শিরোনাম
◈ ৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর ◈ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি: সিইসি ◈ স্কুল-কলেজ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন বিধি ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডের হা‌ন্ড্রেড ব‌লের খেলায় টানা তৃতীয়বার শিরোপা জিতলো ওভাল ইনভিনসিবলস ◈ আসন্ন নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার করতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে: ট্রেসি অ্যান জেকবসন ◈ ভারতীয় উদ্যোক্তারা মহাদুশ্চিন্তায়, ‘কীভাবে শ্রমিকদের বেতন দেব?’ ◈ নির্বাচনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী মোতায়েন করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ জরুরি অবস্থা বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সম্ভাবনার বিষয়ে অবগত নই: আইন উপদেষ্টা ◈ হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালতে স্থগিত, ডাকসু নির্বাচনে ‘বাধা নেই’ ◈ পুতুলের সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে

প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:৩৩ দুপুর
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : আর রিয়াজ

ভারতীয় উদ্যোক্তারা মহাদুশ্চিন্তায়, ‘কীভাবে শ্রমিকদের বেতন দেব?’

বিবিসি প্রতিবেদন: ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক আরোপ ভারতীয় কারখানাগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর দেশটির উদ্যোক্তারা কঠিন এক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। কারখানা টিকিয়ে রাখাই তাদের কাছে এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম টেক্সটাইল রপ্তানি কেন্দ্র তিরুপুরে এন কৃষ্ণমূর্তি’র পোশাক উৎপাদন ইউনিটে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছে।

মেঝেতে প্রায় ২০০টি শিল্প সেলাই মেশিনের মাত্র একটি অংশ চালু আছে, কারণ শ্রমিকরা কিছু বৃহৎ মার্কিন খুচরা বিক্রেতার জন্য মৌসুমের শেষ অর্ডার পাওয়া শিশুদের পোশাক তৈরি করছে। ঘরটির আরেক প্রান্তে নতুন ডিজাইনের জন্য কাপড়ের নমুনার স্তূপ ধুলো জমেছে। এটি এখন ভারতের উপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রশ্নবোধক ছবি হয়ে উঠেছে। 

ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক, চিংড়ি এবং রত্ন ও গহনা সহ পণ্যের একটি প্রধান রপ্তানিকারক। বিবিসি সংবাদদাতারা ভারত জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি কেন্দ্রগুলি পরিদর্শন করেছেন বাণিজ্য অনিশ্চয়তা কীভাবে ব্যবসার মালিক এবং জীবিকাকে প্রভাবিত করছে তা মূল্যায়ন করতে। শুধু তিরুপুর থেকে ভারতের ১৬ বিলিয়ন ডলার (১১.৯৩ বিলিয়ন পাউন্ড) রেডি-টু-ওয়্যার পোশাক রপ্তানি হত যা দেশটির এ ধরনের রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করত। এখন সেখানে ওয়ালমার্ট, গ্যাপ এবং জারা’র মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলির ব্যবসা ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ বিরাজ করছে। 

এন কৃষ্ণমূর্তি জানান, ‘ক্লায়েন্টরা সমস্ত অর্ডার স্থগিত করে দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের পর থেকে, হয়তো আর কিছুই করার থাকবে না। ইতিমধ্যে উৎপাদনের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা স্থগিত ও শুল্ক আরোপের আগে নিয়োগকৃত আড়াইশ নতুন কর্মীকে বাদ দিতে হয়েছে। অথচ বড়দিনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ রপ্তানি ব্যবসার বার্ষিক বিক্রয়ের প্রায় অর্ধেক এই সময়ে উৎপাদন হত। এখন এই ইউনিটগুলি দেশীয় বাজার এবং ভারতে আসন্ন দীপাবলি মৌসুমের উপর নির্ভর করছে, টিকে থাকার জন্য।’

অন্তর্বাস তৈরির আরেকটি কারখানায় বিবিসি সংবাদদাতারা গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অর্ডার পাওয়া প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারের মজুদ দেখতে পান। র‌্যাফট গার্মেন্টসের মালিক শিবা সুব্রামানিয়াম বিবিসিকে বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম ভারত আমেরিকার সাথে একটি বাণিজ্য চুক্তি করবে। গত মাসে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা স্থগিত করা হয়েছিল। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমি শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেব?” 

৫০% শুল্ক হারে, ভারতীয় তৈরি একটি শার্ট যা একসময় ১০ ডলারে বিক্রি হত, তার দাম পড়বে মার্কিন ক্রেতাদের ১৬.৪০ ডলার - যা চীনের ১৪.২০ ডলার, বাংলাদেশের ১৩.২০ ডলার অথবা ভিয়েতনামের ১২ ডলারের চেয়ে অনেক বেশি। শুল্ক ২৫% হ্রাস করলেও ভারত তার এশিয় প্রতিযোগিদের তুলনায় কম প্রতিযোগিতামূলক হবে। এই ধাক্কা সামলাতে ভারত সরকার কাঁচামালের উপর আমদানি শুল্ক স্থগিত করে বাজারকে বৈচিত্রময় করতে অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করলেও উদ্যোক্তরা শঙ্কা খুব দেরি হয়ে গেছে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, মার্কিন ক্রেতারা মেক্সিকো, ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশে চলে যাওয়ার সাথে সাথে বাণিজ্যের মোড় ঘুরবে।

