ফ্রান্সে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে অনেকে অনিয়মিত অবস্থায় রয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন নীতির বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে উদ্বেগে ছিলেন। সম্প্রতি, দেশটির সরকার গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত অভিবাসীদের ৯০ দিনের বেশি আটক রাখার জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়নের চেষ্টা করে, যা অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ভীতি সৃষ্টি করেছিল। তবে, দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত সম্প্রতি সেই আইনটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করায় অভিবাসীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
ফ্রান্সের সাংবিধানিক কাউন্সিল সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসী আটক রাখার একটি আইন বাতিল করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটিতে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিসহ অন্যান্য অভিবাসীরা স্বস্তিতে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দেওয়া এই রায়ে আদালত স্পষ্ট করে জানায়, কাউকে ৯০ দিনের বেশি আটক রাখা যাবে না।
বাতিল হওয়া এই আইন অনুসারে, যারা গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত বা 'বিশেষভাবে বিপজ্জনক', তাদের ৯০ দিনের পরিবর্তে ২১০ দিন (সাড়ে সাত মাস) পর্যন্ত আটক রাখা যেত। কিন্তু সাংবিধানিক আদালত এই বিধানকে সংবিধানের পরিপন্থী ঘোষণা করে বলেছে, এত দীর্ঘ সময় কাউকে আটক রাখা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে।
ফ্রান্সে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন, যাদের অনেকেই অনিয়মিত অবস্থায় রয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদি আটক বাড়ানোর প্রস্তাবের ফলে এই কমিউনিটিতে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল। এখন আইনের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৯০ দিনেই সীমাবদ্ধ থাকায় তারা স্বস্তিতে আছেন।
২০২৪ সালে প্যারিসে এক শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত এক বিদেশি দীর্ঘদিন ডিটেনশন সেন্টারে থাকার পরও ফ্রান্স ছাড়েননি। ওই ঘটনার পর ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো কঠোর আইন প্রণয়নের পক্ষে ছিলেন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো, যেমন লা সিমাদ, এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল ফানেলি কারে-কন্তে এই রায়কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তবে কিছু রাজনৈতিক নেতা এই রায়ের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি জননিরাপত্তাকে দুর্বল করবে। তারা উল্লেখ করেছেন যে, ফ্রান্সের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অভিবাসীদের অনেক বেশি সময় ধরে আটক রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
ফ্রান্সের সাংবিধানিক কাউন্সিলের এই রায় অভিবাসীদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় দেশটির সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতিকে আবারও তুলে ধরেছে।