সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সব সময় প্রস্তুত— সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা কখনো পিছপা হই না।” বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উপর একটি উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হয়।
সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই জাতিসংঘ মিশনে নিহত ১৬৮ জন সৈনিক ও পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, “তাঁদের এই ত্যাগ জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে। শান্তির জন্য প্রাণদানকারী এ বীরেরা আমাদের গর্ব।”
তিনি বলেন, “আমাদের শান্তিরক্ষীরা উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিক মূল্যবোধ ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। তারা জীবন ঝুঁকি নিয়েও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখাচ্ছে প্রতিটি মিশনে।”
বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনে একটি গ্রহণযোগ্য নাম হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৫ হাজার ১১৮ জন শান্তিরক্ষী ৯টি দেশের মিশনে কাজ করছেন—এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ৪৮৮০ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৩ জন, বিমানবাহিনীর ৩৯৬ জন এবং পুলিশের ১৯৯ জন।
নারী শান্তিরক্ষীদের ভূমিকাও তুলে ধরেন সেনাপ্রধান। বলেন, “আজ পর্যন্ত আমাদের ৩ হাজার ৬৪৫ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ৪৪৪ জন নারী সদস্য বিভিন্ন শান্তি মিশনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।”
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি কঙ্গো মিশনে একটি হেলিকপ্টার কন্টিজেন্ট আর্মড রোলে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে নির্মিত বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি সেনাবাহিনীতে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুদান ও তত্ত্বাবধানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।
“এই ক্লিনিক উদ্বোধনের সময় সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি ও আমি একসঙ্গে উপস্থিত ছিলাম। তারা বাংলাদেশের অবদানে সন্তুষ্ট,” বলেন সেনাপ্রধান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ‘পিসকিপার্স রান’। যা তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘুরে শেষ হয় ফ্যালকন হলে গিয়ে। এই দৌড়ে অংশ নেন বিভিন্ন সময়ে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা।