ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা পড়া একটি সাধারণ বিষয় হলেও তা অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর পেছনে কিছু শারীরিক এবং অভ্যাসগত কারণ থাকতে পারে। উইকিহাউ (wikiHow) এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কিছু নিয়ম মেনে চললে ও অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১. ঘুমের ভঙ্গিমার পরিবর্তন: চিত হয়ে ঘুমানো
কারণ: কাত হয়ে বা উপুড় হয়ে ঘুমালে মাধ্যাকর্ষণের টানে মুখের ভেতরে জমে থাকা লালা সহজেই গাল বেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। এর ফলে বালিশ ও চাদর ভিজে যায় এবং দুর্গন্ধ হতে পারে।
প্রতিকার: এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। চিত হয়ে ঘুমালে মুখের লালা মুখগহ্বরের ভেতরেই থাকে এবং সহজে বাইরে আসতে পারে না। রাতে ঘুমের মধ্যে অজান্তেই পাশ ফিরে শোয়ার অভ্যাস থাকলে, তা সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে।
২. উঁচু বালিশ ব্যবহার করা
কারণ: আপনি যে বালিশটি ব্যবহার করছেন, সেটি হয়তো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিচু। এতে মাথা শরীরের সমতলে থাকায় মুখ খোলা রাখা সহজ হয় এবং লালা পড়তে পারে।
প্রতিকার: ঘুমানোর সময় এমন বালিশ ব্যবহার করুন যাতে আপনার মাথা শরীরের চেয়ে কিছুটা উঁচুতে থাকে। এতে মাধ্যাকর্ষণের ফলে লালা মুখ থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং মুখও বন্ধ থাকে।
৩. নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করা
কারণ: অনেকেই ঘুমের মধ্যে নাকের পরিবর্তে মুখ দিয়ে শ্বাস নেন। মুখ খোলা থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই লালা বেরিয়ে আসে। সাধারণত নাকের ন্যাসাল সাইনাস বন্ধ থাকলে বা সর্দি-কাশির কারণে নাক বন্ধ থাকলে এই প্রবণতা বাড়ে।
প্রতিকার: নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন। যদি সাইনাসের সমস্যা থাকে, তবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইউক্যালিপটাস তেলের মতো এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এটি বন্ধ নাক খুলতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। সমস্যা গুরুতর হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কারণ: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরে অতিরিক্ত লালা তৈরি হতে পারে। এর ফলেও ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে।
প্রতিকার: যদি আপনি কোনো নতুন ওষুধ খাওয়া শুরু করার পর এই সমস্যা দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন। যদি ওষুধটি স্বল্পমেয়াদী হয়, তবে এর কোর্স শেষ হলে সমস্যাটিও চলে যেতে পারে।
৫. স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত
কারণ: স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea) একটি নিদ্রাজনিত রোগ, যেখানে ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জোরে নাক ডাকা, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া এবং মুখ দিয়ে লালা পড়া।
প্রতিকার: সাধারণত ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আপনার যদি এ ধরনের লক্ষণ থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
কারণ: অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি ওজন শ্বাসযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া এবং লালা পড়ার কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত বহু রোগীর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
প্রতিকার: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৭. সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা
কারণ: যখন অন্য কোনো পদ্ধতিতেই লালা পড়া বন্ধ করা যায় না, তখন এর পেছনে অন্য কোনো শারীরিক কারণ থাকতে পারে।
প্রতিকার: কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। ইউপিও (UPPP), সমনোপ্লাস্টি, ন্যাজাল সার্জারি এবং টনসিলেকটমি-এর মতো বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। তবে এটি শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ীই বিবেচনা করা উচিত।