শিরোনাম
◈ শুধুমাত্র আ‌মে‌রিকার কার‌ণে ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকে আছে: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ◈ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে ◈ 'তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন' যুদ্ধবিরতিতে সম্মত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় চুক্তি ◈ শহীদ মাহফুজের গল্প: সেনা হতে চাওয়া কিশোর আজ ইতিহাসের রক্তাক্ত পাতা ◈ নোয়াখালী শহর ডুবল ৩ ঘন্টার বৃষ্টিতে, দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ ◈ ৭ জরুরি নির্দেশনা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ◈ ৫ সমন্বয়ক গ্রেফতারের খবরে বেদনায় নীল হয়ে গেছি, এ কোন দুর্দিনে আমরা? মির্জা ফখরুল ◈ জয়েই আস্থা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের! গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত ◈ জোয়ারের পানিতে ক্ষতবিক্ষত সেন্টমার্টিন, চার দিন পর শুরু নৌযান চলাচল ◈ লালমনিরহাটে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, উল্টে গেছে ২ বগি

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০২৫, ১০:৫৬ দুপুর
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

ওয়া‌সিংটন সুন্দর ও জাদেজার লড়াইয়ে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখলো ভারত 

স্পোর্টস ডেস্ক :  ম্যাঞ্চেস্টারে ভারত ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচের পঞ্চম দিনের তৃতীয় সেশনে দফায় দফায় চলল নাটক। ম্যাচে প্রথম চারদিনে কী হল না হল সেই সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল পঞ্চম দিনের তৃতীয় সেশনের কয়েক মিনিটের ঘটনা। 

এদিন দ্বিতীয় সেশন থেকে অনবদ্য লড়াই লড়লেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ডের একের পর এক স্পিন বোলিং, জোফ্রা আর্চার এবং বেন স্টোকসের বাউন্সার সব সামলে দলকে নিয়ে গেলেন নিরাপদ জায়গায়। তারপর একপ্রকার ছেলেখেলা করলেন ইংল্যান্ড বোলারদের নিয়ে। অবশেষে ড্র হল টেস্ট ম্যাচ। তৃতীয় সেশনে তখন জাদেজা এবং ওয়াশিংটন ব্যাট করছেন আশির ঘরে। সেই পরিস্থিতিতে হঠাৎ এগিয়ে এলেন বেন স্টোকস।
 
আম্পায়ারের কাছে নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন, বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, তারা আর খেলতে চান না, ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হোক। কিন্তু নাটকের তখনও বাকি ছিল। হ্যান্ডশেক করতে রাজি হলেন ক্রিজে থাকা দুই ভারতীয় ব্যাটার। ক্রিকেটের নিয়ম বলছে, দুই দলের খেলোয়াড় সম্মতি দিলে তখনও ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হবে। কিন্তু দুই ভারতীয় ব্যাটার তখন শতরানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। 

তাদের সিদ্ধান্তে খুশি হননি একজন ইংলিশ ক্রিকেটারও। বেন স্টোকস এসে জাদেজাকে বলে গেলেন, আমি এবার হ্যারি ব্রুককে দিয়ে বল করাব। তুমি কি ওর বলেই শতরান করতে চাও?’ ক্রলি এসে সোজা প্রশ্ন করে বসলেন, ‘হ্যান্ডশেক করলে না কেন?’ কিন্তু দুই ব্যাটার নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়।  ইংল্যান্ড অধিনায়ক এবার ফিল্ডিং সব সামনে রেখে বোলিংয়ে নিয়ে এলেন একদিকে ব্রুক অবং অন্যদিকে রুটকে। ধেয়ে এল একের পর এক লুজ বল, একের পর এক ফুলটস।

দুই ভারতীয় ব্যাটার ইংলিশ বোলারদের পিটিয়ে ছাতু করে শতরান পূর্ণ করলেন নিজেদের। তখন হাততালিতে ফেটে পড়ছে গোটা ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। নাটক চলল তারপরেও। 

দুই ব্যাটারের অনবদ্য লড়াইয়ের প্রশংসা তো নয়ই, ড্র হওয়ার পরে কোনওরকমে হাত মিলিয়েই স্টোকস হাঁটা দিলেন উল্টোদিকে। তারপরেও চলল কথোপকথন। কমেন্টেটরদের কথায়, শেষ মুহূর্তের এই নাটক ভিত করে দিল চারদিন পর থেকে শুরু হতে চলা ওভাল টেস্টের। 

এদিন অনবদ্য লড়াই লড়ে জাদেজা অপরাজিত রইলেন ১০৭ রানে। ওয়াশিংটন সুন্দর করলেন ১০১ রান। গোটা পাঁচটা সেশন বোলিং করে এবং শূন্য রানে ভারতের দু’উইকেট ফেলে দিয়েও ইংল্যান্ড মাত্র চার ভারতীয় ব্যাটারকেই ফেরাতে পারল প্যাভিলিয়নে। শেষ সেশনে স্টোকসদের মধ্যে পরিষ্কার ধরা পড়ল ধৈর্য্যের অভাব। কোনও পরিকল্পনাই কাজ না করায় শেষে বিতর্ক তৈরি করেও লাভ হয়নি।

