শিরোনাম
◈ এক চাকা খুলে পড়া অবস্থায়ও প্রথম চেষ্টায় অবতরণ: উত্তেজনাপূর্ণ শেষ ৩ মিনিটে কী আলোচনা করেছেন পাইলট ও এটিসি ◈ ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য মরণফাঁদ: মঈন খান (ভিডিও) ◈ ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা ◈ যে ৮ জেলায় সকালের মধ্যে ঝড় হতে পারে ◈ তিন ধাপে জালনোট তৈরির ভয়ংকর ফাঁদ (ভিডিও) ◈ ‘শয়তানের নিঃশ্বাসে’ সম্মোহিত: আত্মীয় সেজে প্রবাসীর সর্বস্ব লুটে নিলো প্রতারক নারী (ভিডিও) ◈ জবি আন্দোলনে আলোচিত দিপ্তী চৌধুরী (ভিডিও) ◈ সব দলের রাজনীতি এখন আ.লীগের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ (ভিডিও) ◈ ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আন্দামান সাগরে ফেলে দিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী! ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিক্রয়া লক্ষ্য করা যায়নি: প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ১৬ মে, ২০২৫, ০৫:৩৪ বিকাল
আপডেট : ১৭ মে, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সান্ডা বা ‘ধাব্ব’ আসলে কী, আরবদের এই প্রাণী খাওয়ার ইতিহাস কত আগের

মধ্যপ্রাচ্যের রুক্ষ, শুষ্ক অঞ্চলে এক বিশেষ ধরনের টিকটিকি দেখা যায়। কাঁটা লেজবিশিষ্ট এই টিকটিকি দেশে এখন সান্ডা নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এদের শক্ত, কাঁটাযুক্ত লেজ এবং মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা প্রকৃতির এক বিস্ময়! এসব টিকটিকির বিভিন্ন প্রজাতি পুরো মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অংশে পাওয়া যায়।

কাঁটাযুক্ত লেজবিশিষ্ট টিকটিকির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এদের মোটা, খাটো ও শক্তিশালী লেজ। লেজটি বড় বড় কাঁটায় আবৃত। এই কাঁটাগুলো প্রধানত আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। বিপদ দেখলে এর লেজ দ্রুত ঘোরাতে পারে এবং শিকারিকে সজোরে আঘাত করতে সক্ষম। এদের দেহ বেশ মজবুত এবং আঁশযুক্ত চামড়া দিয়ে আবৃত। প্রজাতিভেদে এদের রং হলুদ, বাদামি, সবুজ বা ধূসর হতে পারে। এই রং তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে সাহায্য করে। এদের মাথা ছোট ও ত্রিকোনাকার। দাঁতগুলো উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত।

আবাসস্থল ও জীবনধারা: এই টিকটিকিগুলো মূলত মরুভূমি, পাথুরে এলাকা ও শুকনো তৃণভূমিতে বাস করে। এরা দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে (দিবাচর) এবং তীব্র গরম থেকে বাঁচতে গর্ত তৈরি করে বা পাথরের ফাটলে আশ্রয় নেয়। কাঁটা লেজবিশিষ্ট টিকটিকি তৃণভোজী প্রাণী। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা, ফুল, ফল ও বীজ। এরা খুব কম পানি পান করে। এরা খাবারের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করে।

মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও খাদ্যাভ্যাস: ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু যাযাবর গোষ্ঠী কাঁটাযুক্ত লেজবিশিষ্ট টিকটিকিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের অভ্যন্তর ও পূর্বাঞ্চলে এদের ‘ধাব্ব’ নামে ডাকা হয়। একসময় আরবদের মধ্যে উপাদেয় খাবার হিসেবে বিবেচিত হতো।

আরবদের টিকটিকি খাওয়ার ঐতিহাসিক দলিল: ২০১৪ সালের মার্চে এনবিসি নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন গবেষণা অনুযায়ী, সৌদি আরবে মধ্যযুগে মরুভূমিতে বসবাসকারী আরবরা ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের পরেও টিকটিকি খেতেন।

ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক গ্রন্থগুলোতে এই আঁশযুক্ত মরুভূমির খাবারটির উল্লেখ রয়েছে। এই আবিষ্কারই প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ। গবেষণাটির সহলেখক এবং প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের জু-আর্কিওলজিস্ট হার্ভে মনচোট লাইভ সায়েন্সকে এ তথ্য জানিয়েছিলেন।

মনচোট বলেন, টিকটিকি সম্ভবত খাওয়া হতো, কারণ এটি ‘প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস’।

মনচোট ও তাঁর সহকর্মীরা সৌদি আরবের মরুভূমিতে আল-ইয়ামামা নামক একটি মরূদ্যান খনন করার সময় এর প্রমাণ খুঁজে পান। স্থানটি খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত জনবসতিপূর্ণ ছিল। একটি বৃহৎ মসজিদ কমপ্লেক্সের অংশ এই স্থানে উট ও ছাগলের হাড়ে পূর্ণ খাদ্য বর্জ্যের স্তর পাওয়া গেছে।

হাড়ের স্তূপগুলোতে টিকটিকির ১৪৫টি কঙ্কালের অবশিষ্টাংশও ছিল। এই অঞ্চলের মরুভূমিতে বসবাসকারী লোকেরা সম্ভবত কমপক্ষে ২ হাজার বছর ধরে একই পদ্ধতিতে এই প্রাণী শিকার করে খেয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি অনলাইন জার্নাল অব আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।

তবে, বর্তমানে বন্য পরিবেশে এদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং কিছু অঞ্চলে এদের ধরা ও বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকায় খাদ্য হিসেবে এদের ব্যবহার সীমিত হয়ে এসেছে। তা ছাড়া, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন এদের ধরা ও খাওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হয়।

গুরুত্ব ও সংরক্ষণ: কাঁটাযুক্ত লেজবিশিষ্ট টিকটিকি মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তৃণভোজী হওয়ায় এরা উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তবে, আবাসস্থল ধ্বংস, অতিরিক্ত শিকার এবং পোষা প্রাণী হিসেবে অবৈধ বাণিজ্য এগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে।

এই জাতের টিকটিকি কেবল মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির একটি বিশেষ প্রাণীই নয়, এটি এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যেরও প্রতীক।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়