মো. কামরুল ইসলাম, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌরসভা, প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হয়েও প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার করেছে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ছাড়াই। পৌরকর বাড়লেও নাগরিক সুবিধার বেশিরভাগই অধরাই থেকে গেছে বলে অভিযোগ পৌরবাসীর। সবচেয়ে বড় ভোগান্তি ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা, অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা।
পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। অনেক এলাকা মাসের পর মাস পানির নিচে ডুবে থাকে। বিজয়পাড়া, পদ্মপাড়া, ভোলাচংসহ বিভিন্ন মহল্লায় জলাবদ্ধতার কারণে মশার উপদ্রব, দুর্গন্ধ ও পানি বাহিত রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বিজয়পাড়ায় হাজারো মানুষ দীর্ঘদিন পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। বাসিন্দারা জানান, একাধিকবার আবেদন ও মানববন্ধন করেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি; জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলে যান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক বছর আগে কিছু এলাকায় রাস্তা পাকাকরণ হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলো তলিয়ে যায়। জমে থাকা পানিতে ভাসছে ময়লা-আবর্জনা, যা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এমনকি যেখানে ড্রেন রয়েছে, সেগুলোও সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া নির্মাণ হওয়ায় পানি নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারছে না।
শুধু ড্রেনেজ নয়, অন্যান্য অবকাঠামোগত সমস্যাও প্রকট। পৌর এলাকায় ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত পানি সরবরাহ প্রকল্প তিন বছরেও চালু হয়নি। তিন বছর আগে পৌরবাসীর কাছ থেকে পানি সংযোগের জন্য আবেদন নেওয়া হলেও এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। একইভাবে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২৩ সালের জুনে স্থাপিত স্ট্রিট লাইটগুলোর বড় অংশ এখন অকেজো। নারায়ণপুর থেকে বাশবাজার পর্যন্ত আলোকায়নের জন্য বসানো লাইটগুলোর অনেকগুলো নিভে থাকায় রাতের বেলায় পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন এবং ছোটখাটো অপরাধের ঝুঁকি বাড়ছে।
পৌরবাসীর ক্ষোভ, কর ও ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করলেও তারা নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না। বিজয়পাড়ার ইদ্রিস আলী বলেন, “চলাচলের রাস্তা প্রায় সারা বছরই পানির নিচে। কতজন দায়িত্বে এলেন-গেলেন, কিন্তু কাজের কিছুই হলো না।” সংবাদকর্মী তানজিনা আক্তার শিলা জানান, “বৃষ্টি হলে কোমরপানি হয়। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না।” ভোলাচংয়ের মাসুদ রানা বলেন, “পঁচা পানির দুর্গন্ধে থাকা যায় না, শিশুরা স্কুলেও যেতে পারে না।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক রাজিব চৌধুরী বলেন, বিজয়পাড়া ও পদ্মপাড়ার ড্রেন নির্মাণের জন্য ৬৫-৭০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। পশ্চিমপাড়ায় ইতিমধ্যে একটি প্রকল্পে কনট্রাক্টরকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে, যা দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মী বাড়ানো ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান।
পৌরবাসীর প্রত্যাশা, বহু বছরের অবহেলা ও অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তাদের নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব করা হবে।