আরব ও মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যদি একযোগে ইসরায়েলের জন্য আকাশপথ অবরোধ করে, তবে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত প্রভাব কী হতে পারে-সে বিষয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের হামলাই এমন সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে অনুঘটক হতে পারে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস-এর নেতাদের লক্ষ্য করে চালানো ওই হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কাতারের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে হামাসের কোনো শীর্ষ নেতা হামলায় নিহত হননি। খবর মিডল ইস্ট আইয়ের।
এর আগে সোমবার দোহায় জরুরি বৈঠকে বসে ৫৭ সদস্যের ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লীগ। বৈঠকে ইসরায়েলের সীমা লঙ্ঘন এবং হামলার জবাবে কার্যকরী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণে বলা হয়, ইসরায়েলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের জন্য দেশটির বিরুদ্ধে আকাশপথে অবরোধ আরোপ করা হলে তেল আবিবের অর্থনীতির নানা খাত ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে তেল আবিবের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে দেশটি ভয়াবহ মন্দার মুখে পড়ে যাবে।
গবেষণাকেন্দ্রটির বিশ্লেষণে বলা হয়, আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর একযোগে আকাশপথ অবরোধে নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তাকাঠামো তৈরি হবে। এতে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আরও তীব্র কূটনৈতিক সংকটে পড়ে যাবে। তখন ওয়াশিংটনকে ইসরায়েলকে রক্ষা করা আর আরব দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব বজায় রাখা—দুটির একটি বেছে নিতে হবে।
ওআইসির প্রভাবশালী সদস্য তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া যদি এ অবরোধে যোগ দেয়, তবে ইসরায়েল এশিয়া ও আফ্রিকার প্রবৃদ্ধিশীল বাজারগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারাবে। এতে পূর্ব ও দক্ষিণমুখী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রতিবেদন বলছে, বিকল্প রুটে যেতে হলে প্রতিটি ফ্লাইটের সময় চার থেকে ছয় ঘণ্টা বাড়বে। এতে প্রতি ফ্লাইটে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ বাড়তে পারে। ইসরায়েলের এয়ারলাইনস সংস্থা এল-আলের আয় ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
আকাশপথ অবরোধে ইসরায়েলের পর্যটনশিল্পে ধস নামতে পারে। হীরার মতো অতি উচ্চ মূল্যের ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো সংবেদনশীল পণ্যের রপ্তানিও ব্যাহত হতে পারে।
এমন বৈরী পরিস্থিতিতে অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে এবং ইসরায়েলের মূলভূখণ্ডভিত্তিক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম অন্যত্র সরে যেতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অর্থনীতির বাইরেও এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির চাল-চিত্র মৌলিকভাবে বদলে দিতে পারে।