পার্স টুডে : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনী গতকাল (রোববার) রাতে 'ট্রু প্রমিজ-৩' অপারেশনের তৃতীয় পর্যায় শুরু করে ইসরাইলের উপর শক্তিশালী আঘাত হেনে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাবে বিশেষ করে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কমান্ডার, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং নিরীহ নাগরিক বিশেষ করে নিরপরাধ শিশুদের হত্যার জবাবে, ইরান শুক্রবার রাত থেকে দখলকৃত ভূমির দিকে হামলা শুরু করেছে এবং এখনো এই হামলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়নি।
পার্স টুডের এই প্রতিবেদনে 'ট্রু জাস্টিস ৩' অপারেশনের তৃতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তেহরান সময় রাত ৯:১৫
ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) ক্ষেপণাস্ত্রগুলো 'ট্রু জাস্টিস ৩' অপারেশনের তৃতীয় পর্যায়ে ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে যায়। এই সম্মিলিত- অপারেশনে আইআরজিসি'র মহাকাশ ও বিমান বাহিনী ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ঘোষণা করেন, "অবৈধ ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদেরকে অবিলম্বে দখলকৃত ভূমি ত্যাগ করতে হবে। কারণ এটি শিগগিরই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।"
রাত প্রায় ৯:৩০
ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর দ্বিতীয় ঢেউ দখলকৃত ভূমির দিকে ছোড়া হয়। ইসরাইলি মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়: "কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হাইফায় আঘাত হেনেছে এবং ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।"
ইসরাইলের চ্যানেল ১৪ জানায়, "ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো হাইফায় আঘাত করে অনেক ভবন ধ্বংস করেছে।" তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
রাত প্রায় ১০:০০
ইসরাইলি গণমাধ্যম জানায়, রোববার রাতে ইরানের হামলা ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা কোম্পানি "রাফায়েল"-এর কারখানাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, যারা ‘আয়রন ডোম’ তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত।
ইসরাইলি ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস ইরানের ভারী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, আল-কুদস ব্রিগেড এবং উত্তর ব্রিগেড এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। হিব্রু মিডিয়া আরও জানায় যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হাইফা শোধনাগারে আঘাত করেছে, যা ইউরোপের তেল ও শক্তি সরবরাহ করে।
রাত প্রায় ১১:০০
আইআরজিসি'র জনসংযোগ বিভাগ 'ট্রু জাস্টিস ৩' অপারেশনের তৃতীয় পর্যায়ের একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, "আইআরজিসি'র মহাকাশ ও বিমান বাহিনীর যোদ্ধারা ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধের প্রতিশোধ হিসাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি ধাপ পরিচালনা করেছে।"
মধ্যরাত প্রায় ১২:১৫
দখলকৃত ভূমির ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানায় যে, "একটি ক্ষেপণাস্ত্র উপকূলীয় এলাকার দুটি ভবন এবং আরেকটি দক্ষিণাঞ্চলে সরাসরি আঘাত হেনেছে।" এছাড়া, জেরুজালেম এবং দখলকৃত ভূমির উত্তরে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরাইলে সর্বশেষ হামলায় প্রায় ৩০টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক সেন্সরশিপ সংস্থা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের স্থানের কোনো ভিডিও প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছে।
রাত প্রায় ১:০০
দখলকৃত ভূমির উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত একটি সতর্কতা জারি করে বলা হয়: "নিকটতম আশ্রয়কেন্দ্রে যান।" এই সতর্কতার কয়েক মিনিট পরে, হিব্রু মিডিয়া জানায়, "আমরা বিভ্রান্ত, কারণ কিছু সিস্টেম ইরানের হামলার রিপোর্ট করছে, অন্য কিছু রিপোর্ট ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অস্বীকার করছে।"
রাত ২:০০ থেকে ভোর ৫:৩০ পর্যন্ত
'ট্রু জাস্টিস ৩' অপারেশনের তৃতীয় পর্যায়ের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম ঢেউ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। ইরান এই হামলায় দখলকৃত ভূমির বিভিন্ন অঞ্চল যেমন তেল আবিব, হাইফা, নেগেভ, বনি ব্রাক, বেথ এল, পেটাহ টিকভা, নেটিভট এবং আয়ালনকে টার্গেট করেছে।
কাতারের আল জাজিরা ইসরাইলি মিডিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, "ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, এই হামলায় ইরানের প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের দিকে ছোড়া হয়েছে।"
বিভিন্ন মিডিয়া আরও জানায়: "ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দখলকৃত নেগেভের একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেছে এবং সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ভেতরে থাকা কয়েকজন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছে।"
Ynet লিখেছে: "ইরান এখনও তার এক বা দেড় টন ওজনের ক্ষেপণাস্ত্র বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি। আমাদের রাজনৈতিক সমাধানের দিকে তাকাতে হবে।"
ভোর প্রায় ৬:০০
আইআরজিসি সময়ে 'ট্রু জাস্টিস ৩' অপারেশনের অষ্টম ঢেউ-এর একটি বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, "অভিযানের অষ্টম ঢেউয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেমে আঘাত হানা হয়। শত্রু পক্ষে বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং এমনকি কিছু প্যাড নিজের দিকেই গুলি চালায়। শহীদ বাকেরি, সালামি, হাজি জাদেহ ও অন্যান্য শহীদদের প্রযুক্তিগত অবদান এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তির সর্বাত্মক সহযোগিতা সত্ত্বেও, আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।
'ইসরাইল সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে'
আইআরজিসি এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে যে, 'ট্রু জাস্টিস ৩' এবং ভবিষ্যতের অপারেশনগুলো আগের অপারেশনগুলোর চেয়ে আরও শক্তিশালী, কঠোর, সঠিক এবং ধ্বংসাত্মক হবে।" সেইসঙ্গে এই বার্তা দেওয়া হয় যে, যতক্ষণ না ইসরায়েল পুরোপুরি ধ্বংস হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আক্রমণ চলবে এবং আরও কার্যকর ও বিধ্বংসী অভিযান পরিচালিত হবে।
