লিয়াকত হোসেন জনী, মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মধুপুরে গভীর রাতে গহীন বনে গোপনে ঘোড়া জবাই করে মাংস প্রক্রিয়াকরণের সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি চক্রের তৎপরতা রুখে দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে জীবিত সাতটি ঘোড়া, জবাই করা চারটি ঘোড়ার মৃতদেহ, জবাইয়ের সরঞ্জাম, বরফ ও লবণসহ প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়। অভিযানে এক ব্যক্তি আটক হয়েছেন, তার নাম আজাদ মিয়া (৫৫)। তিনি জামালপুর সদর উপজেলার তুলসীপুরের দড়িপাড়া গ্রামের মৃত জব্বার আলী ওরফে জবরের ছেলে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর বনাঞ্চলের মোনারবাইদ (শেওড়াতলা) এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র ঘোড়ার মাংস প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মধুপুর থানার অরণখোলা ফাঁড়ির এসআই বিমল চন্দ্র পাইনের নেতৃত্বে রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১১টার দিকে এক অটোরিকশা চালকের মাধ্যমে তারা খবর পান যে দুটি ট্রলিতে ঘোড়া নিয়ে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করছে কয়েকজন ব্যক্তি। প্রথমে রেকি করে সন্দেহ হলে পুলিশকে জানানো হয়। পরে স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় পুলিশ রাত ২টার দিকে অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধীরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে ঘোড়া ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
আটক আজাদ মিয়া দাবি করেন, তিনি ঘোড়ার চামড়া ছাড়ানোর কাজে এক হাজার টাকায় নিয়োজিত ছিলেন এবং মাংসের গন্তব্য সম্পর্কে কিছু জানেন না।
মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ঘোড়ার মাংস গরুর মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা এককভাবে কোথাও সরবরাহের উদ্দেশ্যে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এটি একটি গুরুতর অপরাধ।”
তিনি আরও জানান, বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী ইলিয়াস হোসেন মনি বলেন, "পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১ অনুযায়ী নিষিদ্ধ পশুর মাংস ভোক্তাকে অজান্তে পরিবেশন করলে প্রথমবারে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫-২৫ হাজার টাকা জরিমানা, আর পুনরাবৃত্তিতে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ১০-৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।"
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও একাধিক আলেম ঘোড়ার মাংস ভক্ষণকে ইসলাম অনুযায়ী হারাম বলে মন্তব্য করেছেন।