এল আর বাদল : পাকিস্তানকে এ বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোণঠাসা করার কথা ভাবছে ভারত সরকার? আন্তর্জাতিক দিক থেকে পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে সক্রিয় হতে পারে নয়াদিল্লি। এমনটাই দাবি কয়েকটি রিপোর্টে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপও করা হয়েছে। সূত্রের খবর, এ বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে এবং পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদকে দমন করতে পদক্ষেপ নিতে পারে নয়াদিল্লি। --- সূত্র, আনন্দবাজার
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদতের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ভারত বার বার দাবি করে এসেছে, সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয় পাকিস্তান। তারাই ভারতে নানা ভাবে হামলা চালায়। পাকিস্তানের মাটিতে বসেই সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনা করা হয়। ভারতের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাকিস্তান যে আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে, সেগুলির অপব্যবহার করা হয়। সেই টাকা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজে না লাগিয়ে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদতের জন্য খরচ করে থাকে। ভারত এই দীর্ঘ দিনের দাবিকেই এ বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও জোরদার করতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে মূলত দু’টি পদক্ষেপের ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
প্রথমত, আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারে (আইএমএফ) পাকিস্তান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে চলেছে ভারত। আইএমএফ থেকে পাকিস্তান ৭০০ কোটি ডলার (প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা) অর্থসাহায্য পাচ্ছে। এই সংক্রান্ত তিন বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। তিন বছর ধরে ওই পরিমাণ টাকা পাকিস্তানকে দেওয়া হবে আইএমএফ থেকে। ভারতের অভিযোগ, এই টাকার অপব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদের জন্য খরচ করছে পাকিস্তান। আইএমএফ-এও এই দাবি তুলে চাপ বৃদ্ধি করতে চলেছে নয়াদিল্লি।
দ্বিতীয়ত, ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ধূসর তালিকায় (গ্রে লিস্ট) পাকিস্তানের নাম পুনরায় যোগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর চাপ বৃদ্ধি করা হতে পারে। এফএটিএফ একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা, যা ১৯৮৯ সালে জি৭ বৈঠকে আত্মপ্রকাশ করেছিল। আর্থিক তছরুপ এবং সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদতের বিরুদ্ধে কাজ করে এই সংস্থা। যে সমস্ত দেশ এই সংস্থার ধূসর তালিকায় থাকে, সেই দেশগুলির কার্যকলাপের উপর আন্তর্জাতিক নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এফএটিএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হয় এই দেশগুলিকে। পাকিস্তান এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় দীর্ঘ দিন ছিল।
২০১৮ সালে ওই তালিকাভুক্ত হয়েছিল তারা। পরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপের নিশ্চয়তা দিয়ে ২০২২ সালে তালিকা থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নেয় ইসলামাবাদ। সূত্রের খবর, আবার সেই তালিকায় পাকিস্তানের নাম যোগ করার বিষয়ে এফএটিএফ-কে চাপ দিতে পারে ভারত। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
যদি পাকিস্তানকে আবার ধূসর তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে এফএটিএফ, তবে পাক সরকারের যাবতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, চুক্তি এবং লেনদেনের উপর নজরদারি চালানো হবে। নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে পাকিস্তানে বিদেশি সংস্থার বিনিয়োগ। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্রম অবনতি অব্যাহত। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সীমান্ত এবং আকাশসীমা। পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে পরমাণু শক্তিধর দু’টি দেশকেই সংযত হওয়ার বার্তা দিচ্ছে আমেরিকা। সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ না করে ভারত তাই পরোক্ষ পদক্ষেপের কথা ভাবছে বলে সূত্রের খবর।