তা নেই। তাই এই কুচকাওয়াজ - পুরোনো শত্রু জাপান সম্পর্কে সমস্ত বাগাড়ম্বর সহ - বিভ্রান্তিকরও হতে পারে। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রের দীর্ঘ প্রদর্শনীর পর, বেইজিংয়ের আকাশে হাজার হাজার ঘুঘু এবং বেলুন উড়িয়ে কুচকাওয়াজ শেষ হয়।

গান, মিছিল, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, এমনকি "রোবট নেকড়ে" এগুলো থাকলেও চীনের সংগ্রাম সম্পর্কে খুব বেশি কিছু ছিল না এই আয়োজনে।

বরং, এটি ছিল চীন কতটা এগিয়েছে - এবং কীভাবে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাল মিলিয়ে আধিপত্যের জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তা নিয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়