মুম্বাইয়ের একটি রপ্তানি অঞ্চলে, শত শত শ্রমিক ভারতের ১০ বিলিয়ন ডলারের রত্ন ও অলংকার রপ্তানি বাণিজ্যের অংশ, যারা হীরা পালিশ এবং প্যাকিংয়ে ব্যস্ত। তারা সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে তাদের বিক্রয়ের উপর শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। ৩-৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গহনা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে ভারত। ক্রিয়েশন জুয়েলারির আদিল কোতোয়াল, যিনি তার হীরাখচিত গহনার ৯০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেন, তিনি বিকল্প হিসেবে যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার বাজার সম্ভাবনা দেখলেও যুক্তরাষ্ট্রে বছরে পর বছর ধরে গড়ে তোলা বাজার কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যর্থ হতে পারে বলে শঙ্কা করেন। আদিল ৩-৪% এর সামান্য মার্জিনে কাজ করেন, তাই ১০% অতিরিক্ত শুল্ক হারে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন। তার প্রশ্ন এই শুল্ক কে বহন করতে পারবে? এমনকি মার্কিন খুচরা বিক্রেতারাও [তা করতে] পারবে না। তার ওপর ল্যাব-উৎপাদিত হীরার প্রতিযোগিতায় মার্কিন শুল্ক আরোপের অনেক আগে থেকেই তারা সংকটে পড়েন। 

আমেরিকান গ্রাহকরা অদৃশ্য হয়ে গেছেন এবং প্রায় পঞ্চাশ লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহকারী কারখানাগুলি এখন প্রতি মাসে মাত্র ১৫ দিন কাজ করছে। শত শত ঠিকাদার কর্মীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শহরের উপকণ্ঠে একটি আবছা আলোয় আচ্ছন্ন হীরা পালিশিং ইউনিটের ভিতরে, ধুলোময়, অব্যবহৃত টেবিলের সারি নীরবতা ছড়িয়ে আছে। কাছাকাছি, ভাঙা সিপিইউ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। একজন কর্মী বলেন, “এই জায়গাটি আগে অনেক কর্মীর গুঞ্জন থাকলেও সম্প্রতি অনেক লোক চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আমরা জানি না আমাদের কী হবে।”

ইউনিটটি তৈরি করা শৈলেশ মাঙ্গুকিয়া একসময় ৩০০ কর্মী নিয়োগ দিলেও  এখন মাত্র ৭০ জন রয়েছেন। প্রতি মাসে পালিশ করা হীরার সংখ্যা ২০০০ থেকে কমে মাত্র ৩০০-এ দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ভাবেশ ট্যাঙ্ক জানান, শ্রমিকরা “হ্রাসমান মজুরি, জোরপূর্বক ছুটি এবং মাসিক আয় হ্রাস”-এর মুখোমুখি হচ্ছেন।

এদিকে, ভারতের অনেক চিংড়ি চাষী এই ধাক্কা থেকে বাঁচতে অন্যান্য পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যান্য শুল্কের পাশাপাশি, চিংড়ির উপর মোট শুল্ক এখন ৬০% এর উপরে উঠার পর প্রতি কিলোতে দাম ০.৬০-০.৭২ ডলার কমেছে এবং ৫০% হার কার্যকর হওয়ার পরে আরও কমবে। রপ্তানিকারক থোটা জগদীশ বিবিসিকে বলেন, “বড়দিন এবং নববর্ষের বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন মার্কিন ক্রেতাদের জন্য এটি সর্বোচ্চ মৌসুম। এখানকার কৃষকরা সবেমাত্র তাদের নতুন চাষাবাদ চক্র শুরু করছেন। ট্রাম্পের শুল্কের ফলে বিরাট বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না, হ্যাচারি পরিচালকরা চিংড়ির লার্ভা উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছেন।”

বীরভসারম শহরের শ্রীমন্নারায়াণ হ্যাচারির এমএস ভার্মা বলেন, আগে, তারা বার্ষিক গড়ে ১০০ মিলিয়ন চিংড়ির লার্ভা উৎপাদন করলেও এখন, ৬০-৭০ মিলিয়নেও রাখা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি সরাসরি ৫ মিলিয়ন চিংড়ি চাষীর জীবিকা এবং পরোক্ষভাবে আরও ২.৫ মিলিয়ন চিংড়ি চাষীর জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী কর্মসংস্থান সংকটের কারণে ইতিমধ্যেই ভুগছে ভারতের মত এমন একটি দেশে, এই পরিসংখ্যানগুলি উদ্বেগজনক। আপাতত, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে অচলাবস্থা অব্যাহত এবং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাণিজ্য আলোচনার পরিবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। দিল্লিতে সর্বশেষ বাণিজ্য আলোচনা বাতিলের পর মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতের সমালোচনা দ্বিগুণ করেছেন।

দ্য এশিয়া গ্রুপের উপদেষ্টা সংস্থা গোপাল নাদাদুর বিবিসিকে বলেন,‘ভারত-মার্কিন আলোচনার ভবিষ্যত এখন ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারের উপর, রাশিয়া ও চীনের সাথে জড়িত অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করছে, ভারতের নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ী নেতাদের আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি, বৈচিত্র আনা এবং কোনও কসরত না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়