ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা উত্তরোত্তর কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে (২৯ এপ্রিল) জম্মু ও কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী পারগাওয়াল সেক্টরে পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষী বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে দাবি করছে ভারত। দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, বিগত কয়েকদিনে নিয়ন্ত্রণরেখার (লাইন অব কন্ট্রোল) শর্ত একাধিকবার ভেঙেছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার রাতে জম্মু এলাকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে তারা। ভারতীয় বাহিনীয় তার পাল্টা জবাব দিয়েছে।
প্রতিবেদনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনও বক্তব্য যোগ করা হয়নি।
এর আগে, নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে পাকিস্তান বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, পাকিস্তানের গুলির সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখা ভিন্ন বিষয়। আন্তর্জাতিক সীমান্ত হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সীমারেখা। আর নিয়ন্ত্রণরেখা মূলত একটি অস্ত্রবিরতি রেখা। এটি দুদেশের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে নির্ধারিত হয়েছে। এই রেখা বরাবর গোলাগুলি চালানো চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুদেশের সম্পর্কে এমনিতেই কিছুদিন ধরে টানটান উত্তেজনা চলছে। এরমধ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনাগুলো আগুনে আরও ঘি ঢালছে।
নিরীহ পর্যটক ও বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে চালানো সন্ত্রাসী হামলায় ভারতজুড়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অর্থায়নের জন্য ইসলামাবাদকে দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত করে আসছে দিল্লি।
এই পরিস্থিতিতে ইন্দাস নদী পানি বণ্টন চুক্তি এবং পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে দিল্লি। একইসঙ্গে ভারতে দায়িত্বরত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে এবং সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা শিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাতিল করবে।
দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। কাশ্মীরে হামলার ঘটনা জানামাত্রই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছেন তিনি।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মীরে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন গুতেরেস। সব পক্ষকে সতর্ক করে তিনি বলেন, আইন মেনে হামলাকারীদের জবাবদিহিতা ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানের কোনও সংঘর্ষে জড়ানো উচিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সংঘর্ষের ফলে কেবল গভীর মানবিক সংকট সৃষ্টি হবে।