ভারত থামল চার উইকেট হারিয়ে ৪২৫ রানে। জাদেজা এবং ওয়াশিংটন পার্টনারশিপ গড়লেন ২০৩ রানের। 

গিল এবং রাহুল আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ডের মনে যে সামান্য আশার প্রদীপ জ্বলেছিল তা সহজেই নিভিয়ে দিলেন দু'জনে। লর্ডসে যে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এদিন ম্যাচ বাঁচিয়ে ভারত বুঝিয়ে দিল এখনও সিরিজ ফুরিয়ে যায়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে ০-২ হওয়ার পর দলের হাল ধরেছিলেন গিল এবং রাহুল। চতুর্থ দিনের শেষে তাঁদের পার্টনারশিপই ম্যাচে রেখেছিল ভারতকে। 

সমর্থকরা আশা করেছিলেন রবিবার তাঁরা দিনের বেশিরভাগ সময়টা ব্যাট করে বাঁচিয়ে দেবেন ম্যাচ। কিন্তু এদিন দিনের শুরুটা ভাল করলেও স্টোকসের একটা বিষাক্ত বল পিচে পড়ে সোজা কেএল রাহুলের প্যাডে লাগে। তিনি আর ফিরেও তাকাননি, সোজা হাঁটা দেন ডাগ আউটের দিকে।

১০ রানের জন্য শতরান মিস করে কেএল রাহুল আউট হন ৯০ রানে। ঋষভ পন্থ ব্যাট করবেন কিনা জানা নেই।  রাহুলের পর নামেন ওয়াশিংটন সুন্দর। অন্যদিকেস ভালই খেলছিলেন শুভমান গিল। পিচ অসমান বাউন্স থাকায় বেশ কয়েকবার বল এসে লাগে তাঁর বুড়ো আঙুলে। এক একটা বল ডিফেন্স করার পর পরিষ্কার তাঁর চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ দেখা যাচ্ছিল। তবে তা নিয়েও শতরান করেন গিল। ১৯৯০ সালে শচীন তেন্ডুলকারের পর গিলই প্রথম ভারতীয় ব্যাটার যিনি ম্যাঞ্চেস্টারে শতরান করলেন। ৯০ থেকে ১০০ রানে পৌঁছতে তাঁর লেগে যায় ৩৬ বল। এই শতরানের সঙ্গে তিনি ছুঁয়ে ফেললেন ডন ব্র্যাডম্যান এবং সুনীল গাভাসকারকে।

একই টেস্ট সিরিজে সবথেকে বেশি শতরান করা অধিনায়কের তালিকায় লেজেন্ডদের ছুঁয়ে ফেললেন ভারতীয় দলের নব অধিনায়ক। তবে শতরানের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে টেকেননি তিনি। জোফ্রা আর্চারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে কিপার স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন। গিলের পর নামা জাদেজাও প্রথম বলে ফিরে যাচ্ছিলেন। জো রুট ক্যাচ না ফেললে আরও বিপদ বাড়ত টিম ইন্ডিয়ার। 

উল্লেখ্য, শনিবার জয়সওয়াল এবং সুদর্শন ফেরার পর ম্যাচের হাল ধরেন লোকেশ রাহুল ও শুভমান গিল। ১৭৪ রানের পার্টনারশিপ দুই ব্যাটারের। ভারতীয় বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা করে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে। 

তৃতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ছিল ৭ উইকেটে ৫৪৪। চতুর্থ দিনের শুরুতে বুমরাহর বলে লিয়াম ডসন (২৬) আউট হলেও ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকস ছিলেন দুরন্ত। তাঁকে রোখে কার সাধ্যি! স্টোকস খেললেন ১৪১ রানের ইনিংস। ব্রাইডন কার্সকে সঙ্গে নিয়ে ৯৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। 

সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পর স্টোকস আরও গতি আনেন নিজের ব্যাটিংয়ে। ভারতীয় বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন স্টোকস। ১৬৪ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। বাকি ৪১ রান করেন ৩৪ বলে। শেষমেশ জাদেজার বলে তাঁর ক্যাচ ধরেন সাই সুদর্শন। স্টোকসের ইনিংসে সাজানো ছিল ১১টি চার ও ৩টি ছক্কা। ব্যক্তিগত ৪৭ রানে আউট হন কার্স। 

তিনি জাদেজার শিকার। ভারতীয় বোলিং নির্বিষ দেখায়। জাদেজা চার-চারটি উইকেট নেন। বুমরা ও ওয়াশিংটন সুন্দর ২টি করে উইকেট নেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়