শিরোনাম
◈ জাতীয় দ‌লে বিদেশি কোচ কে‌নো? ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার প্রতিক্রিয়া ◈ প্যারিসে অপহরণচেষ্টার মুখে সাহসিকতায় যেভাবে রক্ষা পেলেন ক্রিপ্টো সিইওর কন্যা! ভিডিও ◈ `আমার সোনার বাংলা' কীভাবে ও কেন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো? ◈ বেতন বৈষম্য কমাতে নতুন মহার্ঘভাতা পরিকল্পনায় সরকার ◈ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: স্বাধীনতার পর ৭৬ খুন, বিচার হয়নি ◈ বাংলাদেশ-জাপান বৈঠকে আসছে তিস্তা-মাতারবাড়ি-বে অব বেঙ্গল ও চীনের ভূমিকা ◈ কিনতে এসে অভিনব কায়দায় দোকান থেকে ‘১০০ ভরি স্বর্ণ’ নিয়ে পালালেন ৫ নারী (ভিডিও) ◈ জবি শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মোড় ছাড়বে না (ভিডিও) ◈ আমরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছি: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ◈ এরশাদের বউ বিদিশার গাড়ি রং সাইডে, ভিডিও ভাইরাল!

প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২৫, ০৩:৩৪ রাত
আপডেট : ১৫ মে, ২০২৫, ০৯:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য পতনের প্রভাবে স্থিতিশীলতার পথে দেশের বাজার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে ২০২২ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়ে। জ্বালানি, খাদ্যশস্য, শিল্প কাঁচামাল ও সারের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশ দেশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে ২০২২ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়ে। জ্বালানি, খাদ্যশস্য, শিল্প কাঁচামাল ও সারের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। তবে পরের বছর থেকেই পণ্যের দাম কিছুটা কমতে শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে তা আরো নিম্নমুখী। এদিকে বেশির ভাগ পণ্যই আমদানিনির্ভর হওয়ায় বৈশ্বিক বাজারে দামে ওঠা-নামা বাংলাদেশের বাজারকেও প্রভাবিত করে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশে যত দ্রুত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, কমার বেলায় সেটি দেখা যায় না।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত এপ্রিলেও বিশ্ববাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম ছিল পড়তির দিকে। বৈশ্বিক পণ্যবাজার নিয়ে সম্প্রতি সংস্থাটি ‘‌কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, আগামী দুই বছর নিম্নমুখী থাকতে পারে বৈশ্বিক পণ্যবাজার। আর চলতি বছর গড় দাম কমতে পারে প্রায় ১২ শতাংশ। ২০২৬ সালে আরো ৫ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে, যা হবে ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ হারে দাম কমতে থাকলে তা মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের পর দেখা যাবে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের গড় স্তরের চেয়েও নিচে নেমে গেছে দাম। আর কভিড-১৯ মহামারীর পর এটাই হবে প্রথমবারের মতো এত বড় পতন। দাম কমার পেছনে কারণ হিসেবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দুর্বল প্রবৃদ্ধিসহ জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ প্রভাব রাখছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে মূল্যহ্রাসের এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বাজারেও কি কমবে পণ্যের দাম?

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত এপ্রিলে আগের মাসের তুলনায় বৈশ্বিক পণ্যবাজারে ক্রুড অয়েল, এলএনজি, পাম অয়েল, গম, চাল, চিনি ও ইউরিয়া সারের দাম নিম্নমুখী ছিল। এর মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ দশমিক ৭০ থেকে কমে ৬৫ দশমিক ৯০ ডলারে নামে। সংস্থাটির প্রক্ষেপণ বলছে, জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের গড় দাম চলতি বছর ব্যারেলপ্রতি ৬৪ ডলার ও আগামী বছর ৬০ ডলারে দাঁড়াতে পারে। জ্বালানি তেলের পাশাপাশি এলএনজির দামও বর্তমানে নিম্নমুখী। গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে প্রতি এমএমবিটিইউ (মেট্টিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজির দাম ১২ দশমিক ৫৫ থেকে কমে ১২ দশমিক ৪৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে পাম অয়েলের দাম টনপ্রতি ১ হাজার ৬৮ থেকে কমে ৯৯৪ ডলার হয়েছে। অবশ্য এ সময়ে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ১ হাজার ১১ থেকে বেড়ে ১ হাজার ১১৬ ডলার হয়েছে।

