শিরোনাম
◈ প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এনডিএ: কেন, কিভাবে, কতটা যৌক্তিক? ◈ ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতির অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ: আশিক চৌধুরী ◈ যশোরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে  বিএনপির ৬ নেতা, কর্মীকে বহিঃস্কার ◈ জুয়ার আসর থেকে ইউনিয়ন জামাতের সভাপতি ও ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ১৪ ◈ ৬০০০ রানের মাইলফলকে জো রুট ◈ জুলাই অভ্যুত্থানের গেজেট থেকে ৮ শহীদের নাম বাদ, তালিকা প্রকাশ ◈ এনসিপির ইশতেহার ঘোষণা, ছাত্রদলের সমাবেশে নির্বাচনমুখী বক্তব্য ◈ ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক ◈ জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠান: এবার ৮ জোড়া ট্রেন ভাড়া করল সরকার ◈ কুমিল্লায় ইউপি সদস্যকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:৪৯ সকাল
আপডেট : ০৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু আজ, সরাসরি সম্প্রচার

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ রোববার পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করবেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রোববার মামলার সূচনা বক্তব্য, প্রথম সাক্ষ্য শুরু হবে। কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে বিটিভি সরাসরি বিচার কার্যক্রম সম্প্রচার করবে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিধি ১৪ ও ১৮(৪) অনুযায়ী সাক্ষীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানকল্পে সকল গণমাধ্যমকে এই মর্মে অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, সাক্ষীর ছবি বা ভিডিও ধারণ বা প্রচার করা যাবে না। সাক্ষীর শুধু নাম প্রচার করা যাবে। সাক্ষীর ঠিকানা প্রকাশ করা যাবে না।

গত ১০ জুলাই এ মামলায় রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনালের আদেশে তাকে দোষ স্বীকারের শর্তে ক্ষমার কথা ঘোষণা করা হয়।

এর আগে গত ১ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসামি করা হয় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।

গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন।

পাঁচ অভিযোগ : প্রথম অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের রাজাকারের বাচ্চা ও রাজাকারের নাতিপুতি উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।

দ্বিতীয় অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন। গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সাথে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দু’জনের সাথে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪ দলীয় জোটের কাছেও এই নির্দেশ যায়। সেই নির্দেশের আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে তাদের (হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন) বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

তৃতীয় অভিযোগ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগ, রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওই দুইজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

পঞ্চম অভিযোগ, শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনকে আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায়ও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জুলাই আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটিই প্রথম কোনো মামলা, যেখানে হাসিনার কারাদণ্ড হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়