শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর
আপডেট : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মনিরুল ইসলাম

৪৮ বছরে সরকারি অনুদানে ৪০০ চলচ্চিত্র, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মাত্র ৪টিতে

মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশে সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিহাস প্রায় পাঁচ দশকের। ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে শুরু হওয়া এ উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল দেশীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও মানবিক মূল্যবোধ তুলে ধরা, নতুন নির্মাতাদের উৎসাহিত করা এবং চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশ ঘটানো। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত মান এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর সাফল্য অত্যন্ত সীমিত—যা নিয়ে শিল্পী ও সমালোচকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ও বরাদ্দ
সরকারি তথ্য অনুসারে, ১৯৭৬ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০০ চলচ্চিত্র সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে। কেবল ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ৩২টি চলচ্চিত্র নির্মাণে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং ২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সর্বমোট গত ৪৮ বছরে চলচ্চিত্র অনুদানে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ১৫০-২০০ কোটি টাকা।

তালিকা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ফেসবুকে এক পোস্টে নতুন তালিকার বিরোধিতা করে লিখেছেন, "জনগণের টাকা অপচয়ের কোনো মানে হয় না। এই অনুদান ব্যবস্থা বন্ধ করা উচিত।"

আন্তর্জাতিক সাফল্যে হতাশাজনক চিত্র

সাংবাদিক ও কলামিস্ট মনজুর এহসান চৌধুরীর এক সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়, এত বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে মাত্র ৪টি চলচ্চিত্র:

সূর্য দীঘল বাড়ি – মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৮০

গাড়িওয়ালা – শিকাগো আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৪

মাটির প্রজার দেশে – বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৮

নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ – কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৩

অর্থাৎ সাফল্যের হার মাত্র ১ শতাংশ, যা শিল্পের গুণমান ও নীতিগত দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি।

অনুদান বিতরণে স্বচ্ছতার অভাব ও অপচয়
অনেকে অভিযোগ করেন, অনুদান প্রদান প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব কাজ করে। প্রকৃত মেধা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের বাদ দিয়ে যোগ্যতাহীন প্রার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়। অনেক নির্মাতা অনুদানের টাকা নিয়ে বছরের পর বছর সিনেমা শেষ করেন না, নিম্নমানের কাজ জমা দেন বা বাজেটের বড় অংশ আত্মসাৎ করেন।

প্রণোদনা ও পুরস্কারে সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে নির্মাণের আগেই অনুদান দেওয়া হলেও নির্মাণ-পরবর্তী মান, দর্শকপ্রিয়তা বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে বড় কোনো প্রণোদনা নেই। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে নগদ অর্থের পরিমাণও খুব কম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্মাণ-পরবর্তী সাফল্যের ভিত্তিতে আর্থিক পুরস্কার চালু হলে নির্মাতাদের মধ্যে গুণগত প্রতিযোগিতা বাড়বে।

দায়ী কারা?

অনুদান কমিটির অস্বচ্ছতা

দুর্বল মনিটরিং

রাজনৈতিক প্রভাব

নির্মাতাদের অনিয়ম

এসবই অপচয় ও মানহীন চলচ্চিত্রের জন্য প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

সমাধান কী?

স্বচ্ছ ও কঠোর বাছাই প্রক্রিয়া

নির্মাণ-পরবর্তী মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রণোদনা

নিয়মিত মনিটরিং ও অডিট

শর্ত ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা

প্রতিবছর অনুদান ও অগ্রগতি গণমাধ্যমে প্রকাশ

চলচ্চিত্রের মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হলে শুধু অনুদানের অঙ্ক বাড়ালেই হবে না। দরকার স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং গুণগত মূল্যায়ন। নীতিমালার সংস্কার ও বাস্তবায়নের জন্য একটি স্বাধীন ও দক্ষ কাঠামো গঠন এখন সময়ের দাবি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়