দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে দেখা যায় অভিনেত্রীকে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হয়ে ছিলেন রাজপথে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের সময় উঠে এসেছিলেন ব্যাপক আলোচনায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত সক্রিয় থাকেন এ অভিনেত্রী। সেখানে নিজের মতামত ও বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। সর্বশেষ এক পোস্টে এবার পুরুষদের নিয়ে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন বাঁধন।
বাঁধন জানান, অনেকেই মনে করেন তিনি নাকি পুরুষদের পছন্দ করেন না।
কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি ভিন্ন। অভিনেত্রীর ভাষায়, “আমি পুরুষদের অপছন্দ করি না, আমি ঘৃণা করি পিতৃতন্ত্রকে—এবং নারী–পুরুষ উভয়কেই, যারা এই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখে। অনেকদিন আমি তাঁদের ঘৃণা করেছি। পরে বুঝেছি, পুরো দোষ তাঁদের নয়।
সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র—এই কাঠামোই তাঁদের পিতৃতন্ত্রের বাহক করে তোলে। তাই মানুষকে নয়, আমি অপছন্দ করি পিতৃতন্ত্রকে।”
তবে জীবনে কিছু পুরুষ তাঁর ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার পেছনে গভীর প্রভাব রেখেছেন বলেও জানান তিনি। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর বাবা, যিনি অসংখ্যভাবে তাঁকে গড়ে তুলেছেন। আরেকজন হলেন ‘রেহানা’ চলচ্চিত্রের পরিচালক সাদ, যাঁর প্রভাবও তিনি গভীরভাবে অনুভব করেন।
নিজের দুই ভাইয়ের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি। মতপার্থক্য থাকলেও তাঁরা তাঁর আজীবন সহায় হয়ে আছেন। বিশেষ করে ছোট ভাই রাশা—যিনি শুধু ভাই নন, বরং শৈশবসুলভ নির্ভরতায় যার সঙ্গে কথা বলা যায়। আরেক ভাই ছিলেন পাশে, যখন বাবা–মা পাশে থাকতে পারেননি।
ভাইদের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরেন বাঁধন। শরিয়াহ আইনে বোনেরা সমানভাবে সম্পত্তি পান না, কিন্তু তাঁর দুই ভাই নিজেদের অংশ সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন তাঁর সঙ্গে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি চাইনি যেন মনে হয় তাঁরা আমাকে দিয়েছেন, কারণ সেটা শুরু থেকেই আমার প্রাপ্য ছিল। কিন্তু এটাই আমাদের বাস্তবতা। আমার ভাইরা ন্যায্যতা ও ভালোবাসা দিয়ে সাড়া দিয়েছে। আমি আশা করি একদিন আইনই সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেবে।”
জীবনে আরো কয়েকজন পুরুষ রয়েছেন, যাঁদের জন্য তাঁর মনে আছে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। তাঁদের জন্য প্রার্থনা রয়ে গেছে সবসময়। তবে শুধু ইতিবাচক অভিজ্ঞতাই নয়, জীবনে নেতিবাচক ও নিষ্ঠুর কিছু পুরুষের উপস্থিতির কথাও অকপটে বলেছেন তিনি। তাঁদের আচরণ ছিল অসম্মানজনক, সহিংস ও অমানবিক।
তবু তাঁদের প্রতিও এক ধরনের কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন তিনি। বাঁধন বলেন, “তাঁরা যতই আমাকে ভাঙতে চেয়েছেন, তাঁদের নিষ্ঠুরতা আমাকে জ্বালিয়ে তুলেছে—অন্যায়ের বিরুদ্ধে আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত করেছে। তারাও আমাকে গড়ে তুলেছে। প্রার্থনায় তাঁদের জায়গা নেই, তবে তাঁরা আমার গল্পে রয়েছেন।”
শেষে তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, “ভুল বুঝবেন না। আমি পুরুষদের অপছন্দ করি না, আমি ঘৃণা করি পিতৃতন্ত্রকে। আর হ্যাঁ, আমি পুরুষদের ভালোবাসি।”