বৈশ্বিক বাজারে গমের দাম গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কমেছে। এর মধ্যে এইচআরডব্লিউ গমের দাম টনপ্রতি ২৫৫ দশমিক ৪০ থেকে ২৪৯ দশমিক ৬০ ডলার এবং এসআরডব্লিউ গমের দাম টনপ্রতি ২২৭ দশমিক ৫০ থেকে কমে ২১৯ দশমিক ৬০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। চিনির দাম প্রতি কেজি ৪২ থেকে কমে হয়েছে ৪০ সেন্ট। তুলার দাম কিছুটা বেড়ে ১ দশমিক ৭১ থেকে ১ দশমিক ৭৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ সময় বৈশ্বিক বাজারে ইউরিয়া সারের দাম টনপ্রতি ৩৯৪ দশমিক ৫০ থেকে কমে হয়েছে ৩৮৬ দশমিক ৯০ ডলার। তবে ডিএপি, ফসফেট রক, পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও টিএসপি সারের দাম কিছুটা বেড়েছে।

সম্প্রতি বিশ্ববাজারে যেসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী, এর মধ্যে বেশকিছু বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আমদানি পণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ১১৮ কোটি ডলারের গম, ২০৬ কোটি ডলারের ভোজ্যতেল, ৮৬ কোটি ডলারের চিনি, ৪০৯ কোটি ডলারের জ্বালানি পণ্য, ২৬২ কোটি ডলারের তুলা, ২২৫ কোটি ডলারের সার আমদানি করা হয়েছে।

দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০২৪ সালের শেষার্ধে দেশে বড় রকমের একটি বন্যার পর উল্লেখযোগ্য কোনো বিরূপ আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়নি বাংলাদেশ। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে দেশে ঘূর্ণিঝড় কিংবা অতিবৃষ্টির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফলে এ সময়ের উৎপাদিত খাদ্যশস্য উৎপাদন স্থিতিশীল ছিল। আবার অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। বিশ্ববাজারে এলএনজি, ক্রুড অয়েলসহ দেশে আমদানি হয় এমন সারের দাম কমতে থাকায় খাদ্যপণ্যের প্রক্রিয়াজাত, কৃষি ও উৎপাদন খাতেও তার প্রভাব পড়বে। দেশীয় পরিবেশগত সুবিধার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের খাদ্যশস্যের বাজার আরো এক ধাপ স্থিতিশীলতায় আসতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে খাদ্যশস্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর বিশ্ব পণ্যবাজার ছিল অস্থিতিশীল। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যশস্য, জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দামকে ঊর্ধ্বমুখী করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত কমে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতিসহ নানা উদ্যোগের ফলে পণ্যবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।’ এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম আরো বেশি স্থিতিশীলতায় ফিরবে বলে আশা করছেন এ ব্যবসায়ী।

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বিগত এক বছর বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশীয় নানা সংকটে চালের বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বর্তমানে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। সরকার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আমদানির সুযোগ তৈরির পাশাপাশি ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এক মাস আগে সয়াবিনসহ পাম অয়েলের দাম বাড়ালেও বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম এক মাসের ব্যবধানে কমেছে টনপ্রতি প্রায় ৭০ ডলার। একইভাবে গমের দাম কমেছে টনপ্রতি ৬-৮ ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের ফলে ফিউচার মার্কেটেও গমের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রিজার্ভ দিন দিন বাড়ছে। আইএমএফের ঋণ কিস্তি ছাড়ের ঘোষণার পাশাপাশি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়াসহ আমদানিতে নানামুখী সংকোচনমূলক শর্ত সরকার একে একে তুলে নিচ্ছে। সে কারণে ব্যবসায়ীরাও বৈশ্বিক দাম কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর দিকে হাঁটছে। ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা, ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে পণ্য আমদানি প্রক্রিয়া আরো বেশি সহজতর হবে। এতে দেশের বিদ্যমান ঘাটতি কমে পণ্যবাজারের সরবরাহ সংকট কমে বাজার আরো বেশি স্থিতিশীল হবে বলে মনে করছেন তারা।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলেও বৈশ্বিক বুকিং কমতে থাকায় পাইকারি বাজারে খোলা ভোজ্যতেলের দাম নিম্নমুখী। বর্তমানে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল লেনদেন হচ্ছে ৫ হাজার ৭০০ টাকা (সরবরাহ অর্ডার) দামে। এছাড়া খোলা সয়াবিনের দাম মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে ৬ হাজার ১৭০ থেকে ৬ হাজার ১৮০ টাকায়। এছাড়া চিনির দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা কমে ৩ হাজার ৭৫০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। গমের দাম কমে এখন মণপ্রতি লেনদেন হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে। উৎস: বণিক বার্তা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়