শিরোনাম
◈ আসিফ-ইশরাকের পরস্পর দোষারোপ, বাড়ছে উত্তাপ! ◈ উত্তরার অবৈধ ফার্নিচার মার্কেট: কোটি টাকার ভাড়া যাচ্ছে কার পকেটে? ◈ প্রতিষ্ঠানের ভুলে পরীক্ষাবঞ্চিত দুই শিক্ষার্থী: এক বছরের ক্ষতির দায় নেবে কে? ◈ উত্তরায় কিশোর গ্যাং দমনে যুদ্ধের ঘোষণা ডিসি মহিদুলের ◈ হাতিয়ায় গুজবের তোলপাড়: পুকুরে কুমির নয়, ছিল গুইসাপ! ◈ শাজাহানপুরে বিএনপিকে হুমকি দিয়ে আওয়ামী লীগের পোস্টার, রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কা ◈ চুয়ান্ন বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হয়নি: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ◈ টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড ◈ ইরানের বিজয়ের কথা শুনেই রেজা পাহলভি হাসপাতালে ভর্তির খবর ভুয়া দাবি তাঁর কার্যালয়ের ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগদাতা আমরা না: সারজিস আলম (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৬ জুন, ২০২৫, ০৮:২৯ রাত
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হলে লাভ কার?

মহসিন কবির: শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৫ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনকালে ব্যাপক দুর্নীতি ও খুনের অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। নির্বাচন করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে এখন তোন নেতা তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায়নি। তবে জামায়াত ইসলাম ক্ষমা চেয়েছেন। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘শুধু একাত্তর নয়, ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যত মানুষ কষ্ট পেয়েছেন, কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন সেই সব মানুষের কাছে, সবার কাছে আমি নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়েছি।’

এদিকে আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘গতকাল ছিল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে আমরা যেমনটি আশঙ্কা করেছিলাম, তেমন বড় জমায়েত তারা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে।’

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হলে কার লাভ। বিএনপি আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চেয়েছিলো। কিন্তু নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হলো। 

আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করতে পারলে তাদের ভোট ব্যাংক বিভিন্ন দলে ভাগ হবে। ধারণা করা হচ্ছে বেশি ভোট পারে বিএনপি। এরপর ছোট ছোট দলে ভোট ভাগ হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকবর্মীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দলেও যোগ দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ভোট ভাগে হবে বিভিন্ন দলে। 

আওয়ামী লীগ নেতারা এখন জামায়াতপন্থী বলে অভিযোগ উঠেছে। কুমিল্লার তিতাসে কর্মী সম্মেলন ঘিরে ব্যানার-পোস্টার ছাপিয়েছেন ৭ জন। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদেও ছিলেন। যদিও জামায়াতের দাবি,তাদের আদর্শেই বিশ্বাসী সবাই। এটিকে বর্ণচোরা রাজনীতি হিসেবে দেখছে সচেতন মহল। 

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় মো. আবু হানিফ নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে জামায়াতে ইসলামীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আবু হানিফ আগে মজিদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন পরিষদের ওই ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি মজিদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন।

হানিফের মত ওমর ফারুক, শামীম খান, আবুল কালামসহ আরো ৭ জন ভিন্ন রুপে। অথচ তাদেরকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবেই জানতেন এলাকাবাসী। ছিল পদ-পদবীও। স্থানীয় জামায়াত নেতাদের দাবি, আগে থেকেই তাদের আদর্শে বিশ্বাসে ছিলেন তারা। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে এতদিন আড়ালে ছিলেন সবাই। 

বিষয়টিকে বর্ণচোরা রাজনীতি হিসেবে ব্যাখা করছেন সচেতনরা। সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, বৈরি এবং অনুকূল যেকোনো সময়েই আদর্শের রাজনীতি করা উচিত। এরকম না করলে প্রকৃত অর্থে জনগণের কাছে তাদের বার্তা এবং আদর্শের জায়গা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। গতকাল রবিবার রাতে জামায়াত ইসলামীর ফরম পূরণ করে তিনি যোগ দেন। এ সময় আরো ২০-৩০ জন দলীয় ফরম পূরণ করে জামায়াতে যোগ দেন বলে জানা গেছে। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে এ ঘটনায় ঘটেছে। জামায়াতে যোগ দেওয়া বিএনপি নেতার নাম আক্কাস আলী ভুঁইয়া। তিনি  নামের এক বিএনপি নেতা। তিনি সর্বশেষ দেবীগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত দেবীগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের বিচার হবে ৫ আগস্টের আগে সংঘটিত অপরাধের জন্য। ৫ আগস্টের পর তারা মাঠ ও দেশছাড়া। মাঝে মধ্যে দু-একটা স্থানে ঝটিকা মিছিল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতা-নেত্রীর উস্কানিমূলক বক্তব্যে সরকারের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।

আওয়ামী লীগ সরকার অন্তিম মুহূর্তে একই আইনে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল এবং তখন বিএনপিসহ অনেক দল এর বিরোধিতা করেছিল। আদালতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসা আর নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা এক নয়। সংবিধানের সর্বোচ্চ রক্ষক আদালত।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেক নেতা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। অনেকে জেলে আছেন। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগ অফিসের সাইনবোর্ড খুলে অন্য দলের সাইন বোর্ড লাগানো হচ্ছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধে আইন সংশোধন করতে হলো কেন?

এখানে যুক্তি আসতে পারে যে, বিদেশে থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তারা ঝটিকা মিছিলও করছেন। তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা বা অপরাধবোধ দেখা যাচ্ছে না। এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা যদি বাস্তবতা না মেনে নেন, তাদের মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র অনুশোচনা না জাগে, তাহলে জনগণের কাছে এমনিতেই ‘নিষিদ্ধ’ হয়ে যাবেন।

ঔপনিবেশিক বৃটিশ সরকার ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করেছিল। পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীও নিষিদ্ধ ছিল। পঁচাত্তর সালে দেশের সব দল নিষিদ্ধ করে একটি দল বাকশাল গঠন করা হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে কমিউনিস্ট পার্টি ও ডেমোক্রেটিক লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে জনগণ যাদের গ্রহণ করেছে, তারা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। যারা জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা হারিয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়