উচ্চশিক্ষা শেষ করলেই চাকরির নিশ্চয়তা মিলবে—এমন ধারণা সবার ক্ষেত্রে মেলে না। অনেক সময় পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েও জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় পড়তে হয়। তবে এসব সামাজিক বাঁধাধরা ধ্যানধারণা ভেঙে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন চীনের এক দম্পতি। বেলজিয়ামে গবেষণা জীবন শেষে তারা খুলেছেন নুডলসের দোকান, যেখানে প্রতিদিনের আয় ১২০০ ডলারের বেশি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা)।
স্বামী ডিং নিজ দেশে পিএইচডি শেষ করে বেলজিয়ামে চলে যান পোস্টডক্টরাল গবেষণার জন্য। মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা ও ফসল উৎপাদন বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি অন্তত ৩০টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সহপাঠী ওয়াংয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, পরে ২০১৫ সালে বিয়ে। বেলজিয়ামে স্থায়ী হওয়ার পর তাদের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়।
তবে স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে একপর্যায়ে তারা ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নেন। সেই চিন্তা থেকেই জন্ম নিল মটরশুঁটি দিয়ে তৈরি ঝাল নুডলসের দোকান। ওয়াংয়ের জন্মস্থান চংকিংয়ের ঐতিহ্যবাহী এই খাবার স্থানীয়দের ভিন্ন রুচির সঙ্গে মানিয়ে কিছুটা কম ঝাল করে পরিবেশন করা হয়। জিমু নিউজ জানিয়েছে, দোকানটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
গত মে মাস থেকে তারা স্থানীয় বাজারে নুডলস বিক্রি শুরু করেন। দোকানে বসার জন্য কয়েকটি চেয়ার রাখা আছে, আর রান্নার উপকরণ আগে থেকে প্রস্তুত থাকায় প্রতি বাটি নুডলস বানাতে লাগে কয়েক মিনিট। সপ্তাহে দুই দিন দোকান খোলা হয়, প্রতি বাটি বিক্রি হয় ৮ থেকে ১১ ডলারে। ব্যস্ত দিনে তাদের আয় আরও বেড়ে যায়। গবেষণার পাশাপাশি ডিং অন্য কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। ওয়াংয়ের ভাষায়, ‘দোকান চালানো গবেষণার মতোই—এটি শুধু আমাদের পরিবারকে সহায়তা করার একটি পথ।’
তাদের গল্প ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গেছে চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায়। নুডলস বিক্রির ভিডিও দেখে হাজারো মানুষ অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, অনুসারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৮ হাজার। এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক বৃদ্ধা চপস্টিক ব্যবহার করতে কষ্ট পাচ্ছেন, কিন্তু খাবার শেষে বলেন, ‘এটাই আমার খাওয়া সেরা চীনা নুডলস।” এক নিয়মিত ক্রেতার ভাষায়, “আমি কখনো ভাবিনি মটরশুঁটি এত সুস্বাদু হতে পারে।’
অনলাইনে অনেকেই এ দম্পতিকে বিদেশে চীনা স্ট্রিট ফুড ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রশংসা করেছেন। কেউ লিখেছেন, ‘তারা সত্যিকারের উদ্যোক্তা।’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘চীনের অসংখ্য খাবার আছে, যা বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত।’
সূত্র: যুগান্তর